সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিলসে ঘুরেফিরে আসছে গানগুলো। ইউটিউব শর্টস ভিডিওতে অনেক ভিডিও। ইউটিউবে সার্চ করে ফিরে যাই সত্তরের দশকে। একদল ক্যারিবীয় শিল্পী গাইছেন, ‘ড্যাডি, ড্যাডি কুল’ কিংবা ‘সানি, ওয়ান সো ট্রু, আই লাভ ইউ’। মনে পড়ে আশি কিংবা নব্বইয়ের ঢাকার অলিগলি থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার পার্টি, বিয়েবাড়ি কিংবা অভিজাত ক্লাবের ড্যান্স ফ্লোর—সবখানে তখন অদ্ভুত সুরের সঙ্গে নাচে মাতোয়ারা। সেই সুরের উৎস ‘বনি এম’।
অধুনা রিলস ও শর্টস মনে করিয়ে দেয়, বনি এম হারায়নি, হারায় না। ফিরে আসে বারবার। আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে সেই সুরের জাদুকরেরা পার করে ফেলেছেন অর্ধশতক—৫০ বছরের এক অবিশ্বাস্য ইনিংস। যে দল একদিন বিশ্বকে ডিস্কো-জ্বরে কাঁপিয়েছিল, তারা নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন রূপে ফিরে আসছে।

এক জার্মান রাঁধুনির অদ্ভুত খেয়াল
শুরুটা হয়েছিল জার্মানির এক ছোট্ট শহরে, ফ্র্যাঙ্ক ফারিয়ান নামের এক তরুণের হাত ধরে। ১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ মানুষটি পেশাগত জীবনে ছিলেন রাঁধুনি; কিন্তু তাঁর রক্তে মিশে ছিল সুরের নেশা। ১৯৭৪ সালে নিজের স্টুডিওতে বসে একটি অদ্ভুত গান রেকর্ড করেন, ‘বেবি, ডু ইউ ওয়াননা বাম্প’। গানের বিশেষত্ব ছিল, এতে থাকা গম্ভীর পুরুষকণ্ঠ ও তীক্ষ্ণ নারীকণ্ঠ—দুটিই ছিল ফারিয়ানের নিজের কণ্ঠের খেলা।
গানটি ফারিয়ান নিজের নামে প্রকাশ না করে ‘বনি এম’ ছদ্মনামে প্রকাশ করেন। অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ ‘বনি’র পাশে একটি ‘এম’ জুড়ে তৈরি করলেন নতুন পরিচয়।

অপ্রত্যাশিতভাবে গানটি ইউরোপের ক্লাবগুলোয় তুমুল হিট হয়ে গেল। লাইভ পারফরম্যান্সের চাহিদা বাড়তে লাগল; কিন্তু মঞ্চে ওঠার মতো কোনো শিল্পী তো নেই, সবই তো ফারিয়ানের কারসাজি! তখনই তাঁর মাথায় এল—এই ছদ্মনামের আড়ালে একটি জলজ্যান্ত ব্যান্ড তৈরি করতে হবে।

ক্যারিবীয় চার জাদুকর
যেমন ভাবা তেমন কাজ। একটি ট্যালেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে চারজন ক্যারিবীয় শিল্পীকে খুঁজে বের করলেন ফ্র্যাঙ্ক ফারিয়ান, যাঁরা কেবল গাইবেন বা নাচবেন না; বরং মঞ্চে হয়ে উঠবেন বনি এমের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তাঁদের মধ্যে একজন লিজ মিচেল, জ্যামাইকা থেকে আসা এই তরুণীকে বলা হতো বনি এমের আত্মা। তাঁর শক্তিশালী ও মায়াবী কণ্ঠ ছাড়া ‘রিভারস অব ব্যাবিলন’ বা ‘সানি’র মতো গানগুলো হয়তো এতটা অমরত্ব পেত না। তিনিই ছিলেন ব্যান্ডের অন্যতম কণ্ঠ। মার্সিয়া ব্যারেট জ্যামাইকার আরেক কন্যা, যাঁর কণ্ঠ লিজ মিচেলের সঙ্গে মিলে তৈরি করত এক অপূর্ব হারমোনি। অনেক গানেই তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল। মেইজি উইলিয়ামস মন্টসেরাট দ্বীপ থেকে আসা, পেশায় মডেল। রেকর্ডিংয়ে তাঁর কণ্ঠ খুব একটা ব্যবহার করা না হলেও মঞ্চে তাঁর মোহনীয় উপস্থিতি এবং আকর্ষণীয় নাচ ছিল বনি এমের অন্যতম ট্রেডমার্ক। আরুবা থেকে আসা নৃত্যশিল্পী ববি ফারেল ছিলেন ব্যান্ডের একমাত্র পুরুষ সদস্য এবং মঞ্চের প্রাণকেন্দ্র। তাঁর ঝলমলে পোশাক, অ্যারোবেটিক নাচ এবং বুনো উচ্ছ্বাস সত্তরের দশকের ডিস্কো-সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে ওঠে। মঞ্চজুড়ে ছোটাছুটি, নিজের মতো করে নাচ আর বিচিত্র ভঙ্গি পাগল করে তুলত দর্শক-শ্রোতাদের।

এই চারজনকে নিয়ে ফারিয়ানের সংগীতায়োজনে তৈরি হলো নতুন এক ধারা, যেখানে ডিস্কোর সঙ্গে মিশে গেল পপ, রেগে ও ইউরোপীয় সুরের এক অপূর্ব মিশেল।

‘ড্যাডি কুল’ গানটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ইউরোপের মিউজিক চার্টগুলোয় যেন আগুন লেগে গেল। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ‘সানি’, ‘মা বেকার’, ‘বেলফাস্ট’-এর মতো একের পর এক হিট গান বনি এমকে পৌঁছে দিল খ্যাতির শীর্ষে।

বিশ্বজুড়ে ডিস্কো-জ্বর
১৯৭৬ সালে মুক্তি পেল ‘ড্যাডি কুল’। গানটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ইউরোপের মিউজিক চার্টগুলোয় যেন আগুন লেগে গেল। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ‘সানি’, ‘মা বেকার’, ‘বেলফাস্ট’-এর মতো একের পর এক হিট গান বনি এমকে পৌঁছে দিল খ্যাতির শীর্ষে।
তবে বনি এমের মুকুটে শ্রেষ্ঠ পালকটি যুক্ত হয় ১৯৭৮ সালে, ‘নাইট ফ্লাইট টু ভেনাস’ মুক্তির পর। এই অ্যালবামের ‘রিভারস অব ব্যাবিলন’ কেবল একটি গান ছিল না, হয়ে উঠেছিল এক উন্মাদনা। একই অ্যালবামের ‘ব্রাউন গার্ল ইন দ্য রিং’ শিশু থেকে বৃদ্ধ-সবাইকে নাচের তালে মাতিয়েছিল। আর রাশিয়ার রহস্যময় সাধককে নিয়ে তৈরি ‘রাসপুতিন’ আজও তাদের সবচেয়ে আইকনিক গানগুলোর একটি। বনি এম তখন কেবল একটি ব্যান্ড নয়, বিশ্বজোড়া ডিস্কো-জ্বরের কাঁপন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, গানটি বিভিন্ন দেশে নানাভাবে রিমিক্স হয়েছে বা এর অনুকরণে গান হয়েছে নানা ভাষায়। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘আজকে না হয় ভালোবাসো আর কোনো দিন নয়’সহ বেশ কয়েকটি গানে রয়েছে এর সুরের ছায়া।

যে দল একদিন বিশ্বকে ডিস্কো-জ্বরে কাঁপিয়েছিল, তারা নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন রূপে ফিরে আসছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক শ ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

ডিমে শিশুর অ্যালার্জি কেন হয়, কীভাবে বুঝবেন, সমাধান কী

কেন হয়

শিশুদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা পুরোপুরি গড়ে না ওঠায় অনেক সময় ডিমের প্রোটিনকে শরীর ‘অচেনা’ বা ক্ষতিকর হিসেবে ভুলভাবে শনাক্ত করে। ফলে ঠিক যেভাবে রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধব্যবস্থা কাজ করে, একই ধরনের প্রতিক্রিয়া এখানে সৃষ্টি হয়। এই প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবেও হতে পারে, আবার অনেক ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা পরেও দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ 

ত্বকে লাল লাল চাকা, একজিমা।

পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব বা মুখের চারপাশে চুলকানো।

সর্দি, শ্বাস নেওয়ার সময় শোঁ শোঁ শব্দ, শ্বাসকষ্ট হওয়া।

দ্রুত হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ কমে যাওয়া। 

অ্যানাফাইলেকসিস শক। 

আরও পড়ুনডিম দিনে কয়টি ও কীভাবে খাবেন০৫ জুলাই ২০২৫রোগনির্ণয় 

শিশুকে প্রথম ডিম খাওয়ানোর সময় অ্যালার্জি উপসর্গ বোঝা যায়। 

চিকিৎসক যদি মনে করেন ডিম বা ডিমযুক্ত খাবার খেলে অ্যালার্জি হয়, তবে তা স্কিন টেস্ট করে নিশ্চিত হতে পারেন।

চিকিৎসা

ডিম ও ডিমযুক্ত খাবার না খাওয়া। 

অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দমনে অ্যান্টি হিস্টামিন, মারাত্মক অ্যানাফাইলেকসিসে শক ইনজেকশন এপিনেফ্রিন ব্যবহার।

● ডিমে অ্যালার্জি থাকলে কিছু খাদ্য উপাদান পরিহার করা যেমন—এলবুমিন, গ্লোবুলিন ইত্যাদি।

অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আরও পড়ুনডিমের কমলা, না হলুদ কুসুম—কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ