বাংলাদেশে পুশব্যাক করা ৬ ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ কলকাতা হাহাইকোর্টের
Published: 26th, September 2025 GMT
বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে পুশ ব্যাক করা ছয় ভারতীয় নাগরিককে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার এ নির্দেশ দিয়েছে।
আদালত জানিয়েছে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বীরভূম জেলার দুই পরিবারের মোট ছয় সদস্যকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এদের মধ্যে রয়েছেন সোনালী বিবি নামে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীও।
সোনালি ও তার পরিবার দিল্লির রোহিণীতে প্রায় দুই দশক ধরে কাগজকুড়োনো ও গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। পরিবারের অভিযোগ, জুন মাসে দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশী সন্দেহে তাদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। গত ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সোনালির পুশব্যাক নিয়ে করা হেবিয়াস কর্পাস মামলা শুনবে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মামলাতেই শুক্রবার ছয় ভুক্তভোগীকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশ আপাতত মুলতুবি রাখার আবেদন জানায় কেন্দ্র। ওই আবেদনও নাকচ করে দেয় আদালত। বিজেপি সরকার সোনালী বিবিসহ এই ছ’জনকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এদিন সেই পদক্ষেপের সমালোচনা করে আদালতের স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণিত এবং তাদের দেশে ফেরানোর দায়িত্ব সরকারেরই।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এদিন শুনানি পর্বেই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তীর বক্তব্য, ঘটনা দিল্লিতে ঘটেছে, তাই কলকাতা হাইকোর্টের এখতিয়ার নেই। তিনি অভিযোগ করেন, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রাখা হয়েছে এবং এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয়।
দিল্লি পুলিশের আইনজীবীর দাবি, সোনালির পরিবার এখনো পর্যন্ত হলফনামায় প্রমাণ করেনি যে, তারা বাংলাদেশি নন।
পাল্টা বিচারপতি চক্রবর্তী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন , “আটকের নির্দেশে লেখা আছে তাদের বাঙালি বস্তি থেকে আনা হয়েছে। কেবল তাই বলে কি বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করবেন?”
শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, আইন অনুযায়ী অন্তত ৩০ দিন আটক রেখে তদন্ত করা দরকার। অথচ সোনালি বিবিকে ২৬ জুনই বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। আদালতের প্রশ্ন ছিল, মাত্র দু’দিনে কীভাবে সিদ্ধান্ত হল যে তাঁরা বাংলাদেশি? এত তাড়াহুড়ো কেন করা হল?
বেঞ্চ মামলাকারীর আইনজীবীদেরও প্রশ্ন করে জানায়, দেশ থেকে বহিষ্কারের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। তাই কোন ভিত্তিতে আদালত নির্দেশ দেবে, তা স্পষ্ট করতে হবে।
সুচরিতা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি
ব্যবসায় অংশীদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৭ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ করা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার’ অভিযোগের মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও তার ভাই আলিসান চৌধুরী।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক আফরোজা তানিয়া শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন মেহজাবীন চৌধুরীর আইনজীবী তুহিন হাওলাদার।
আরো পড়ুন:
আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মেহজাবীন চৌধুরী
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে যা বললেন মেহজাবীন
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে মেহজাবীন চৌধুরী তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তাতে এ মামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী।
মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “একজন অজানা ব্যক্তি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে আমার ও আমার ১৯ বছর বয়সি ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত নয় মাসে আমি এই মামলার কোনো তথ্য পাইনি, কারণ অভিযোগকারী পুলিশকে আমার সঠিক ফোন নম্বর, সঠিক ঠিকানা বা কোনো যাচাইকৃত তথ্য দিতে পারেননি। তিনি দাবি করেন যে, ২০১৬ সাল থেকে তিনি আমার সাথে ‘ব্যবসা’ করছিলেন।”
মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি অভিযোগকারী। এ বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তবে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, ‘তিনি ২০১৬ সাল থেকে আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিতেন। কিন্তু তিনি যা দেখাতে পারেননি।’ একটি মেসেজ যেটা তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন মেসেজের, হোয়াটসঅ্যাপ বা আমার নম্বরে, কিংবা আমার পক্ষ থেকে একটি উত্তর, এমনকি একটি স্ক্রিনশটও না।”
অভিযোগকারীর পরিচয় অসম্পূর্ণ। এ তথ্য উল্লেখ করে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তার পরিচয় অসম্পূর্ণ। তার সম্পূর্ণ পরিচয়পত্র এখনো জমা দেয়া হয়নি। তার এনআইডি পর্যন্ত অনুপস্থিত। অভিযোগকারী ও তার আইনজীবী ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। গতকাল খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযোগকারী তার ফোন বন্ধ করে রেখেছেন, এমনকি তার আইনজীবীর নম্বরও বন্ধ।”
আর্থিক লেনদেনের কোনো নেই। মেহাজাবীনের ভাষায়, “আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি দাবি করেন যে, তিনি আমাকে ২৭ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি দেখাতে পারেননি—কোনো ব্যাংক লেনদেন, কোনো চেক, বিকাশ লেনদেন, কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রশিদ, কোনো সাক্ষী, কিছুই না। একটি কাগজপত্রও নেই।”
অপহরণের অভিযোগের বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “১১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাটি সম্পূর্ণ প্রমাণহীন। তিনি দাবি করেন ১১ ফেব্রুয়ারি আমি তাকে চোখ বেঁধে হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলাম, আমার ছোট ভাইসহ আরো ৪–৫ জনকে নিয়ে। গত নয় মাসে তিনি দেখাতে পারেননি রেস্টুরেন্ট বা আশেপাশের রাস্তার এক সেকেন্ডেরও সিসিটিভি ফুটেজ, কোনো সাক্ষী, কোনো প্রমাণ, কিছুই না। হাতিরঝিল ঢাকার সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি-নিয়ন্ত্রিত এলাকা, তবু তিনি একটি ছবি বা ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেননি।”
মামলা হওয়ার পর ৯ মাস কেটে গেলেও কোনো নোটিশ পাননি মেহজাবীন চৌধুরী। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গত নয় মাসে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। এই নয় মাসে আমি কোনো পুলিশ স্টেশনের ফোন কল, কোনো কোর্টের নোটিশ বা ডকুমেন্ট। একটি নোটিশ পেলেও আমি অনেক আগে থেকেই আইনি ব্যবস্থা নিতাম।”
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন মেহজাবীন। তার ভাষায়, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই মামলার কোনো ভিত্তি না থাকলেও, যখন জানতে পারলাম যে একটি অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, তখন আমি আইনি প্রক্রিয়া মেনে জামিন নিয়েছি। কারণ আমি আমাদের আইন ও নিয়ম মানি। প্রমাণ ছাড়া দায়ের করা মামলা কখনো সত্য হয়ে যায় না। সত্য খুব দ্রুতই আদালতে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখনকার দিনে কাউকে অপমান করা, মানহানি করা বা ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এই ব্যক্তির যে উদ্দেশ্যই থাকুক, আমার বা আমার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে, সে যা-ই করতে চায়—আমি বিশ্বাস করি সবকিছু খুব দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
অনুরোধ জানিয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “এর আগ পর্যন্ত আমি সবাইকে অনুরোধ করব—দয়া করে সহানুভূতিশীল হোন, দয়া করে মানবিক হোন এবং কাউকে না জেনে কোনো মিডিয়া ট্রায়াল শুরু করবেন না। গত ১৫ বছর ধরে আমি আমার কাজ, আমার পেশা এবং আমার দর্শকদের জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে এসেছি, সেই পরিশ্রমের পরেও আজ আমাকে এসব ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে—এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।”
ঢাকা/শান্ত