বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে পুশ ব্যাক করা ছয় ভারতীয় নাগরিককে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার এ নির্দেশ দিয়েছে।

আদালত জানিয়েছে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বীরভূম জেলার দুই পরিবারের মোট ছয় সদস্যকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এদের মধ্যে রয়েছেন সোনালী বিবি নামে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীও। 

সোনালি ও তার পরিবার দিল্লির রোহিণীতে প্রায় দুই দশক ধরে কাগজকুড়োনো ও গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। পরিবারের অভিযোগ, জুন মাসে দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশী সন্দেহে তাদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। গত ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সোনালির পুশব্যাক নিয়ে করা হেবিয়াস কর্পাস মামলা শুনবে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মামলাতেই শুক্রবার ছয় ভুক্তভোগীকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।

শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশ আপাতত মুলতুবি রাখার আবেদন জানায় কেন্দ্র। ওই আবেদনও নাকচ করে দেয় আদালত। বিজেপি সরকার সোনালী বিবিসহ এই ছ’জনকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এদিন সেই পদক্ষেপের সমালোচনা করে আদালতের স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণিত এবং তাদের দেশে ফেরানোর দায়িত্ব সরকারেরই।

কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এদিন শুনানি পর্বেই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তীর বক্তব্য, ঘটনা দিল্লিতে ঘটেছে, তাই কলকাতা হাইকোর্টের এখতিয়ার নেই। তিনি অভিযোগ করেন, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রাখা হয়েছে এবং এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয়। 

দিল্লি পুলিশের আইনজীবীর দাবি, সোনালির পরিবার এখনো পর্যন্ত হলফনামায় প্রমাণ করেনি যে, তারা বাংলাদেশি নন।

পাল্টা বিচারপতি চক্রবর্তী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন , “আটকের নির্দেশে লেখা আছে তাদের বাঙালি বস্তি থেকে আনা হয়েছে। কেবল তাই বলে কি বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করবেন?”

শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, আইন অনুযায়ী অন্তত ৩০ দিন আটক রেখে তদন্ত করা দরকার। অথচ সোনালি বিবিকে ২৬ জুনই বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। আদালতের প্রশ্ন ছিল, মাত্র দু’দিনে কীভাবে সিদ্ধান্ত হল যে তাঁরা বাংলাদেশি? এত তাড়াহুড়ো কেন করা হল?

বেঞ্চ মামলাকারীর আইনজীবীদেরও  প্রশ্ন করে জানায়, দেশ থেকে বহিষ্কারের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। তাই কোন ভিত্তিতে আদালত নির্দেশ দেবে, তা স্পষ্ট করতে হবে।
 

সুচরিতা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

১২ দিনের নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত

জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে ১ থেকে ১২ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে একই দাবিতে সেপ্টেম্বর মাসে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল দলটি।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

আরো পড়ুন:

কক্সবাজারে ছাত্রলীগ কর্মীর ছুরিকাঘাতে জামায়াতের যুব বিভাগের নেতা নিহত

ক্ষমতায় গেলে কাউকে দাবি নি‌য়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না: জামায়াতের আমির

পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

জামায়াত ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো-
৫ দফা দাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে গণসংযোগ। এ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা। গোলটেবিল বৈঠক। সেমিনার ইত্যাদি।

এছাড়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০ অক্টোবর রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কাছে  স্মারকলিপি পেশ।

যে পাঁচ দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো হলো-জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা। ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

এতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরাল ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি' হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াত ইতোমধ্যে সরকারের কাছে দুটি প্রস্তাব করেছে।

প্রথমত, জুলাই জাতীয় সনদের জন্য ‘সংবিধান আদেশ' জারি করা। দ্বিতীয়ত, এই সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে গণভোট করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, সেটা না হলে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ছাড়া ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।

জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করতে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে জানিয়েছে জামায়াত।

জামায়াতের এর আগে ঘোষণা করা পাঁচ দফা জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। তাই জনগণের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান, মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঋণ আদায়ে লাগবে ৩৩৩ বছর
  • ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ
  • ১২ দিনের নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত
  • ১ থেকে ১২ অক্টোবর নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত