ফিলিস্তিনে চলমান আগ্রাসনের জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সময় অনেক দেশের প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানিয়ে অধিবেশন কক্ষ বর্জন করেন। ভাষণ ঘিরে বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেও।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের চতুর্থ দিন ছিল আজ শুক্রবার। এদিন নেতানিয়াহুর ভাষণ শুরু হতে না হতেই প্রতিবাদ জানাতে থাকেন অনেক দেশের প্রতিনিধিরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রায় সব আরব ও মুসলিম দেশ, আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি। একপর্যায়ে তাঁরা অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন (ওয়াকআউট)। এ সময় অধিবেশন কক্ষে নেতানিয়াহু সামনে আসনগুলো ফাঁকা দেখা যায়।

বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অধিবেশন কক্ষ ত্যাগের সময় সেখানে থাকা অনেকে হাততালি দেন। পরিষদের সভাপতি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বললেও, তাতে কাজ দেয়নি।

জাতিসংঘের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্য, গাজা সংঘাত, ইরানসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ঠিক এই সময়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাইরে গাজায় সংঘাত বন্ধ এবং হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে চলছিল বিক্ষোভ। এর আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইসরায়েলি ও ইহুদিরা। এদিন ফিলিস্তিনের পক্ষেও নিউইয়র্কে বিক্ষোভ হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছান নেতানিয়াহু। সেখানে ম্যানহাটান এলাকায় যে হোটেলে তিনি অবস্থান করছেন, তার বাইরেও বিক্ষোভ করেছেন ইসরায়েলি প্রবাসীরা। এ সময় তাঁদের ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন’, ‘তাঁদের (জিম্মি) সবাইকে মুক্ত করুন’ স্লোগান দিতে শোনা যায়। ড্রামের শব্দের তালে তালে অনেকেই বলছিলেন, ‘সামরিকভাবে এর (সংঘাত) সমাধান হবে না।’

এবারের জাতিসংঘের অধিবেশনে গাজা সংকট বড় গুরুত্ব পেয়েছে। মঙ্গলবার অধিবেশন শুরুর আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য–ফ্রান্সসহ পশ্চিমা ১০ দেশ। অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের নেতা। যেমন জাতিগত নিধনের অভিযোগে নেতানিয়াহুকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) তোলার দাবি করেছেন চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক।

ইতিমধ্যে আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযোগে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আইসিসি। সে কারণে নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে ফ্রান্সের আকাশসীমা এড়িয়ে গিয়েছিল তাঁর উড়োজাহাজ। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ইসরালের সবচেয়ে বড় মিত্র আর আইসিসির সদস্য নয়, তাই সেখানে তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কা নেই।

নেতানিয়াহুর সাফাই

সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নেতানিয়াহুর ভাষণের বড় অংশ ছিল গাজায় চলমান সংঘাত নিয়ে। দুই বছর ধরে গাজায় চলমান ইসরায়েলি নৃশংসতার পক্ষে সাফাই তুলে ধরেন তিনি। এই সময়ে উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি বাহিনী সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলেও, নেতানিয়াহু দাবি করেন, জাতিগত নিধনের সঙ্গে জড়িত নয় তাঁর দেশ।

গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধনের বিষয়টি উঠে এসেছে জাতিসংঘের গঠন করা একটি স্বাধীন কমিশনের তদন্তে। একে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘে নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসই উল্টো বেসামরিক মানুষজনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যুক্তি দেখিয়ে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ন্যায্যতা পেতে পারে না।

ভাষণে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন নেতানিয়াহু। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার তুলনা করেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ‘৭ অক্টোবরের পর জেরুজালেমের এক মাইল দূরে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রাষ্ট্র দেওয়া ১১ সেপ্টেম্বরের পর নিউইয়র্কের এক মাইল দূরে আল–কায়েদাকে একটি রাষ্ট্র দেওয়ার মতো।’

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণের পর বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনপন্থীরা। ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরের কাছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র ন উইয়র ক

এছাড়াও পড়ুন:

এপস্টেইন–কাণ্ডে নিজেকে বাঁচাতেই কি বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করলেন ট্রাম্প

যৌন নিপীড়নকারী কুখ্যাত মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কী সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আহ্বানের পর মার্কিন বিচার বিভাগ ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

প্রয়াত এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতেই গতকাল শুক্রবার তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের প্রতি এ আহ্বান জানান বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান জে পি মরগান চেজ এবং হার্ভার্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামারসের বিরুদ্ধেও বিচার বিভাগ ও এফবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। ল্যারি সামারস ক্লিনটনের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।

সম্প্রতি যৌন নিপীড়ন ও নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত এপস্টেইনের নতুন একগুচ্ছ ই-মেইল প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম এসেছে। এতে ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে।

এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন। ই-মেইলে দেখা গেছে, ট্রাম্প ওই মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একজন কিশোরীর সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন প্রকাশিত ই-মেইলগুলো এপস্টেইন পাঠিয়েছিলেন তাঁর সহযোগী ও সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল এবং ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ লেখক মাইকেল ওলফকে। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি ওইসব ই–মেইল লিখেছিলেন।

এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও জোরপূর্বক যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন। ই–মেইলে দেখা গেছে, ট্রাম্প ওই মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একজন কিশোরীর সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।

শিশুদের যৌন নিপীড়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ও নারী পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার এপস্টেইন ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে কারাবন্দী অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। তাঁর প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েলের ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।

এপস্টেইন–কেলেঙ্কারিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অনেক ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম এসেছে।

৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্পের অভিযোগ, ডেমোক্র্যাটরা এপস্টেইন–কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়ানোর ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।

শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে ছুটি কাটাতে ফ্লোরিডা যাওয়ার সময় ট্রাম্প উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তাদের এটা অনেক আগেই ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল। বহু বছর ধরে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে আমার খুবই খারাপ সম্পর্ক ছিল।’

নথিতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যক্তিরা এবং আরও অনেকে তাঁদের জীবনের একটি বড় অংশ এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর দ্বীপে কাটিয়েছেন।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

এ বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্পকে বারবার এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।

২০১৯ সালে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌনকর্মে নারী পাচারের অভিযোগে হওয়া মামলার বিচার প্রস্তুতি চলছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে রাখা হয়েছিল। কারাগারে নিজের কক্ষ থেকে পরে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এমন একটি যৌন চক্র চালাতেন, যেখানে কিশোরী মেয়েদের যৌনকর্মের জন্য সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হতো।

আরও পড়ুনজেফরি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত ইমেইলে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম১২ নভেম্বর ২০২৫

ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ও এফবিআইকে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে বিল ক্লিনটন, ল্যারি সামারস, রেইড হফম্যান, জে পি মরগ্যান চেজ এবং আরও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ও জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করবেন।

ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘নথিতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যক্তিরা এবং আরও অনেকে তাঁদের জীবনের একটি বড় অংশ এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর দ্বীপে কাটিয়েছেন।’

আরও পড়ুনএকই নারীর সঙ্গে ট্রাম্প ও যৌন নিপীড়ক এপস্টেইনের সম্পর্ক ছিল১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এপস্টেইন–কাণ্ডে নিজেকে বাঁচাতেই কি বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করলেন ট্রাম্প
  • মামদানির প্রশাসনে কাজ করতে ৫০ হাজার আবেদন 
  • বিয়ে করছেন অমিতাভ রেজা, পাত্রী কে