জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় চলছিল ভেতরে-বাইরে প্রতিবাদ
Published: 26th, September 2025 GMT
ফিলিস্তিনে চলমান আগ্রাসনের জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সময় অনেক দেশের প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানিয়ে অধিবেশন কক্ষ বর্জন করেন। ভাষণ ঘিরে বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেও।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের চতুর্থ দিন ছিল আজ শুক্রবার। এদিন নেতানিয়াহুর ভাষণ শুরু হতে না হতেই প্রতিবাদ জানাতে থাকেন অনেক দেশের প্রতিনিধিরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রায় সব আরব ও মুসলিম দেশ, আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি। একপর্যায়ে তাঁরা অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন (ওয়াকআউট)। এ সময় অধিবেশন কক্ষে নেতানিয়াহু সামনে আসনগুলো ফাঁকা দেখা যায়।
বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অধিবেশন কক্ষ ত্যাগের সময় সেখানে থাকা অনেকে হাততালি দেন। পরিষদের সভাপতি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বললেও, তাতে কাজ দেয়নি।
জাতিসংঘের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্য, গাজা সংঘাত, ইরানসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ঠিক এই সময়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাইরে গাজায় সংঘাত বন্ধ এবং হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে চলছিল বিক্ষোভ। এর আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইসরায়েলি ও ইহুদিরা। এদিন ফিলিস্তিনের পক্ষেও নিউইয়র্কে বিক্ষোভ হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছান নেতানিয়াহু। সেখানে ম্যানহাটান এলাকায় যে হোটেলে তিনি অবস্থান করছেন, তার বাইরেও বিক্ষোভ করেছেন ইসরায়েলি প্রবাসীরা। এ সময় তাঁদের ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন’, ‘তাঁদের (জিম্মি) সবাইকে মুক্ত করুন’ স্লোগান দিতে শোনা যায়। ড্রামের শব্দের তালে তালে অনেকেই বলছিলেন, ‘সামরিকভাবে এর (সংঘাত) সমাধান হবে না।’
এবারের জাতিসংঘের অধিবেশনে গাজা সংকট বড় গুরুত্ব পেয়েছে। মঙ্গলবার অধিবেশন শুরুর আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য–ফ্রান্সসহ পশ্চিমা ১০ দেশ। অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের নেতা। যেমন জাতিগত নিধনের অভিযোগে নেতানিয়াহুকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) তোলার দাবি করেছেন চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক।
ইতিমধ্যে আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযোগে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আইসিসি। সে কারণে নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে ফ্রান্সের আকাশসীমা এড়িয়ে গিয়েছিল তাঁর উড়োজাহাজ। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ইসরালের সবচেয়ে বড় মিত্র আর আইসিসির সদস্য নয়, তাই সেখানে তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কা নেই।
নেতানিয়াহুর সাফাই
সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নেতানিয়াহুর ভাষণের বড় অংশ ছিল গাজায় চলমান সংঘাত নিয়ে। দুই বছর ধরে গাজায় চলমান ইসরায়েলি নৃশংসতার পক্ষে সাফাই তুলে ধরেন তিনি। এই সময়ে উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি বাহিনী সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলেও, নেতানিয়াহু দাবি করেন, জাতিগত নিধনের সঙ্গে জড়িত নয় তাঁর দেশ।
গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধনের বিষয়টি উঠে এসেছে জাতিসংঘের গঠন করা একটি স্বাধীন কমিশনের তদন্তে। একে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘে নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসই উল্টো বেসামরিক মানুষজনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যুক্তি দেখিয়ে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ন্যায্যতা পেতে পারে না।
ভাষণে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন নেতানিয়াহু। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার তুলনা করেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ‘৭ অক্টোবরের পর জেরুজালেমের এক মাইল দূরে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রাষ্ট্র দেওয়া ১১ সেপ্টেম্বরের পর নিউইয়র্কের এক মাইল দূরে আল–কায়েদাকে একটি রাষ্ট্র দেওয়ার মতো।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণের পর বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনপন্থীরা। ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরের কাছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র ন উইয়র ক
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে নিউইয়র্ক থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরেছেন।
নয় দিনের নিউইয়র্ক সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেন। এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে আজ সকাল ৯টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এই তথ্য জানান।
এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক এমদাদ আরিফুল ইসলাম বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে বিদায় জানান।
সফরকালে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুর পরিস্থিতিবিষয়ক’ উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
২৯ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর অবস্থান করা হোটেলে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি। একই দিন জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ এবং ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রপুঞ্জবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
নিউইয়র্ক সফরে মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন। তিনি ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এ ছাড়া মুহাম্মদ ইউনূস নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ভুটান, কসোভোসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র-সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টা গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন।