রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি: ফিলিস্তিনিদের দেওয়া এক ফাঁপা উপহার
Published: 27th, September 2025 GMT
যেদিন বিশ্ব ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল, সেদিন আমি ও আলোকচিত্রী অ্যালেক্স লেভ্যাক গিয়েছিলাম পশ্চিম তীরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি ফিলিস্তিনি গ্রামে। তার আগের দিনই কাছেই অবৈধভাবে গড়ে তোলা (ইহুদি) বসতি থেকে কয়েকজন গিয়ে গ্রামটিতে হানা দেয় ও অস্ত্রের জোরে রীতিমতো ডাকাতি করে ডজনখানেক মেষ নিয়ে আসে।
যেদিন জাতিসংঘে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং যেদিন ১০টি পশ্চিমা দেশ, ইতিমধ্যে যারা এই ‘কল্পিত’ রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাদের কাতারে যোগ দেয়, সেদিন পশ্চিম তীরের অ্যালন রোডে প্রায় কোনো ফিলিস্তিনি যানবাহন দেখা যায় না। কারণ, পশ্চিম তীরের প্রায় সব রাস্তাই এখন লৌহকপাট দিয়ে আটকানো। ইসরায়েলি সামরিক কমান্ডারদের খেয়ালখুশিমতো সেগুলো খোলা ও বন্ধ করা হয়।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে কি প্রায়শ্চিত্ত করতে চায় ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য০৫ আগস্ট ২০২৫যেদিন ১৫৯তম দেশটি স্বপ্নের সেই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিল, সেদিন ৮১ বছরের বৃদ্ধ মেষপালক সাদেক ফারহান নিজ ঘরে শুয়ে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। আগের দিনই একদল বসতি স্থাপনকারী তাঁকে লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে প্রহার করে, তাঁর বয়সের দিকে না তাকিয়ে। এতে তাঁর দুই বাহু ভেঙে যায়। পাশে বসা তাঁর নাতির মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা দেখতে পাই আমরা। বসতকারীদের ডাকাতিতে সে–ও আক্রান্ত হয়েছে।
ইসরায়েলি পুলিশ ত্বরিতগতিতে ফিলিস্তিনি মেষপালকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে। কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই বলে বসে যে তারাই বসতকারীদের বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়েছিল। হায়! নতুন স্বীকৃত রাষ্ট্রটির কোনো পুলিশ বাহিনী নেই নিজ অধিবাসীদের রক্ষা করার জন্য।
যেদিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট তাঁর একটি কূটনীতিক বিজয় উদ্যাপন করলেন (ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে), ফিলিস্তিনিদের নিজ রাষ্ট্র পাওয়া যেন আগের চেয়ে আরও দূরে সরে গেল। আর কোনো সময়েই একটি (স্বাধীন ফিলিস্তিন) রাষ্ট্রের স্বপ্ন মাঠের বাস্তবতা থেকে এত বিচ্ছিন্ন প্রতীয়মান হয়নি। এই রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি তাঁরই দেশ নিয়ে জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দিতে, যা স্পষ্টতই জাতিসংঘের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির নির্লজ্জ এক লঙ্ঘন।
আবার ঠিক একই সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মোস্ট ওয়ান্টেড হওয়া ব্যক্তিটি মানে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্ক–যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। যে রাষ্ট্রকে এখন প্রায় গোটা বিশ্ব ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছে, সে রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিচ্ছেন ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে, আর আইসিসির মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিটি সশরীর উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিচ্ছেন।
যেদিন বিশ্ব একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিল, সেদিন গাজায় ৬১ জন মানুষ নিহত হলো। তার আগে ও পরে, বলতে গেলে প্রতিদিনই সমসংখ্যক মানুষ গাজায় নিহত হয়েছে, হচ্ছে। এই স্বীকৃতি তো গাজার অন্তত একটি শিশুকেও (ইসরায়েলি) বোমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। গাজা এখন মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে আর পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের অবস্থাও সেদিকে অগ্রসর হচ্ছে।
আমার মতো যাঁরা মরিয়া হয়ে আশা করছিলেন যে অন্য কিছু ঘটার আগে সারা বিশ্ব জরুরি ভিত্তিতে এক নাটকীয় পদক্ষেপ নেবে গাজার পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে, তাহলে তাঁরা হতাশ হয়েছেন। কেননা এর বদলে এমন কিছু ঘটল, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে।যে বৃদ্ধ মানুষটা মার খেয়ে ঘরে পড়ে কাতরাচ্ছেন, তিনি এই স্বীকৃতির কথা কখনো শুনেছেন কি না, সন্দেহ আছে। ব্রিটিশ ও ফরাসিদের ঘোষণা তাঁর জীবনে কোনো পরিবর্তন আনবে না। এমনকি যদি অ্যান্ডোরা ও মনাকো এ ঘোষণায় যোগ দেয়, তাতেও তাঁর ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। তাঁর কাছ থেকে যে মেষ চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা তিনি কখনোই ফিরে পাবেন না, এমনকি যদি লুক্সেমবার্গও স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে আসে।
গোটা বিশ্ব, বিশেষত নিজেদের ন্যায়বান দাবি করা ইউরোপ, সপ্তাহজুড়ে গাজা ও পশ্চিম তীরের ভুক্তভোগীদের শুধু মুখে মুখেই বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যখন গাজায় জেনোসাইড অব্যাহত আছে, যখন পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে ভয়াবহ সহিংসতা চালাচ্ছে, তখন সারা দুনিয়া তার ন্যূনতম অবশ্যকর্তব্য পালন করছে এমন একটি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে, যা কখনোই বাস্তবায়িত হবে বলে মনে হয় না।
আহা, একটা রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া কত–না সহজ, আর একটা গণহত্যা তথা জেনোসাইড বন্ধ করা কত–না কঠিন! ইসরায়েল তো (ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে) যথারীতি ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ বলে চিৎকার করে নিন্দা জানাচ্ছে। ইসরায়েলের সব ইহুদি রাজনৈতিক বিরোধী দল সরকারের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এই নিন্দাবাদে।
আরও পড়ুনগাজা দখল করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়তে চান নেতানিয়াহু১২ আগস্ট ২০২৫আমার মতো যাঁরা মরিয়া হয়ে আশা করছিলেন যে অন্য কিছু ঘটার আগে সারা বিশ্ব জরুরি ভিত্তিতে এক নাটকীয় পদক্ষেপ নেবে গাজার পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে, তাহলে তাঁরা হতাশ হয়েছেন। কেননা এর বদলে এমন কিছু ঘটল, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা এখন নিজেদের ও সেখানকার বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের বুঝ দিতে পারবেন এই বলে: আমরা তো অপরাধীকে শাস্তি দিয়েছি আর ভুক্তভোগীকে পুরস্কৃত করেছি। কাজেই এখন আর গাজা নিয়ে কিছু ভাবার দরকার নেই। আমরা আমাদের করণীয় করেছি।
এটা বড্ড বেদনাদায়ক যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে এখন স্বীকৃতি দেওয়া আসলে এক ভ্রান্তি, প্রায় পাগলামি। দুই রাষ্ট্র সমাধানের কোনো অংশীদার নেই; না ইসরায়েলে, না ফিলিস্তিনে। গাজা তো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে, পশ্চিম তীর রূপ নিয়েছে একগুচ্ছ বানতুস্তানে, যেখানে কোনো রাষ্ট্র গঠনের উপায় নেই। আপনি কি গাজার টিকে থাকা নগণ্য অংশকে রক্ষা করতে চান? তাহলে এক্ষুনি ইসরায়েলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। আপনি কি দীর্ঘমেয়াদি কিছু করতে চান? তাহলে জর্ডান নদী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত সব মানুষের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
গিডিয়ন লেভি ইসরায়েলি সাংবাদিক ও লেখক। হারেৎজে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন আসজাদুল কিবরিয়া
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা
কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’
সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।
সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে