তিন স্কুল ভবন পরিত্যক্ত, পাঠ চলে অস্থায়ী ঘর ও অন্যের বারান্দায়
Published: 27th, September 2025 GMT
ভরদুপুরে মাত্র তিন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছিলেন এক শিক্ষক আবিদা সুলতানা। তবে সেটা কোনো শ্রেণিকক্ষে নয়, একটি বাড়ির বারান্দায়। দৃশ্যটি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ভাতুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। একসময় কোলাহলমুখর ছিল যে বিদ্যালয়, আজ পরিত্যক্ত ভবনের কারণে আশ্রয় নিয়েছে পাশের বাড়ির বারান্দা আর একটি ছোট কক্ষে।
শুধু ভাতুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়; একই উপজেলার জন্মেজয় ফজলুর রহমান সুলতান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর হারিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই চিত্র। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, টিনশেডের অস্থায়ী ঘর, অন্যের বারান্দায় চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। কমছে উপস্থিতি, ভয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না অভিভাবকেরা।
বারান্দাই শ্রেণিকক্ষ
উপজেলার শিলা নদীর পাড়ে ভাতুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। দুই বছর পর, ১৯৯৪ সালে নির্মিত হয় বিদ্যালয়টির ভবন। সেখানে নিয়মিত পাঠ চললেও ২০১৯ সালে ভবনের ছাদের বিম ফেটে যায়। এ বছরের ২০ আগস্ট সেটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে প্রশাসন।
আরও পড়ুনকিশোরগঞ্জে তিনটি স্কুলভবন পরিত্যক্ত২৬ মে ২০১৩এরপর মাঠে টেবিল পেতে ক্লাস নিতে হতো। পরে শিক্ষা বিভাগের অনুরোধে বিদ্যালয়ের জমিদাতা পরিবারের সদস্য আলী আনোয়ার তালুকদার নিজের বাড়ির একটি কক্ষ ও বারান্দা ব্যবহার করতে দেন। বর্তমানে সেখানেই চলছে পাঠদান।
২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে দেখা যায়, মাত্র তিন শিক্ষার্থী নিয়ে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক আবিদা সুলতানা। হতাশ হয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে চাকরিতে যোগ দিলেও অবস্থা খুব খারাপ। ভবনের সমস্যা, রাস্তাঘাটের দুরবস্থা আর অভিভাবকদের অনাগ্রহে শিক্ষার্থীও কম। নতুন ভবন হলে হয়তো মানুষ সন্তানকে পাঠাতে আগ্রহী হতেন।’
গফরগাঁওয়ের ভাতুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ছবিটি ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হবে না মনার, স্নাতকে ভর্তি নিয়েও দুশ্চিন্তা কেটেছে
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কলেজছাত্রী মনা বেগমকে (১৮) আর হামাগুড়ি দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হবে না। প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর রাজধানীর দুজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সহযোগিতায় তাঁকে একটি তিন চাকার বৈদ্যুতিক সাইকেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি ও শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে তাঁকে আর্থিকভাবে সহায়তাও করা হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেলে শাহ নিমাত্রা সাগরনাল-ফুলতলা কলেজের অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন ও কয়েকজন শিক্ষক এলাপুর ফাঁড়ি চা-বাগানে মনার বাড়িতে গিয়ে বিশেষ যানটি তুলে দিয়েছেন।
মনাকে সহায়তাকারী দুই শিক্ষক হলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এস এস এম সাদরুল হুদা ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আফসানা আক্তার।
আরও পড়ুনহামাগুড়ি দিয়ে কলেজে যেতেন মনা, এখন অর্থাভাবে স্নাতকে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা২৮ অক্টোবর ২০২৫জহির উদ্দিন বলেন, কীভাবে সাইকেলটি চালাতে হবে, চার্জ দিতে হবে—এসব মনাকে শিখিয়েছেন মিস্ত্রি। কিছুদিন বাড়িতে চেষ্টা করতে হবে। প্রতিবন্ধিতাকে হার মানিয়ে এত দূর আসতে পেরেছে ওই ছাত্রী। সাইকেল চালানোও তাঁর পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়।
জহির উদ্দিন আরও বলেন, প্রথম আলোয় সংবাদ পড়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মনার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর (মন) স্নাতকে ভর্তিসহ লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহনের কথা জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া সম্প্রতি ঢাকার এক ব্যবসায়ীও মনার পাশে দাঁড়াতে তাঁকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। এসব সহায়তা পেয়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার পাশে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন সবাইকে কৃতজ্ঞতা। আমি স্নাতকে ভর্তি হব, লেখাপড়া বন্ধ করব না।’
মনা এলাপুর বাগানের বাসিন্দা দিন মজুর হারিছ মিয়া ও আমিনা বেগম দম্পতির মেয়ে। মনা এবার স্থানীয় শাহ নিমাত্রা সাগরনাল-ফুলতলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–২ দশমিক ৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। জন্মের পর থেকে বাঁ হাত, বাঁ পা, কোমরে জোর না পাওয়ায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন মনা বেগম। ডান হাত আর ডান পায়ের শক্তিতে হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সময় হামাগুড়ি দিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা অতিক্রম করে বাসে উঠতেন। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি এবার শাহ নিমাত্রা সাগরনাল-ফুলতলা কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে মনা।