লা লিগায় মৌসুমের প্রথম রোমাঞ্চকর ম্যাচের জন্য প্রস্তুত এস্তাদিও মেত্রোপলিতানো। আজ রাতে এই মাঠে মৌসুমের প্রথম ডার্বিতে মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ ও আতলেতিকো মাদ্রিদ। স্পেনের শীর্ষ লিগে যে লড়াইগুলো শিরোপা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এই ম্যাচ তার মধ্যে অন্যতম।

লিগে এবার দারুণ শুরু করেছে রিয়াল। আগের ৬ ম্যাচের প্রতিটিতে জিতেছে। আতলেতিকোর শুরুটা অবশ্য খুব একটা ভালো হয়নি। ৬ ম্যাচে ২ জয়, ৩ ড্র ও ১ হারে ৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তালিকার ৯ নম্বরে।

ডার্বির আগে অবশ্য এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স দিয়ে আতলেতিকোকে বিচার করার সুযোগ নেই। ‘মাদ্রিদ ডার্বি’র মতো ম্যাচে আলাদাভাবেই উজ্জীবিত থাকে দলটি। পাশাপাশি আজ নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালকে থামিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে দলটি। তবে রিয়ালকে হারাতে হলে নিজেদের সামর্থ্যের সেরাটুকুই দিতে হবে আতলেতিকোকে।

আরও পড়ুনদূরন্ত এমবাপ্পের ডানায় চড়ে উড়ছে রিয়াল২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রিয়াল–আতলেতিকোর এই ম্যাচকে অনেকে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও হুলিয়ান আলভারেজের লড়াই হিসেবেও দেখছেন। চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে আছেন এমবাপ্পে। লা লিগায় এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৭ গোল করেছেন ফরাসি তারকা। শুধু গোল করাতেই নয়, ম্যাচে দারুণভাবে প্রভাবও বিস্তার করছেন এই ফরোয়ার্ড। আজকের ম্যাচেও রিয়ালের তুরুপের তাস হিসেবে মাঠে নামবেন এমবাপ্পে।

তবে এমবাপ্পের জবাব হিসেবে প্রস্তুত আছেন আলভারেজও। আতলেতিকোর আগের ম্যাচে রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টাইন। আজ রাতেও তাঁর কাছ থেকে এমন পারফরম্যান্স দেখতে চাইবেন কোচ দিয়েগো সিমিওনে।

ভায়েকানো ম্যাচের পর আলভারেজ নিজেই বলেছিলেন, ‘আমরা রিয়ালের কাছ থেকে ৩ পয়েন্ট নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’ তবে এমবাপ্পেও নিশ্চয় নিজের ছন্দ ধরে রেখে দলকে জয় এনে দিতে চাইবেন। আর এই হার না মানা মানসিকতাই লড়াইটাকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলতে পারে।

আরও পড়ুন আলভারেজ–ছোঁয়ায় কি এবার আতলেতিকোর গল্প বদলে যাবে০৪ মার্চ ২০২৫

শুধু এমবাপ্পে–আলভারেজই নন, এই ম্যাচে চোখ থাকবে দুই কোচ রিয়ালের জাবি আলোনসো ও আতলেতিকোর সিমিওনের কৌশলের দিকেও। ম্যাচের আগে আলোনসো অবশ্য সিমিওনের বেশ প্রশংসাই করেছেন, ‘সিমিওনে এই ১৪ বছরে যা অর্জন করেছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আতলেতিকো উন্নতি করেছে, সঠিক খেলোয়াড় নিয়েছে, এবং দলে বেশ উচ্চমানের খেলোয়াড় আছে। মৌসুম মাত্র শুরু হয়েছে, আমি নিশ্চিত তারা এই মৌসুমে সবকিছুর জন্য লড়াই করবে। আগামীকাল মানসিক, কৌশলগত এবং শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হবে; কারণ, এটি এমন একটি দল যা আপনাকে খুব উচ্চ গতিতে খেলতে বাধ্য করে।’

আলোনসোর কৌশলের প্রশংসা করেছেন সিমিওনেও, ‘রিয়াল মাদ্রিদ তাদের দলীয় খেলায় উন্নতি করেছে। তাদের কোচও ওপরে উঠে প্রেস করার কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন। এ কারণেই তারা সব ম্যাচ জিতেছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আতল ত ক র এমব প প আলভ র জ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে 

পিঠে থুরুং (ঝুড়ি) বাঁধা এক জুমিয়া নারী। মাথায় পাগড়ির বা শিরস্ত্রাণের মতো একটা ট্যাংক। ছবির পরিসরজুড়ে বিশালাকৃতির সেই নারীর চারপাশে বন্দুকধারী অসংখ্য ছায়ামূর্তি। তাদের আকৃতি নারীর তুলনায় বহুগুণ খর্বকায়। ট্যাংকের নল দিয়ে সেসব ছায়ামূর্তির ওপর পড়ছে পাতা আর ফুল।

শিল্পী জয়দেব রোয়াজা কালি ও কলমে এই ছবি এঁকেছিলেন ২০২৩ সালে। তাঁর অন্য সব ছবির মতোই এটিও পাহাড়ের সমকালীন অবস্থাই কেবল তুলে ধরে না; বরং তাকে ভীষণভাবে ছাপিয়ে যায়। বাস্তবতা পেরিয়ে জাদুবাস্তবতার সীমায় এসে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন, সংগ্রাম আর প্রকৃতি সব ভেঙেচুরে কবিতার একটি পঙ্‌ক্তির ভেতরে যেন প্রবেশ করে।

১৯৭৩ সালে খাগড়াছড়ির খামারপাড়ার একটি ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম জয়দেব রোয়াজার। মা নীহারিকা ত্রিপুরা আর বাবা হিরণ্ময় রোয়াজা। হিরণ্ময় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। শান্ত নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা আর জুমখেত দেখতে দেখতে বড় হওয়া। স্কুলে কবিতার বইয়ের ইলাস্ট্রেশন নকল করে খাতায় আঁকতেন। কবিতার চেয়ে ভালো লাগত ইলাস্ট্রেশন। শেষে এই ভালো লাগারই জয় হলো। বাংলাদেশের এই সময়কার এক উজ্জ্বল শিল্পী জয়দেব। তাঁর শিল্পকর্মের পরিচিতি ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে। 

একনজরে জয়দেব

চারুকলার নতুন মাধ্যম পারফরম্যান্স আর্ট। জয়দেব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই এই মাধ্যমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই ধারার শিল্পীরা নিজের শরীরকেই করে তোলেন ক্যানভাস। সঙ্গে থাকে নানা প্রকাশভঙ্গি। পারফরম্যান্স করতে গিয়ে ছবি আঁকা ছাড়েননি তিনি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের যেমন স্টোরিবোর্ড, তেমনি জয়দেবের পারফরম্যান্সের প্রতিটি ভঙ্গির ছবি আঁকা থাকে তাঁর স্কেচ খাতায়। এভাবেই দুই মাধ্যমকে যুক্ত করেছেন নিজের ধরনে। পাশাপাশি বড় ক্যানভাসেও ছবি আঁকেন। কালি ও কলমেই সিদ্ধহস্ত তিনি।

ভারতের কোচি বিয়েনাল, হংকং আর্ট বেজেল, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রায়েনিয়ালে অংশ নিয়েছেন তিনি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১১টির বেশি দেশে তিনি পারফরম্যান্স করেছেন। হয়েছে চিত্র প্রদর্শনীও। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, চীনের হংকংয়ের এম প্লাস, ফ্রান্সের প্যারিসের ক্যাডিস্ট ফাউন্ডেশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির গুগেনহাইম, ভারতের নয়াদিল্লির কিরণ নাদার মিউজিয়ামসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বহু জাদুঘরে তাঁর শিল্পকর্ম রক্ষিত আছে। বাংলাদেশে তাঁর শিল্পসংগ্রহ রয়েছে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন এবং দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে। শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আর্ট রিভিউ এশিয়া, আর্ট নিউজ, ফোর্বস এবং ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকায় তাঁর শিল্পকর্মের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। আবুধাবির গুগেনহাইম মিউজিয়াম জয়দেবের একটি শিল্পকর্ম বেশ ভালো দামে কিনে নিয়েছে। বর্তমানে তিনি মুম্বাইভিত্তিক ঝাভেরি কনটেমপোরারি গ্যালারির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। 

পাহাড় আর ঝিরির পথে পথে

খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির ঝিরি পথে বা কাপ্তাই হ্রদের নির্জনতায় সময় কাটে জয়দেব রোয়াজার। আন্তর্জাতিক খ্যাতি এলেও জীবন কাটান পাহাড়ি জুমিয়াদের মতো। কখনো মাছ ধরতে চলে যান জেলেদের সঙ্গে। আবার কখনো ঝিরি পথে হেঁটে হেঁটে দিন কাটে তাঁর। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কামিলাছড়ি গ্রামে নির্জন হ্রদের ধারে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। সেখানে সপ্তাহের দুই দিন কাটে তাঁর। পাহাড় ও পাহাড়ের মানুষজনকে নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বুনে তোলেন ক্যানভাসে।

জয়দেব দেশের শিল্পীসমাজ ও শিল্পবোদ্ধাদের জগৎ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর কথায়, ঢাকা তাঁকে কখনো টানে না। দু-এক দিন ঢাকা বা দেশের বাইরে থাকলে হাঁপিয়ে ওঠেন। ভাবেন, কখন ফিরবেন পাহাড়ে। 

সম্প্রতি কামিলাছড়িতে তাঁর স্টুডিওতে গিয়ে দেখা গেল আট ফুট দীর্ঘ একটি ক্যানভাসে কাজ করছেন তিনি। তিনতলা স্টুডিওর বারান্দায় এসে দাঁড়ালে অবারিত নীল হ্রদের হাতছানি। হ্রদের পাড়ে ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি। সেদিকে তাকালে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে হয়। বারান্দায় বসে কথায় কথায় জানালেন নির্জন এই পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ছবি বিক্রির টাকায় এই স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী হাসনাহেনা পরশের সঙ্গে মিলে জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন। একটাই চাওয়া, একটু আড়াল, একটু নির্জনতা। ছবি আঁকার জন্য এটুকু পরিসর চেয়েছেন জীবন থেকে। 

জয়দেব রোয়াজা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে