দুর্গাপূজা: বাঙালি সমাজের এক মহামিলনোৎসব
Published: 28th, September 2025 GMT
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। হিন্দুপুরাণের, যেমন মার্কণ্ডেয়পুরাণ, মৎস্যপুরাণ, দেবীপুরাণ, স্কন্দপুরাণ, কালিকাপুরাণ ইত্যাদিতে দুর্গাপূজার উপাখ্যান বর্ণনা করা আছে। কিন্তু কে এই দুর্গা—এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পণ্ডিতদের দ্বারস্থ হতে হয়।
দুর্গা প্রসঙ্গে পণ্ডিতপ্রবর যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি লিখেছেন, ‘যে শক্তি বিশ্বচরাচরে পরিব্যাপ্ত হইয়া আছেন, পরমাণু হইতে বিশাল ব্রহ্মাণ্ড—যাহার আদি নাই, যাহার অন্ত নাই, যাহার মধ্য নাই, যাহা চিন্তার অতীত, যেখানে দিক নাই, কাল নাই, তাহা যে শক্তির প্রকাশ, সেই শক্তিই দুর্গা।’
যে শক্তি বিশ্বচরাচরে পরিব্যাপ্ত হইয়া আছেন, পরমাণু হইতে বিশাল ব্রহ্মাণ্ড—যাহার আদি নাই, যাহার অন্ত নাই, যাহার মধ্য নাই, যাহা চিন্তার অতীত, যেখানে দিক নাই, কাল নাই, তাহা যে শক্তির প্রকাশ, সেই শক্তিই দুর্গা।দুর্গা প্রসঙ্গে পণ্ডিতপ্রবর যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধিএই শক্তিরূপী দুর্গাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা করেন সিংহবাহিনী মহিষাসুরমর্দিনী দশভুজার আকারে। তাঁর সঙ্গে থাকেন দুই পুত্র গণেশ ও কার্তিক এবং দুই কন্যা লক্ষ্মী ও সরস্বতী। অর্থাৎ এক চিরন্তনী পারিবারিক গৃহস্থালি চেতনার প্রতীক।
একসময় এক চালচিত্রের কাঠামোর মধ্যে তাঁদের ঠাঁই ছিল। ১৯৩০–এর দশক থেকে এমন একান্নবর্তী প্রতিমাকে পৃথক পৃথক ফ্রেমে স্থানান্তরিত করা শুরু হয়েছিল। অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার দরুন একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভাঙতে শুরু করে সেই সময় থেকে।
ফলে সামাজিকভাবে এর প্রভাব পূজার প্রতিমাতেও পড়েছিল বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন।
আরও পড়ুনদুর্গা: উৎস থেকে নিরন্তর০৩ অক্টোবর ২০১৪সনাতনীদের কাছে দুর্গা কন্যা হিসেবে প্রতীয়মান। তাই শরতের আগমনী গানে শোনা যায়, ‘যাও যাও গিরি, আনিতে গৌরী, উমা নাকি বড়ো কেঁদেছে।/ দেখেছি স্বপন, নারদ বচন, উমা মা মা বলে কেঁদেছে’—এমন বুলি।
আসলে গৌরী বা উমা বা দুর্গা, যে নামেই তাঁকে সম্বোধন করা হোক, সনাতন বাঙালির বিশ্বাস, শরতের এই কয় দিন তাঁদের মেয়ে উমা পুত্রকন্যাসহ বাপের বাড়ি আসেন। আর বিজয়া দশমীর দিন মেয়ে শ্বশুরালয়ে ফিরে যান।
অনেক পণ্ডিতের মতে, দেবী দুর্গাকে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বৌদ্ধদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। বাংলার প্রাজ্ঞপণ্ডিতজন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন, দেবীপূজা বা শক্তিবাদ আসলে বৌদ্ধধর্মেরই একটি পরিণতি।
কৃষিপ্রধান সভ্যতার আদিকালে শস্য উৎপাদনের জন্য উদ্ভিদ পূজার প্রচলন ছিল। দুর্গাপূজায় যে নয়টি গাছের অংশকে একত্র করে নবপত্রিকার পূজা করা হয়, তা সেই প্রাচীন পৃথ্বী বা উদ্ভিদ পূজারই প্রচলিত ধারা।আবার প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক ম্যাক্সমুলারের মতে, দুর্গা আদৌ কোনো বৈদিক দেবী নন। তবে বৈদিক যুগে স্ত্রী দেবতার পূজার চলে দুর্গা নামের দেবীর পূজাও হতো।
বঙ্গভূমিতে শরৎকালেই প্রধানত দুর্গাপূজার প্রচলন। অনেকেই একে ‘শারদীয়’ বলে থাকেন। রবীন্দ্রনাথের কলমে ফুটে ওঠে ‘শারদোৎসব’ কথাটি। শরৎকালের এই উৎসবকে অকালবোধন বলা হয়।
এই অকালবোধন নিয়েও মতানৈক্য আছে। কালিকাপুরাণে আছে, ব্রহ্মা রাত্রিবেলা দুর্গাকে বোধন করেছিলেন। এ জন্য একে অকালবোধন বলে। তবে জনপ্রিয় কিংবদন্তি হলো রাবণবধের জন্য রাম দেবী দুর্গাকে পূজা করে জাগিয়ে বর প্রার্থনা করেছিলেন বলে একে অকালবোধন বলে; যদিও বাল্মীকি রামায়ণে এ কাহিনির বিবৃতি পাওয়া যায় না।
কালিকাপুরাণে আছে, রামের প্রতি অনুগ্রহ ও রাবণবধের জন্য ব্রহ্মা আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ থেকে নবমী তিথি পর্যন্ত দেবীর পূজা করেন। নবমীতে রাবণ বধ হলে দশমী তিথিতে বিজয় উৎসব হওয়ার পর দেবীর বিসর্জন করেন।
সাধারণত ষষ্ঠীর দিন দেবীর বোধন হয়। বোধন অর্থ জাগানো। তবে চিরজাগ্রত ভগবানকে জাগানো নয়, এ বোধন ভক্ত বা সাধকের অন্তরাত্মাকে জাগানো। নিজেকে শুদ্ধ, শান্ত, সমাহিত করে তোলার লক্ষ্যে যে প্রার্থনা, তার আবাহন। বেলগাছে দেবীর বোধন হলেও সপ্তমী থেকে নবপত্রিকা বা কলাবউ স্থাপন করা হয়।
কৃষিপ্রধান সভ্যতার আদিকালে শস্য উৎপাদনের জন্য উদ্ভিদ পূজার প্রচলন ছিল। দুর্গাপূজায় যে নয়টি গাছের অংশকে একত্র করে নবপত্রিকার পূজা করা হয়, তা সেই প্রাচীন পৃথ্বী বা উদ্ভিদ পূজারই প্রচলিত ধারা। নয়টি উদ্ভিদ হলো কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মানকচু ও ধান।
আরও পড়ুনদুর্গা: মৃণ্ময় মাঝে চিন্ময়২৪ অক্টোবর ২০২০অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়। পুরাণে আছে, এই সন্ধিক্ষণেই রাম দশানন রাবণের মুণ্ডুচ্ছেদ করেছিলেন। এ ছাড়া কোনো কোনো জায়গা বা প্রতিষ্ঠানে দুর্গাপূজার সময় মণ্ডপে কোনো কুমারী বালিকাকে দেবীরূপে পূজা করার রীতি প্রচলিত। ১৯০১ সালে অক্টোবর মাসে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজার প্রবর্তন করেন।
সনাতন ধর্মের সব পঞ্জিকাতেই প্রতিবছর স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আসার ও ফিরে যাওয়ার জন্য দেবীর বাহন কী, তার উল্লেখ থাকে। এ বিষয়ে জনসাধারণের আগ্রহও খুবই লক্ষ করা যায়। সাধারণত চারটি বাহনকেই ঘুরেফিরে দুর্গা ব্যবহার করে থাকেন। নৌকা, দোলা, গজ ও ঘোড়া।
এই আসা-যাওয়ায় সমাজের ফললাভ নিয়েও মতবিরোধ আছে। জনশ্রুতি আছে, নৌকায় আগমন ও গমন হলে শস্যবৃদ্ধি ঘটে। পাশাপাশি দোলায় এলে ও গেলে মড়ক লাগে। গজের বেলায় ঘটে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা এবং ঘোড়ায় এলে–গেলে ছত্রভঙ্গের আশঙ্কা থাকে।
শারদোৎসবের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো সমাজের সব শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। শুধু পুরোহিত নয়, সূত্রধর, মালাকার, কুমোর, ময়রা, ঢাকি—সব শ্রেণির মানুষের মিলিত প্রয়াসেই এই মহোৎসব সম্পন্ন হয়ে থাকে।দুর্গাপ্রতিমা রূপায়ণেও ভিন্নতা আছে। তবে প্রচলিত প্রতিমাটি সাধারণত এমন হয়ে থাকে—দেবী স্বয়ং ত্রিনয়না, প্রতিটি চোখ পূর্ণচন্দ্রের মতো। গায়ের রং অতসী ফুলের মতো সোনার বরণ। তিনি ত্রিভঙ্গা, সুচারুদর্শনা ও নবযৌবনসম্পন্না।
তাঁর ১০ হাতে ভিন্ন ভিন্ন দেবতা কর্তৃক প্রদত্ত অস্ত্র থাকে, যেমন ডান দিকের হাতগুলোয় ত্রিশূল (মহাদেব), খড়্গ (ব্রহ্মা), চক্র (বিষ্ণু), গদা (ইন্দ্র), শঙ্খ (বরুণ) আর বাঁ দিকের হাতগুলোয় খেটক (কুবের), অক্ষমালা (ঈশান), পাশ (যম), অঙ্কুশ (অগ্নি) ও কমণ্ডলু (বায়ু)।
এ ছাড়া অনেক জায়গায় আবার ভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রেও সজ্জিত হতে দেখা যায় মহিষাসুরমর্দিনীকে। সেখানে দেবীকে দেখা যায় চক্র, ত্রিশূল, শঙ্খ, বজ্র, গদা, তির-ধনুক, তরবারি, ঘণ্টা, পদ্ম ও সাপ হাতেও। দেবীর পায়ের নিচে ছিন্নমস্তকের মহিষ ও উন্মত্ত অসুর ত্রিশূলবিদ্ধ। দেবীর ডান পা সিংহের পিঠে আর বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল অসুরের কাঁধে।
শারদোৎসবের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো সমাজের সব শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। শুধু পুরোহিত নয়, সূত্রধর, মালাকার, কুমোর, ময়রা, ঢাকি—সব শ্রেণির মানুষের মিলিত প্রয়াসেই এই মহোৎসব সম্পন্ন হয়ে থাকে।
বারোয়ারি বা সর্বজনীন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে মেলা, বিচিত্রানুষ্ঠান ও যাত্রা–থিয়েটারের জমকালো আসর বসে। দল–মত–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের মিলনস্থল হয়ে ওঠে এই শারদোৎসব।
দীপান্বিতা দে: শিশুতোষ গ্রন্থপ্রণেতা ও প্রাবন্ধিক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সব শ র ণ র ম ন ষ র উদ ভ দ প জ র প রচল ত ব রহ ম
এছাড়াও পড়ুন:
হেরিনু শারদ প্রভাতে
শরৎকাল মানেই উজ্জ্বল নীল আকাশ, টুকরো টুকরো মেঘ, মন কেমন করা সকাল, চারপাশে শিউলি ফুলের গন্ধ। শরৎ মনে করিয়ে দেয় কাজী নজরুল ইসলামের সেই গান ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শরৎ’ কবিতার কথা মনে পড়ে যায়, ‘আজি কী মধুর মূরতি, হেরিনু শারদ প্রভাতে! হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ, ঝলিছে অমল শোভাতে।’
নীল আকাশের নিচে সাদা কাশবন প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে অপরূপ সাজে। কাশফুলের এই শুভ্রতা ছুঁয়ে যায় প্রতিটি হৃদয়। শরতের মেঘমুক্ত আকাশ, শিউলি ফুলের গন্ধ প্রতিটি বাঙালিকে জানান দেন ‘মা’ আসছেন।
আশি–নব্বই সালের দুর্গাপূজা স্মৃতিতে অম্লান। আশি সালে প্রায় প্রতিটি প্রতিমা গড়া হতো মাটির। পরনে শাড়ি। পানপাতার মতো গৌরমুখ।
দু-একটি ব্যক্তিগত পূজা ছাড়া, বারোয়ারি পূজাই বেশি ছিল। তাই পূজার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল সাধারণ মানুষের। এখনকার মতো তখন জাঁকজমক কিংবা জৌলুশ কিছুটা কম থাকলেও আনন্দের কমতি ছিল না। ঘুম থেকে উঠেই শুনতে পেতাম মাইকে চণ্ডীপাঠ, ঢাকের বাজনা, বাতাসে ধূপের গন্ধ। দুর্গাপূজার আয়োজকেরা হাট থেকে বায়না করে নিয়ে আসতেন ঢাকিদের। তখন সাউন্ড সিস্টেম চল ছিল না। তখন শরতের আকাশে–বাতাসে ঢাকের আওয়াজ আর ধূপের গন্ধ ভেসে বেড়াত। আসলে যেকোনো উৎসবই বাঙালির।
এই শরৎ থেকেই শারদীয় উৎসব। যাঁকে ঘিরে এই উৎসব, তিনি শুধু পৌরাণিক দেবী গিরিরাজ হিমালয় ও মেনকার কন্যাই নন, তিনি আমাদের ঘরের মেয়ে। মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে আসবে মায়ের কাছে। তার জন্য মায়ের অধীর অপেক্ষা। তার জন্য ধরণি উৎসবের সাজে সেজেছে। দুর্গাপূজা শুধু দেবীর পূজার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি একটি সামগ্রিক উৎসব। সামাজিক সম্প্রীতির এক সুন্দর মিশ্রণ।
আমরা প্রতিটি প্রতিমার মধ্যে ঐশ্বরিক সত্তাকে দেখতে পাই। মৃন্ময়ীর মাঝে চিন্ময়ীকে বিভিন্ন রূপে আহ্বান করে আমরা তাঁকে খুঁজে পাই। আমাদের উদ্দেশ্য হলো আরাধনা করা। প্রতিমা হলো মাধ্যম। ‘প্রতি মা’ যেখানে ‘মা’ শব্দের সঙ্গে প্রতি উপসর্গ যুক্ত করে আমরা পাই প্রতিমা। প্রতিমা শব্দের অর্থ প্রকাশিত। এই শব্দের মাধ্যমেই বোঝা যায় প্রতিটি মা–ই দেবী। মানবকল্যাণ প্রতিষ্ঠায় মহাশক্তির প্রতীক দেবী ‘দুর্গা’ মায়ের মতোই আবির্ভাব। যিনি নিঃশর্তভাবে ত্যাগ, ভালোবাসা, মমতা, উজাড় করে দেন।
যেকোনো পূজায় ঘট স্থাপন করতে হয়। কারণ, ঈশ্বরকে সাকার–নিরাকার দুই রূপেই পূজা করা হয়। ঘট স্থাপন ছাড়া পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। দেবীপক্ষের শুক্লাষষ্ঠী বোধন দিয়েই মূলত দুর্গাপূজার সূচনা হয়ে থাকে। বোধন অর্থ জাগ্রত হওয়া। যেখানে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের প্রস্তুতি শুরু হয়। এই দিনেই মা স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পদার্পণ করেন। সঙ্গে থাকেন গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক।
সপ্তমীতে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। দুর্গাপূজার তাৎপর্য হলো নবপত্রিকা, যা দেবীর প্রকৃতি রূপকে পূজা করার প্রতীক। নবপত্রিকার মাধ্যমে দেবী দুর্গা প্রকৃতি রূপে পূজিত হন। এটি দুর্গাপূজার অপরিহার্য অংশ। কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মানকচু ও ধান। সপ্তমীর সকালে এগুলোকে স্নান করিয়ে শাড়ি পরিয়ে গণেশের পাশে স্থাপন করা হয়। এই নবপত্রিকাগুলো নয়টি দেবীর প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়। শস্য–শ্যামলা প্রকৃতি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। দেবী দুর্গা প্রকৃতি রূপে বিরাজ করেন।
অষ্টমী তিথি, দুর্গাপূজার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে দেবীর অষ্টবিধ রূপ ও অস্ত্রগুলো পূজিত হয়। পুরাণমতে, মহাষ্টমীর দিনে মা দুর্গা তাঁর ললাট থেকে দেবী চামুণ্ডা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। দেবতাগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী কুমারী রূপে অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন। চামুণ্ডা মহাময়ার এক রুদ্ররূপ। দেবীকে চামুণ্ডারূপে আরাধনা করা হয়।
১৯০১ সালের ১৮ অক্টোবর স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপূজায় অষ্টমী তিথিতে কুমারীপূজার প্রচলন করেন। দেবী দুর্গাকে নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি জগন্মাতা। যিনি সৃষ্টি, পালন, ধ্বংসের মাধ্যমে পৃথিবীকে পরিচালনা করেন। নারী শক্তি, প্রকৃতি, সৃষ্টি, ধ্বংস, জ্ঞান, সমৃদ্ধি ও মুক্তির প্রতীক হিসেবে পূজিত হন।
নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহূতি দেওয়া হয়। শাস্ত্রমতে, নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলের সম্পদ লাভ হয়। নবমী পূজায় পশুবলি দেওয়া হয়। সঙ্গে আখ, চালকুমড়ো বলি দেওয়ার রীতি আছে।
নবমীর উচ্ছ্বাস–আনন্দের পরই আসে বিজয়া দশমী। প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। প্রথমে ঘটের মাধ্যমে নিরাকারভাবে এবং পরে সাকার মাটির প্রতিমা বিসর্জনে মা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যান। দেবীবরণ, সিঁদুরখেলা, চলে একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মিষ্টি বিতরণ।
কবি সুনেত্রা ঘটকের ‘বিজয়া দশমী’ কবিতার বিষাদের মতো আমাদেরও মনে একই সুর বাজে।
বিজয়া দশমী, বাজে বিদায়ের বিষাণ, দেবী মা চলে যান, রেখে যান অভিমান। আশ্বিনের এই শারদ দিনে, মেঘেদের আনাগোনা, মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে হয় দেবীর প্রস্থান।
শুভশক্তির সূচনা ও অশুভশক্তির বিনাশ হোক। সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ হোক, সবার মধ্যে বজায় থাকুক অকৃত্রিম ভালোবাসা। সব অন্ধকার মুছে পূজা হয়ে উঠুক অসাম্প্রদায়িক, সর্বজনীন।
চন্দনা সেনগুপ্তা বাচিক শিল্পী ও কবি