ছয় প্রকল্প আটকা, ক্ষুব্ধ মেয়র
Published: 28th, September 2025 GMT
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরের বর্জ্য সংগ্রহ এবং জলাবদ্ধতা নিরসন কাজের জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে একটি প্রকল্প নিয়েছিল ২০২১ সালের আগস্ট মাসের শুরুতে। তখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯৫ কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে ২৭৯ কোটি টাকা করা হয়েছে। চার বছর পার হলেও এই প্রকল্প এখনো অনুমোদিত হয়নি। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পড়ে আছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে।
শুধু যান-যন্ত্রপাতি কেনা প্রকল্প নয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আরও পাঁচটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে অনুমোদনের অপেক্ষায়। এগুলোর মধ্যে দুটি প্রকল্প হচ্ছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বর্জ্যাগার স্থাপন। অন্য দুটি নগর ভবন নির্মাণ ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্প। আরেকটি সড়ক সংস্কারে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ অনুদান। সব মিলিয়ে এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া আধুনিক বর্জ্যাগার স্থাপনের জন্য জমি কেনা এবং ৬০০ অস্থায়ী শ্রমিকের অনুমোদনের বিষয়টি ঝুলে আছে।
‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস নির্মাণ’ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২৩১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা টাকা। এখন দাঁড়িয়েছে ৩১০ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়। বৃদ্ধি পাওয়া ৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকার মধ্যে ১৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করতে হবে।এভাবে উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন বছরের পর বছর ঝুলে থাকায় ক্ষুব্ধ সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন গত সোমবার চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন, কোনো প্রকল্পের ফাইল সিটি করপোরেশন থেকে মন্ত্রণালয়ে গেলে তা আর অনুমোদন হয় না। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা প্রকল্পের ফাইল (নথি) বাসায় নিয়ে যান। মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যায়। এটাই এখনকার হতাশাজনক বাস্তবতা। প্রকল্পগুলো যদি পাস হতো, তাহলে চট্টগ্রাম শহর সুন্দর করতে পারতেন।
চট্টগ্রাম নগরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রকল্প অনুমোদিত না হওয়ায় নগরবাসীকে দুর্ভোগ সইতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, কোনো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য প্রথমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পাঠাতে হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তা যায় পরিকল্পনা কমিশনে। সেখানে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়। ওখানে পাসের পর তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কোন কোন প্রকল্প আটকে আছে, সোমবারের বক্তব্যের পর মন্ত্রণালয় থেকে তা জানতে চেয়েছে, তা পাঠানো হয়েছে।
ছয় বছরেও অনুমোদিত হয়নি প্রকল্পচট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আধুনিক নগর ভবন নির্মাণ করতে ২০২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ২০১৯ সালের মার্চে। নগরের আন্দরকিল্লায় অবস্থিত পুরোনো নগর ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চলছে নগরের টাইগারপাসে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা বস্তিবাসীদের জন্য নির্মিত ভবনে। সাড়ে ছয় বছর আগে পাঠানো এই প্রকল্প এখনো অনুমোদন হয়নি।
‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল ২০২১ সালের আগস্টে। প্রকল্পটিও এখনো পাস হয়নি।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যের ডিপি ক্লিন টেক ইউকে লিমিটেড ও ইমপ্যাক্ট এনার্জি গ্লোবাল লিমিটেড যৌথ উদ্যোগে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সিটি করপোরেশনকে প্রস্তাব দেয়। যে প্রকল্পের অধীন ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে। চলতি বছরের ২২ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের সহায়তায় পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি ল্যান্ডফিল স্থাপনের জন্য আরেকটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। এতে ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। দুটি প্রকল্প এখনো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়নি বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস নির্মাণ’ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিও অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল গত বছরের ১৬ অক্টোবর। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরের রাস্তাঘাট সংস্কার এবং ঝুঁকিপূর্ণ খাল ও নালার পাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। মাস পেরিয়ে গেলেও এই ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাড়া পায়নি সিটি করপোরেশন।
প্রকল্প অনুমোদনে ঋণের ‘ফাঁদ’সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, আধুনিক নগর ভবন নির্মাণের প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয় ২০২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে ৪০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে ১৬১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আবার সরকারি অংশের ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ৯৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়ার শর্ত বেঁধে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
একই ভাবে ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্প ব্যয়েও ঋণের শর্ত বেঁধে দিয়ে গত ৫ মে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকার মধ্যে সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে ১০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর ঋণ হিসেবে নিতে হবে ১৬১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস নির্মাণ’ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২৩১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা টাকা। এখন দাঁড়িয়েছে ৩১০ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়। বৃদ্ধি পাওয়া ৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকার মধ্যে ১৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করতে হবে।
সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেখানে থেকে আয় করারও সুযোগ নেই। তাহলে ঋণ নিলে শোধ করবেন কী করে? এ ছাড়া প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হয় ৩২ কোটি টাকা। এগুলো জোগাড়েই হিমশিম খেতে হয় সিটি করপোরেশনকে। এর বাইরে দেনা আছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রকল্পগুলো চট্টগ্রামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও মন্ত্রণালয়ের কর্তারা তা অনুধাবন করতে পারছেন না। তাই অনুমোদন না দিয়ে এভাবে বছরের পর বছর ধরে ফেলে রাখা দুর্ভাগ্যজনক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: করপ র শনক ৩৯ ল খ ট ক প রকল প র ন প রকল প নগর ভবন প রস ত ব বর জ য নগর র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।