চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের দুই নারী প্রার্থীকে সাইবার বুলিং ও স্লাট-শেমিং করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কশিমনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিনের কাছে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন চাকসু নির্বাচনে সহ-দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত ও নির্বাহী সদস্য জান্নাতুল ফেরদাউস সানজিদা।

আরো পড়ুন:

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শান্তিপূর্ণ’ ছাত্র সংসদ ভোটে বিজয়ী যারা

গকসু নির্বাচন: ১৯ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ পারভেজ এবং অর্থ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম।

অভিযোগপত্রের সঙ্গে দেওয়া সংযুক্তিতে দেখা যায়, শরিফ মোহাম্মদ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে মন্তব্য করা হয়েছে, “এই দিকে আমি আপুর উপ্রে ক্রাশ খেয়ে বসে আছি, হায় আল্লা খালেদ, ক্রাশ খাওয়া রোগে ধরসে আমারে। দুই দিন পর পর এর ওর উপর ক্রাশ খাচ্ছি।” 

মেহেদী হাসান শরিফ নামে আরেকটি আইডি থেকে কমেন্ট করা হয়েছে, “ভিডিও সার্ভিস দিতাছে শুনলাম’। রোহান খান নামে অন্য একটি আইডি থেকে কমেন্ট করা হয়েছে, “শিবিরের প্রিয় দাসী।” গল্প জীবনের আইডি থেকে মন্তব্য লেখা হয়েছে, “জাহান্নামী খুর, শিবিরের যৌন সাথী।”

লিখিত অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগীরা লিখেছেন, “আসন্ন চাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে বিভিন্ন ‘বট আইডি’, ভুয়া ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদেরকে লক্ষ্য করে নানাবিধ মানহানিকর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষত সাইবার বুলিং, স্লাটশেমিং, ট্যাগিং ও ভুয়া ফ্রেমিংয়ের মাধ্যমে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এ ধরনের কার্যকলাপ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও মানসিক সুস্থতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তারা বলেন, “এই অমানবিক ও অনৈতিক কার্যক্রম কেবল নারী শিক্ষার্থীদের সম্মানহানিই ঘটাচ্ছে না, বরং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশকে কলুষিত করছে। অতএব, বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

অভিযোগপত্রে তারা অভিযুক্ত আইডি, পেজ ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংযুক্ত করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জান্নাতুল আদন নুসরাত বলেন, “প্রথমে দপ্তর সম্পাদক এবং সহ-দপ্তর সম্পাদক পদটি শুধু ছেলেদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রক্ষিতে এই পদটি মেয়েদের জন্যও উন্মুক্ত করা হয়। তখনই আমি সহ-দপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিই। তবে আমরা দেখছি বিভিন্নভাবে আমাদের সাইবার বুলিং, স্লাট-শেমিং করা হচ্ছে। এসবের প্রমাণসহ আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি, আমরা এর প্রতিকার পাব।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, “আমাদের প্যানেলের দুই নারী প্রার্থীকে ফেসবুক আইডির পোস্টে ও আমাদের পেজে তাদের নিয়ে বাজে ও নোংরা ভাষায় বিভিন্ন কমেন্ট করা হচ্ছে। ওসব বট আইডি থেকে এমন ভাষায় কমেন্ট করা হচ্ছে, যেগুলো মুখে বলার মতো না।”

তিনি বলেন, “আজ (রবিবার) নির্বাচন কমিশনারের কাছে নারীদের নিয়ে এসব সাইবার বুলিয়ের প্রতিকারের জন্য লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, এটার প্রতিকার করবেন।”

চাকুসর প্রধান নির্বাচন কশিমনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, “আমাদের কাছে তারা লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জমা দিয়েছে। আমরা নির্বাচনি আচরণবিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেব। অভিযুক্তকে যেহেতু এখনো চিহ্নিত করা যায়নি, সেহেতু অভিযুক্ত আইডি যদি কোনো প্রার্থীর হয়, তার জন্য এক ধরনের শাস্তি হবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী হলে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/মিজান/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ

আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।

এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।

সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।

৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’

কারা আছে তালিকায়

দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।

দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।

১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।

২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।

কীভাবে এই মূল্যায়ন

৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।

ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।

এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।

জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:

বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;

কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;

কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;

সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;

কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ