অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রধান চ্যালেঞ্জ: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
Published: 29th, September 2025 GMT
জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং আগামী প্রজন্মকে সুস্থভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ মো. আব্দুর রশীদ।
তিনি বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সমন্বিত উদ্যোগ, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং সময়াবদ্ধ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সফলতা অর্জন সম্ভব।”
আরো পড়ুন:
সরানো হলো জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমানকে
পিএসসি ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ‘যৌথ ঘোষণা' বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নির্ধারণ বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় কৃষি, খাদ্য, শিল্প, বাণিজ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ পাঁচটি মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা (FAO, WFP, UNICEF, UNDP), স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কারিগরি সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
মূল আলোচ্য বিষয়গুলো ছিল:
১. ‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়নে তদারকি: মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের তদারকি কমিটি গঠন করা হবে, যারা বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করবে।
২. নিরাপদ খাদ্য ও কৃষি উৎপাদন: কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে রাসায়নিকমুক্ত ফসল উৎপাদন, তামাকের পরিবর্তে বিকল্প ফসল চাষে প্রণোদনা, কোল্ড চেইন অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়।
৩. খাদ্য প্যাকেট লেবেলিং: প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে Front-of-Package Labeling (FOPL) বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়, যাতে পুষ্টি উপাদান, অ্যালার্জেন, চিনি, সোডিয়াম ও ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
৪. নিরাপদ প্রাণিজ পণ্য উৎপাদন: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অ্যান্টিবায়োটিক ও রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ মাছ, দুধ, ডিম উৎপাদন, লবণ হ্রাস প্রযুক্তি ও রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
৫. স্বাস্থ্যবান্ধব শিল্পনীতি: শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খাদ্য পণ্যের পুনর্গঠন (reformulation) উৎসাহিত করতে প্রণোদনার মাধ্যমে ট্রান্স ফ্যাট, লবণ ও চিনি কমানোর পদক্ষেপ গৃহীত হবে।
৬. নিয়ন্ত্রিত আমদানি-রপ্তানি: বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য ও তামাকজাত পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ, পোর্টে স্ক্রিনিং কার্যক্রম এবং আমদানি খাদ্যে পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণে কাজ করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “স্বাস্থ্যবান্ধব নীতি ও কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশব্যাপী এনসিডি প্রতিরোধে সফলতা অর্জন সম্ভব। এতে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য খাত নয়, সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়ন ও মানবসম্পদের গুণগত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।”
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জ্যাকুলিন মার্স: ক্যান্ডি সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী, পোষা প্রাণীর খাবার ও দাতব্য কাজে বিশ্বখ্যাত
বিশ্বের সেরা ধনী নারীদের একজন জ্যাকুলিন মার্স। তিনি মার্স কনফেকশনারি সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বের অন্যতম নিভৃতচারী ধনকুবেরও। ১৯৩৯ সালে ফরেস্ট মার্স সিনিয়র ও অড্রি রুথ মায়ারের ঘরে জন্ম নেওয়া জ্যাকুলিন বেড়ে ওঠেন এমন এক পরিবারে, যাদের সাফল্যের কাহিনি আমেরিকার ব্যবসায়িক ইতিহাসে অনন্য।
মার্সের পিতামহ দাদা ফ্রাঙ্ক সি. মার্স ১৯১১ সালে মার্স ইনকরপোরেটেড প্রতিষ্ঠা করেন। সাধারণ ক্যান্ডির রেসিপি দিয়ে এই ব্যবসার সূত্রপাত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ছোট ব্যবসা থেকে তৈরি হয় মিল্কি ওয়ে, স্নিকার্সের মতো জনপ্রিয় চকলেট। ধীরে ধীরে তা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ক্যান্ডির পাশাপাশি পোষা প্রাণীর খাবার, সাধারণ খাদ্যপণ্য ও চুইংগামের মতো বহুবিধ খাতে এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে। খবর ফোর্বস।
ফোর্বসের তালিকা অনুসারে, জ্যাকুলিন এখন বিশ্বের ৪৩তম শীর্ষ ধনী। এখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৪০ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৯০ কোটি ডলার। কিন্তু অনেক উত্তরাধিকারীর মতো তিনি নিছক মালিক হয়ে চুপচাপ বসে থাকেননি।
১৯৬১ সালে ব্রিন মাওর কলেজ থেকে নৃতত্ত্বে ডিগ্রি অর্জনের পর জ্যাকুলিন মার্স ইনকরপোরেটেডে যোগ দেন। প্রায় দুই দশক সেখানে কাজ করেছেন তিনি। কোম্পানির ফুড প্রোডাক্টস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পরবর্তীকালে পরিচালনা পর্ষদে জায়গা করে নেন। ২০১৬ সালে পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে তাঁর করপোরেট অধ্যায়ের ইতি ঘটে। কোম্পানির ভেতরে তাঁর উত্তরাধিকার অবশ্য অক্ষুণ্ন থেকে যায়।
১৯৯৯ সালে জ্যাকুলিনের বাবা মারা গেলে মার্স ইনকরপোরেটেডের বিশাল অংশীদারত্ব তিন ভাইবোনের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। সেই সময় থেকে জ্যাকুলিন কোম্পানির এক-তৃতীয়াংশ মালিকানা ধরে রেখেছেন। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সেই শেয়ার এবং কোম্পানির ব্যবসায়িক সফলতার সূত্রে এখন তিনি ৪ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থের মালিক।
সাধারণ জীবনজ্যাকুলিন মার্স অন্যান্য ধনকুবেরের মতো জমকালো জীবন যাপন করেন না। তিনি সচরাচর কাউকে সাক্ষাৎ দেন না, সংবাদমাধ্যম থেকেও দূরে থাকেন। তাঁর নিজের নামের চেয়ে বেশি পরিচিত মার্স ব্র্যান্ড। তিনি বরং জনসমক্ষে পরিচিত হয়েছেন দাতব্য কাজ ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে। তিনি ছিলেন স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের ট্রাস্টি। সেই সঙ্গে ন্যাশনাল স্পোর্টিং লাইব্রেরি অ্যান্ড মিউজিয়ামের সঙ্গে জড়িত। ওয়াশিংটন ন্যাশনাল অপেরার পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। ছিলেন ন্যাশনাল আর্কাইভস ফাউন্ডেশনের পর্ষদ সদস্য। পরিবেশ রক্ষায়ও তিনি সক্রিয়। ভার্জিনিয়ায় নিজের জমি সংরক্ষণ ট্রাস্টের আওতায় দিয়েছেন, পরিচালনা করছেন একটি জৈব কৃষিখামার। অশ্বারোহণ সব সময় তাঁর নেশা। যুক্তরাষ্ট্রের ইকুয়েস্ট্রিয়ান টিমে তাঁর সম্পৃক্ততা থেকে বোঝা যায়, ব্যক্তিগত আগ্রহ ও জনকল্যাণকে তিনি কীভাবে একসূত্রে মিলিয়েছেন।
আজও জ্যাকুলিন মার্স জনসমক্ষে নেই, বরং গোপনেই চালিয়ে যাচ্ছেন দাতব্য কাজ, সংস্কৃতি ও অশ্বারোহণ কার্যক্রম। তাঁর ছেলে স্টিফেন ব্যাজার বর্তমানে মার্সের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। ফলে পরিবারের ব্যবসায়িক ঐতিহ্য অব্যাহত আছে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, মার্স ইনকরপোরেটেড যক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল পারিবারিক বেসরকারি কোম্পানিগুলোর একটি। এই কোম্পানির সফলতা প্রমাণ করে, গোপনীয়তা ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করে প্রকাশ্যে শেয়ারবাজারের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব।
একমাত্র বিতর্কজ্যাকুলিনের জীবন অবশ্য বিতর্কহীন নয়। ২০১৩ সালে ভার্জিনিয়ায় তিনি এক মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁর গাড়ি উল্টো লেনে চলে গিয়ে একটি মাইক্রোভ্যানকে ধাক্কা দিলে এক যাত্রী মারা যান এবং কয়েকজন আহত হন। তিনি নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালনার দায় স্বীকার করেন। শাস্তি হিসেবে আদালত তাঁকে জরিমানা করেন এবং তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। এই ঘটনাই হয়তো একমাত্র উপলক্ষ, যখন তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যমের প্রধান শিরোনামে চলে আসেন।
অনেকে বলেন, জ্যাকুলিন মার্স নিজের প্রচেষ্টা ও পারিবারিক উত্তরাধিকারের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। একদিকে তিনি সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী, অন্যদিকে কোম্পানিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব শ্রম এবং অংশগ্রহণও রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি শিল্প-সংস্কৃতি, পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষায় সমাজে অবদান রেখেছেন। প্রচারমুখর বা সেলিব্রেটি ধনকুবেরদের ভিড়ে তিনি আলাদা—অপরিসীম ধনী ও প্রভাবশালী, কিন্তু পাদপ্রদীপের আলোয় না থাকা নিস্তরঙ্গ জীবন যাপনকারী শীর্ষ ধনী।