বাংলাদেশের ডিজিটাল ও জনপরিসর ক্রমবর্ধমান চাপে রয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা, ডিজিটাল দমন-পীড়ন বৃদ্ধি, লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য ছড়ানো এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা, এসব চ্যালেঞ্জগুলো প্রতিনিয়ত চোখে পড়ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল অধিকার, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং নাগরিক পরিসরে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ রক্ষা ও প্রসারের প্রচেষ্টায় ‘সিভিক ডিফেন্ডারস অফ বাংলাদেশ’ ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়েছে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মোহাম্মদপুরের ওয়াই ডাবলিউসিএ মিলনায়তনে এই ওয়েব পোর্টালটি গণমাধ্যম, গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, উন্নয়ন সহযোগী, মানবাধিকারকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আরো পড়ুন:

খাগড়াছড়ি ইস্যুতে গুজবে সয়লাব সোশ্যাল মিডিয়া: বাংলাফ্যাক্ট

কাড়াকাড়ি করে প্রশাসনে লোক নিয়োগ করিয়েছে বিএনপি-জামায়াত: তথ্য উপদেষ্টা

বেসরকারি অ্যাডভোকেসী প্রতিষ্ঠান ‘ভয়েস’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচকদের মধ্যে ছিলেন নীতি পর্যালোচক ড.

অনন্য রায়হান, নারীবাদী অধিকার কর্মী সামিনা ইয়াসমিন, উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ টনি মাইকেল গোমেজ এবং আদিবাসী অধিকার কর্মী ডালিয়া চাকমা।

প্যানেল আলোচনায় আলোচকরা বলেন, জনপরিসরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো সমন্বিতভাবে তুলে ধরার জন্য ভয়েসের এই উদ্যোগ অতি প্রশংসার দাবিদার। এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, তা নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক অধিকার ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ কাঠামো গঠনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ড. অনন্য রায়হান বলেন, “ডিজিটাল ও নাগরিক পরিসরে অধিকার লঙ্ঘনের শিকার ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশে কিছু আইনগত সংস্কার বা কাঠামো প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে এই ধরনের ওয়েব পোর্টাল আইনব্যবস্থার সাহায্যকারী পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে।”

সামিনা ইয়াসমিন বলেন, “নারীবাদী আন্দোলন ও নারী অধিকার সংগঠনগুলো এই পোর্টালকে ব্যবহার করে লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্যমূলক ক্যাম্পেইনের ক্ষতিকর দিক মোকাবিলা করতে পারে, নিরাপদ ডিজিটাল পরিসরের পক্ষে সোচ্চার হতে পারে এবং নাগরিক জীবনে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে। শুধু তাই নয়, নারী সাংবাদিকদের জন্যে এই প্ল্যাটফর্মটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সংবাদ মাধ্যমে আমরা নারী ও পুরুষের সংবাদের ভিন্নতা দেখি। এই বৈষম্যসহ অপতথ্যগুলো এই ওয়েব পোর্টালে উঠে আসা উচিত।”

উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ টনি মাইকেল গোমেজ বলেন, “এই ওয়েব পোর্টালটি একটি অ্যাডভোকেসি ও ক্ষমতায়নের হাতিয়ার। এমন প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরো কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে যুবসমাজ, তৃণমূল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং বৃহত্তর নাগরিক পরিসরে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মটি একটি ইনফরমেশন টুল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।”

ডালিয়া চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, “ওয়েব পোর্টালটির অন্যতম শক্তিশালী দিক হলো, জনপরিসরের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো যাচাই করে নথিভুক্ত করা হয়েছে। বাস্তব জীবনের ডিজিটাল ও নাগরিক পরিসরে অধিকার লঙ্ঘন এবং লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্যের কেস স্টাডি গুলো শুধুমাত্র সচেতনতা বাড়াতেই নয়, বরং বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, এমনকি নীতিনির্ধারকদের অর্থবহ পরিবর্তনের জন্যে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।”

ওয়েব পোর্টালটি উন্মোচনের পাশাপাশি ‘কোল্যাবোরেটিভ অ্যাকশন্স ফর প্রোমোটিং ডিজিটাল অ্যান্ড সিভিক স্পেস অ্যান্ড কমব্যাটিং জেন্ডার ডিজইনফরম্যাশন’ প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন ভয়েস-এর উপ-পরিচালক, মুশাররাত মাহেরা।

ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, “এই ওয়েব পোর্টালটি একটি প্রযুক্তিভিত্তিক নথির ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করবে, যা আসলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জনপরিসরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর দলিল। আগামীর গবেষক এবং অধিকারকর্মীদের জন্য এতে সমন্বিত তথ্যাবলি অত্যন্ত কর্যকর হবে বলে আমি আশা রাখি।”

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অপতথ্য ও এআইয়ের অপব্যবহার রোধে আশা ও সীমাদ্ধতা, দুটিই দেখছে ইসি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য এবং এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) অপব্যবহার ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এ ক্ষেত্রে আশা ও সীমাবদ্ধতা, দুটিই দেখছেন তিনি।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় সানাউল্লাহ এ কথা জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন, তিনজন নির্বাচন কমিশনার এবং পাঁচটি দলের প্রতিনিধিরা এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন।

সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থী—উভয়ই নির্বাচনী আচরণবিধির আলোকে একটা অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করছেন, যেখানে তাঁরা আচরণবিধি প্রতিপালনের কথা বলেছেন। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করলে অপতথ্যের প্রভাব কমানো যাবে বলে ইসি মনে করে।’

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় যতটুকু সক্ষমতা আমাদের আছে, এর পাশাপাশি সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে আমরা ইউএনডিপির (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) যে প্ল্যাটফর্মটা আছে, সেটাও ব্যবহার করছি। তবে এটা খুব একটা সহজ কাজ নয় বর্তমান বিশ্বে। আমি ইসির পক্ষ থেকে অনেকগুলো ইলেকটোরাল ম্যানেজমেন্ট বডির (নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা পর্ষদ) সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবারই উদ্বেগ এখন এটা যে কীভাবে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপপ্রয়োগ, অপব্যবহার, এআইয়েরর অপব্যবহার রোধ করা হবে। তবে আমরা যদি সবাই সচেতন থাকি, তাহলে কিছুটা অবশ্যই করা সম্ভব।’

‘প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে’

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, বর্তমান সময়ে তথ্যের প্রবাহ থামানো যাবে না। কারণ, ৫০ শতাংশের বেশির উৎস ট্রেসই (শনাক্ত) করা সম্ভব নয়; কোত্থেকে উৎপত্তি হচ্ছে, এটাই বের করা যাবে না। এটা একটা বৈশ্বিক বাস্তবতা। প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে। মেটাসহ (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) যতগুলো প্রোভাইডার আছে, এরা যে মানদণ্ডে একটা জিনিসকে সরিয়ে দেয়, সেই মানদণ্ডে বেশির ভাগই পড়ে না। তার মানে, চাইলেও সে সরাবে না কন্টেন্টটা।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।...আমরা ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়াব, যেগুলো খারাপ তথ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেটা সরানো সম্ভব, তা সরানো, যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তার পরিবর্তে একটা সঠিক তথ্য যথাযথ সময়ে তুলে ধরা; যাতে মানুষ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কাজগুলো করব।’

ভোটার তালিকা ১৮ নভেম্বর

পোস্টাল ভোটিংয়ের নিবন্ধনের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার ইসি ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের একটি অ্যাপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, একটা উল্লেখযোগ্য সাড়া পাব।...যে প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই–বোনেরা ইতিমধ্যে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন, তাঁরা চাইলে ভোট দিতে পারবেন। পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ভোট দেওয়া যাবে।’

তবে গত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রবাসীদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হতে আবেদন করেছেন, আপাতত তাঁরা ভোট দিতে পারবেন বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ৩১ অক্টোবরের পর যাঁরা হচ্ছেন, তাঁদের নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ১৮ নভেম্বর একটা ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়ে যাবে।

অবশ্য নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘দেশের ভেতরে যদি কেউ এখনো বাদ পড়ে থাকেন ভোটার তালিকায়, তাঁদের জন্য সুযোগ আছে। কারণ, আমাদের তফসিল ঘোষণার পরও আমরা ভোটার তালিকার একটা ফাইনাল ইভেন্ট (সংস্করণ) বের করব। তখন পর্যন্ত আমরা কাউকে পেলে নিয়ে নেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপতথ্য ও এআইয়ের অপব্যবহার রোধে আশা ও সীমাদ্ধতা, দুটিই দেখছে ইসি