মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পাঁচগাঁও। ঢাকঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাধ্বনি, ধূপের গন্ধ আর আলোঝলমলে মণ্ডপ—সব মিলিয়ে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের উচ্ছ্বাস। তবে পাঁচগাঁওয়ের পূজা অন্যদের থেকে আলাদা। এখানে দেবী দুর্গা আসেন ‘লাল দুর্গা’ রূপে। এখানে ৩০০ বছর ধরে চলছে পূজা।

রোববার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, আলোয় ঝলমল করছে পাঁচগাঁও দুর্গামণ্ডপ। রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়ক থেকে মন্দিরমুখী পথজুড়ে বসেছে অস্থায়ী দোকান। তিলুয়া, বাতাসা, খাজা, জিলাপি, ফুচকা থেকে শুরু করে খেলনা, প্রসাধনী ও পূজার সামগ্রী—সবই পাওয়া যাচ্ছে। ষষ্ঠীর দিন হওয়ায় ভিড় তুলনামূলক কম হলেও সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে হাজারো ভক্তের পদচারণে গ্রাম মুখর হয়ে উঠে—এমনটাই জানান স্থানীয় লোকজন।

পাঁচগাঁও দুর্গাপূজার পরিচালক সঞ্জয় দাস বলেন, তিনি পূজা পরিচালনাকারীদের ষষ্ঠ পুরুষ। প্রায় ৩০০ বছর ধরে তাদের পরিবারে এই লাল রঙের প্রতিমার পূজা হয়ে আসছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধের বছরে পূজা হয়নি। এটি মূলত পারিবারিক পূজা হলেও দেবীর জাগ্রত উপস্থিতির বিশ্বাসে প্রতিবছর হাজারো মানুষ এখানে ভিড় করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এই পূজার সূচনা করেন সর্বানন্দ দাস নামের এক সাধক। তিনি আসামের শিবসাগরে চাকরিরত অবস্থায় কামাক্ষ্যায় পূজা দিতে গিয়ে অলৌকিক অভিজ্ঞতা লাভ করেন। পূজার সময় এক পাঁচ বছরের মেয়ের শরীর লাল হয়ে ওঠে। তখন সর্বানন্দ দাস বুঝতে পারেন, দেবী স্বয়ং অবতীর্ণ হয়েছেন। দেবী তাঁকে বর দিতে চাইলে তিনি প্রার্থনা করেন—প্রতিবছর তাঁর জন্মস্থান পাঁচগাঁওয়ে দেবী অধিষ্ঠান করবেন। দেবী নির্দেশ দেন, এখানকার প্রতিমা হবে লাল বর্ণের। সেই থেকে চলে আসছে লাল দুর্গার পূজা।

পূজার আয়োজকেরা জানিয়েছেন, দেশে পাঁচগাঁওয়ের দুর্গাবাড়িতেই দেবী দুর্গার রং লাল, আর কোথাও লাল বর্ণের দেবী নেই। তবে ভারতের আসাম ও কামাখ্যায় লাল বর্ণের প্রতিমা আছে। পাঁচগাঁওয়ে ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন এই লাল বর্ণের দেবী। পূজার এই সময়টি হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বী তাঁদের নানা মানত নিয়ে এখানে ভিড় করেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালান।

পূজার সপ্তমী ও নবমীতে পাঁঠা, মহিষ, হাঁস ও কবুতর দেবীর নামে এখানে বলি দেন অনেকে। এখানকার দেবী জাগ্রত হওয়ায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে দেবী-দর্শনে সপরিবার আসেন অনেকেই। অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের কাছে শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচগাঁওয়ের দেবী-দর্শন অনেকটাই নিয়মিত। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও এই উৎসবস্থলে ছুটে আসেন, ঘুরে বেড়ান। মেলায় কেনাকাটা করেন। শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে চার-পাঁচ দিন পাঁচগাঁও যেন ঘুমায় না। গ্রামের বাতাসে বাজে একটাই সুর—‘দুর্গা এল, দুর্গা এল’।

সঞ্জয় দাস প্রথম আলোকে বলেন, পূজা উদ্‌যাপনে শতভাগ নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সহযোগিতা আছে। কোনো সমস্যা নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ল বর ণ র ৩০০ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

সন্ধ্যা হলেই জমে ওঠে সপ্তাহের এক বেলার হাট

চা-বাগানের পথে পথে তখন ঘরে ফেরা মানুষের সারি। কারও পিঠে শূন্য ঝোলা, কারও কাঁধে বা মাথায় শুকনা কাঠ কিংবা ঘাসের আঁটি। কেউ কাজ শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফিরছেন, কেউ আবার সপ্তাহের মজুরি নিতে চা-বাগানের অফিসের দিকে পা বাড়িয়েছেন। তবে এই সারির বেশির ভাগ মানুষই এগোচ্ছেন সপ্তাহের এক বেলার হাটের দিকে।

ওই দিনই তলববার—সপ্তাহের মজুরি পাওয়ার দিন। নানা দিক থেকে চা-শ্রমিক, তাঁদের পরিবার ও বাগানসংলগ্ন গ্রামের মানুষ একসঙ্গে মিশে ভিড় করছেন হাটে।

মৌলভীবাজারের রাজনগর চা-বাগানের হাসপাতাল টিলা এলাকায় এই সাপ্তাহিক হাট বসে প্রতি বৃহস্পতিবার। সপ্তাহে এক দিন, মাত্র এক বেলা। সাধারণত বেলা তিনটার দিকে হাট শুরু হয়। সময় গড়ালে তলব পাওয়া লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা নামলেই লোকারণ্য হয়ে ওঠে বাজার। মাছ, সবজি-আনাজ, শুকনা খাবার থেকে শুরু করে নানা রকম গৃহস্থালির জিনিস—সবই কেনাবেচা হয় এই হাটে।

গত বৃহস্পতিবার সেই হাটে গিয়ে কথা হয় নিমাই শুক্ল বৈদ্য নামের একজনের সঙ্গে। চা–বাগানে কাজ করেন তিনি, তলবের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে হাটে সাজানো পণ্য দেখছিলেন।

নিমাই শুক্ল বৈদ্য বলেন, ‘আমি বাগানের শ্রমিক আছি। বৃহস্পতিবার এখনো তলব পাইনি। তলব পাইলে বাজার করমু। এক সপ্তাহে বারো শ (১ হাজার ২০০ টাকা) টাকা পাইমু। এই টাকায় কী হবে ভাই, কিছু হয় না। বাইচ্চা-কাইচ্চার পড়ালেখা চলে না। দুই-তিন দিন ভালোটিকে খাওয়া যায়, এই আরকি।’

সন্ধ্যার পর হাটে জনসমাগম বাড়তে থাকে। রাত নয়টার দিকে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের রাজনগর চা-বাগানে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সন্ধ্যা হলেই জমে ওঠে সপ্তাহের এক বেলার হাট