৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল
Published: 30th, September 2025 GMT
১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। ভোট চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল ১২ সংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ বিপুল ভোটে জিততে চলছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা এ প্যানেল নিয়ে ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত।
নির্বাচনের পর ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল—‘চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিপুল বিজয়’। আর দৈনিক আজাদী পত্রিকার শিরোনাম ছিল—‘চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের ধস নামানো জয়’। খবরে বলা হয়, ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
নির্বাচনের পর ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে। তারা কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। যদিও সেসব অভিযোগ পরবর্তী সময় ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিজয় মিছিল বের করা হয়।
পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিতে শহীদ মিনারে যান। বিকেল চারটায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরের বিভিন্ন সড়ক। মিছিলটি নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, লাল দিঘীরপাড় থেকে সন্ধ্যায় আবার শহীদ মিনারে ফিরে যায়। চাকসুর নির্বাচিত নেতারাও যোগ দেন ওই বিজয় মিছিলে। নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিজয়ে একই দিন মিছিল বের হয় কুমিল্লায়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে শত মাইল দূরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আনন্দমিছিল হয়।
সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।আজিম উদ্দিন আহমদ, সাবেক জিএস, চাকসুনির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রধারা, ছাত্রপরিষদ, ছাত্র পরিষদ, ইসলামী যুব সেনা, প্রগতিশীল মানবতাবাদী ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এই বিজয় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থীদের বিজয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন উপসহসভাপতি জিয়াউল আহসান সে সময় বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এ বিজয় সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনা করবে।’
সর্বদলীয় সভা শেষে ছাত্র ঐক্য
চাকসুর পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ফলে ষষ্ঠ নির্বাচনেও ছাত্রশিবির ছিল ‘কনফিডেন্ট’। অর্থাৎ তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে ছাত্রশিবিরের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল ১২টি ছাত্রসংগঠন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।
সে সময় ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ সহজেই তৈরি হয়নি। স্মৃতিচারণা করে চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে একদিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শাহ আলম, বাসদ নেতা বালাগাত উল্লাহ, জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।’
চাকসু ভবন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জয় ম ছ ল ম উদ দ ন হয় ছ ল স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
পিআর পদ্ধতিতে স্থায়ী সরকারব্যবস্থা হয় না: সালাহউদ্দিন আহমদ
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, পিআর পদ্ধতি হচ্ছে একটি পার্মানেন্ট রেস্টলেসনেস, যার মধ্য দিয়ে সব সময় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে। এটা বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ মন্তব্য করেন, পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো স্থায়ী সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় না। কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করা সম্ভব হয় না। একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট থাকে।
আমরা পিআর মানে মনে করি, পাবলিক রিলেশনস। আমরা পিআর মানে মনে করি, জনসংযোগ। এখন সবাই জনসংযোগে আছে। সেই পিআরে আমরা বিশ্বাস করি।—সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতিতে কোনো বিভাজন বিএনপি চায়নি, চায়ও না। সামনেও দলটি এ ধরনের রাজনীতি করবে না। গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবাইকে অংশ নিতে হবে।
আরও পড়ুনপিআর সম্পর্কে ধারণা নেই ৫৬ শতাংশের২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫দেশের মানুষ পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি আরও বলেন, একটা জরিপে ৫৬ শতাংশ মানুষের পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নেই বলে জেনেছেন। আরেক জরিপে দেখেছেন, কোনো একটা দল বলছে, ৭০ শতাংশ লোক পিআর চায়। এই দুই জরিপের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি ৫৬ পার্সেন্ট মানুষ পিআর পদ্ধতি না-ই বোঝে, তাহলে ৭০ পার্সেন্ট মানুষ কীভাবে পিআর পদ্ধতি চায়, সেটি আমাদের বুঝে আসে না।’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা পিআর মানে মনে করি, পাবলিক রিলেশনস। আমরা পিআর মানে মনে করি, জনসংযোগ। এখন সবাই জনসংযোগে আছে। সেই পিআরে আমরা বিশ্বাস করি। যারা প্রোপোশনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ মানে, পার্মানেন্ট রেস্টলেসনেস প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা সফল হবে না।’
আরও পড়ুনপিআর মানে হলো ‘পারমানেন্ট রেস্টলেসনেস’: সালাহউদ্দিন আহমদ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫দেশের জনগণ এখন নির্বাচনমুখী উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে এখন নির্বাচনী আমেজ চলছে। সব প্রার্থী, সম্ভাব্য প্রার্থী এবং জনগণ জনসংযোগে আছেন। এ অবস্থায় কোনো দল যদি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, নির্বাচন অনুষ্ঠান বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাহলে জনগণ তাদের চিহ্নিত করবেন। রাজনৈতিকভাবে তাদের প্রত্যাখ্যান করারও সম্ভাবনা আছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াতে বাধা সৃষ্টি করতে কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করছে। এখানে আন্তর্জাতিক মহলও থাকতে পারে।
আরও পড়ুন‘৭০ ভাগ জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে’১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫