বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক গণবিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ‘সেবা ফাউন্ডেশন’-এর নাম উঠে এসেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার তালিকায়। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া ঠিকানা ও বাস্তবতার মধ্যে মিল নেই। স্থানীয়ভাবে সংস্থাটির কার্যক্রম স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধনের বিষয়ে দাবি বা আপত্তি–সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তির ৪০ নম্বরে আছে সেবা ফাউন্ডেশনের নাম। ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার উত্তর চণ্ডীপাশা এলাকার বাগান বাড়ি। সংস্থাটির নির্বাহী প্রধানের নাম হিসেবে লেখা হয়েছে আলী আমজাদ খান। তিনি ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

আরও পড়ুননির্বাহী পরিচালকের গ্রামের বাড়িতে সংস্থার কার্যালয়, বেশির ভাগ সময় থাকে তালাবদ্ধ৫৭ মিনিট আগে

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কেনার কথা স্বীকার করে আলী আমজাদ খান ‍মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মূলত ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতাম। উপজেলা শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনলেও দলটিতে আমার সদস্য পদ নেই। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের ডাকে আমি সেখানে যাইনি। স্থানীয়ভাবে আমরা ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলি, সে কারণে মনোনয়ন চাইতে দোষ নেই।’

সেবা ফাউন্ডেশনের বিষয়ে আলী আমজাদ বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছাসেবী কিছু কাজ করায় মজিবুর সাহেব আমাকে এটার (সেবা ফাউন্ডেশন) চেয়ারম্যান বানিয়ে রেখেছেন।’

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ঠিকানা ধরে মঙ্গলবার সকালে খোঁজ করা হয় সেবা ফাউন্ডেশনের। নান্দাইল উপজেলার উত্তর চণ্ডীপাশা এলাকায় ‘বাগান বাড়ি’ নামে কোনো মহল্লা পাওয়া যায়নি। তবে উত্তর চণ্ডীপাশা এলাকায় নয়াবাড়ি নামের একটি মহল্লা আছে। সেখানে সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালিত ‘সেবা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’ পাওয়া যায়। ধানি জমির পাশে আধা পাকা ঘরটির অন্য পাশে ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহযোগিতায় নির্মিত হয়েছে ‘বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় গ্রন্থাগার’। স্থাপনাটির এক পাশে নীল রঙের তুলনামূলক ছোট সাইনবোর্ডে লেখা ‘সেবা ফাউন্ডেশন’। সেখানে ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিশা নিশা হাউস, চণ্ডীপাশা (আঠারবাড়ি রোড)। এই স্থাপনাটির একটি অংশ স্কুল ও অপর অংশের একটি কক্ষে সেবা ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে দাবি করেন ফাউন্ডেশনটির মহাসচিব ইউসুফ আকন্দ মজিবুর। তাঁর ভাষ্য, মাস খানিক আগে কক্ষটিতে কার্যক্রম শুরু হয়।

আরও পড়ুনভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থাও, অফিস বাসায়, পরিত্যক্ত ঘরে ৪ ঘণ্টা আগে

স্কুলটির সামনের কাঁচা সড়কের দাঁড়িয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকাটি নয়াবাড়ি হিসেবেই পরিচিত। সেবা ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

ইউসুফ আকন্দ মজিবুর জানান, সেবা ফাউন্ডেশন ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরুর পর ১৯৯৯ সালে সমাজকল্যাণ বিভাগে নিবন্ধিত হয়। পরবর্তী সময়ে এটি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে তালিকাভুক্ত হয়। সংগঠনটি বাংলাদেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী, বেকার যুব ও যুব নারীদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা সহায়তামূলক কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয়।

কক্ষটির একটি অংশে সেবা ফাউন্ডেশনের অনুমোদিত কার্যনির্বাহী কমিটির তালিকায় দেখা যায় ইউসুফ আকন্দ এর মহাসচিব। কিন্তু তাঁর সরবরাহ করা সংস্থাটির প্রোফাইলে নিজের পদবি উল্লেখ করেছেন নির্বাহী পরিচালক। সেখানে কোনো কর্মী না পাওয়া গেলেও ইউসুফ আকন্দ দাবি করেন, তাঁদের ৯ জন কর্মী আছেন। তাঁর ভাগনে রিয়াদ সরকার সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রিয়াদ কার্যনির্বাহী কমিটিরও যুগ্ম মহাসচিবও। এ ছাড়া সংস্থার স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আরও ২১ জন কাজ করেন। সংস্থাটির আর কোনো শাখা না থাকলেও ধানমন্ডি এলাকায় চেয়ারম্যান আলী আমজাদ খানের কার্যালয়কে লিয়াজোঁ অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুনদেশীয় ৭৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনযোগ্য জানিয়ে ইসির গণবিজ্ঞপ্তি২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সেবা ফাউন্ডেশন এককভাবে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন না করলেও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুল মোমেন খান মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন (খান ফাউন্ডেশন) ও ২০১৪ সালে ডেমোক্রেসি ওয়াচের সঙ্গে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে বল দাবি করেন ইউসুফ আকন্দ।

সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আলী আমজাদ খান ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইলেও বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মহাসচিব ইউসুফ আকন্দের ছোট ভাই সাইদুর রহমান উপজেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে ইউসুফ আকন্দ বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। অনেকে মনে করে আমি জামায়াত করি। আমি সংগ্রাম পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করেছি বলে মানুষের এই ধারণা।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমজ দ খ ন পর চ ল ক জ কর উল ল খ র জন ত উপজ ল আওয় ম র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।

পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব  প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি  এখন সারানো  হয়েছে।

ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।  

ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।

ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।  পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’

ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’

ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ