Prothomalo:
2025-10-02@23:51:00 GMT

বীর সাহাবি জারদ ইবনে উমর (রা.)

Published: 30th, September 2025 GMT

মক্কা বিজয়ের পর আশপাশের ভূখণ্ডে বেগবান হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ইসলাম। আরব উপদ্বীপের আপাতবিক্ষিপ্ত গোত্রগুলো দলবদ্ধ হয়ে মেনে নিতে থাকে নতুন এই ধর্ম।

তখন হিজরি নবম অথবা দশম বছর। অন্যদের মতো আবদুল কাইস গোত্রও নবীজি (সা.)-এর কাছে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণ করে। দলটি ছিল ২০ সদস্যের। আরেক বর্ণনামতে ৪০।

দলটি নবীজি (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হলে বাহিনীপ্রধান আগ বেড়ে নবীজিকে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে মুহাম্মদ, আমি আগে থেকেই একটি আসমানি ধর্মাদর্শ অনুসরণ করে আসছি। এখন আপনার আনীত ধর্ম গ্রহণ করতে চাই। আপনি কি আমার পক্ষে কেবল একটা বিষয়ের দায় নিতে পারেন—আমি ইসলাম গ্রহণ করলে পরকালে মুক্তি পাব?’

জবাবে নবীজি (সা.

) বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি এ কথার দায় নিচ্ছি; ইসলাম তোমার পূর্বেকার পালিত ধর্ম থেকে উত্তম।’

হে মুহাম্মদ, আমি আগে থেকেই একটি আসমানি ধর্মাদর্শ অনুসরণ করে আসছি। এখন আপনার আনীত ধর্ম গ্রহণ করতে চাই। আপনি কি আমার পক্ষে কেবল একটা বিষয়ের দায় নিতে পারেন—আমি ইসলাম গ্রহণ করলে পরকালে মুক্তি পাব?

নবীজি (সা.)-এর কথা শুনে দলপতি সঙ্গে সঙ্গে কালিমা পড়ে মুসলিম হয়ে যান। তাঁর দেখাদেখি অন্যরাও ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁদের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে নবীজি খুব খুশি হন। অনেক আপ্যায়ন করেন তাঁদের, সম্মান দেখান। আবদুল কাইস গোত্রের সেই বাহিনীপ্রধানের নাম ছিল জারদ ইবনে উমর (রা.)। তাঁকে আহলে কিতাব সাহাবি মনে করা হয়।

আরও পড়ুনইসলামের প্রথম মেজবান২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জারদ (রা.)-এর প্রকৃত নাম ছিল বাশার। উপনাম মিনজার। জারদ ছিল উপাধি। উপাধিই নাম থেকে বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করে। লোকেরা ভুলে যায় তাঁর প্রকৃত নাম!

ইসলাম গ্রহণের আগে একবার তিনি বকর ইবনে ওয়ায়েল গোত্রের ওপর হামলা করেছিলেন। তাদের সব গবাদিপশু ছিনিয়ে নিয়ে আসেন। ইবনে ওয়ায়েলের লোকদের কাছে একটা সুই পর্যন্ত ছেড়ে আসেননি। ঝেড়েমুছে লুট করেছেন।

ঘটনাটি বেশ সাড়া ফেলেছিল। এর পর থেকে জারদ উপাধিটি নামের সঙ্গে পাকাপাকিভাবে লেগে যায়। কবিরা তাঁকে তাঁদের কবিতায় হিরো হিসেবে উপস্থাপন করতে থাকেন।

এক বর্ণনামতে, তিনি যখন তাঁর বাহিনী নিয়ে নবীজি (সা.)-এর দরবারে হাজির হন, তখন নবীজি তাঁকে বলেছিলেন, ‘জারদ, তুমি আর তোমার গোত্র তো আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছ!’

এ কথা শুনে জারদ (রা.) লজ্জিত হয়ে বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আমি এখন আপনার সেবায় হাজির! ইঞ্জিলে আপনার গুণাবলি আমি পড়েছি। আপনার আগমনী সুসংবাদ দিয়েছেন স্বয়ং ঈসা (আ.)।’

এ বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, জারদ (রা.) লেখাপড়া জানতেন। ইঞ্জিলে পারদর্শী ছিলেন। একজন ভালো কবিও ছিলেন তিনি।

ইসলাম গ্রহণের আগে একবার তিনি বকর ইবনে ওয়ায়েল গোত্রের ওপর হামলা করেছিলেন। তাদের সব গবাদিপশু ছিনিয়ে নিয়ে আসেন। ইবনে ওয়ায়েলের লোকদের কাছে একটা সুই পর্যন্ত ছেড়ে আসেননি।

ইসলাম গ্রহণের পর জারদ ও তাঁর সাথিরা বেশ কিছুদিন মদিনায় অবস্থান করেন। চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলে নবীজি (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আমাদের কিছু সাহায্য করুন।’

জবাবে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এখন তো বাইতুলমাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) শূন্য!’

তাঁরা নবীজির কাছে জানতে চান, ‘আমাদের অঞ্চলে তো অনেক বেওয়ারিশ উট ঘুরে বেড়ায়। সেগুলো কী আমরা নিজেদের করে নিতে পারব?’

জবাবে নবীজি (সা.) বলেন, ‘বেওয়ারিশ উট দখলে নিলে তোমরা জাহান্নামের হকদারে পরিণত হবে!’

তখন অর্থনৈতিক মন্দার সময় ছিল। তাঁদের জন্য কিছুই ব্যবস্থা করা যায়নি। ইসলামই ছিল তাঁদের শ্রেষ্ঠ উপহার। সেই উচ্ছ্বাস নিয়েই তাঁরা নবীজির দরবার ত্যাগ করেন।

আরও পড়ুনইসলামে বন্ধুত্বের গুরুত্ব কতটা১৭ আগস্ট ২০২৫

নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকালের পর খলিফা হন আবু বকর (রা.)। গোটা আরবে তখন শত্রুদের দাপুটে উল্লাস। লোকেরা দলে দলে মুরতাদ হতে থাকে। ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। মক্কা-মদিনার কুরাইশ, মুহাজির ও আনসার এবং বনু সাকিফ ছাড়া এমন একটা গোত্রও ছিল না, যারা এ ফিতনায় অল্পবিস্তর পতিত হয়নি।

এদিকে আবু বকর (রা.) একা দাঁড়িয়ে যান। তাঁর ইমান যেন সটান কাঠামোর মিনারা। শত্রুরা ভড়কে যায়। কিছুদিনের মধ্যে তিনি সব আয়ত্তে নিয়ে আসেন। একে একে ১১টি বাহিনী গঠিত হয়। বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয় তাদের। ইসলাম পরিত্যাগকারীদের কবজা করে ফেলে বাহিনীগুলো।

যদিও তিনি অনেক পরে ইসলাম কবুল করেছিলেন, তবু রাঙিয়ে গেছেন নিজেকে। বর্ণনা করেছেন বেশ কিছু হাদিস। সত্য প্রকাশে উৎসুক একটি মন ছিল তাঁর।

ফিতনায় পতিত হয় আবদুল কায়েস গোত্রও। কিন্তু জারদ (রা.) ছিলেন ইসলামে অটল। তখনো তিনি গোত্রপ্রধান। সবাইকে অনেক করে বোঝান। ইসলামে অটল থাকার কথা বলেন। তাঁর এ আন্তরিক চেষ্টায় মুরতাদ (ইসলাম পরিত্যাগকারী) হওয়া থেকে বেঁচে যায় অনেকে। অন্যরা তাঁর কথা শোনেনি। মুরতাদ হয়ে পড়ে। তাদের প্রত্যেকের পরিণতি ছিল ভয়াবহ। লাঞ্ছিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে একেকজন!

আবু বকর (রা.) আলা ইবনে আল-হাজরামিকে একটি বাহিনীপ্রধান করে বাহরাইনের দিকে পাঠান। হাজরামি বাহিনী সেখানে পৌঁছে মুরতাদদের এমনভাবে শায়েস্তা করেন; তারা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

পরবর্তী সময়ে বসরায় বসবাস শুরু করেন জারদ (রা.)। সেখান থেকে মুজাহিদরা যখন ইরান অভিমুখী হন, তাঁদের সঙ্গী হয়েছিলেন তিনি। ইরানের বিরুদ্ধে ময়দানি লড়াইয়ে এভাবেই অংশ নেন তিনি। তিহামা প্রান্তরে যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হন এই বীর সাহাবি।

যদিও অনেক পরে ইসলাম কবুল করেছিলেন, তবু রাঙিয়ে গেছেন নিজেকে। বর্ণনা করেছেন বেশ কিছু হাদিস। সত্য প্রকাশে উৎসুক একটি মন ছিল তাঁর। একই সঙ্গে ছিলেন সাহসী ও স্বল্পবাক।

সূত্র: রওশন সিতারে, আব্দুল্লাহ ফারানি, পৃষ্ঠা ১৭৬ থেকে ১৮০।

জাবির মাহমুদ: লেখক, অনুবাদক

আরও পড়ুনসাহাবিরা কেন এত সাহসী ছিলেন০৩ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম গ রহণ ম গ রহণ কর কর ছ ল ন আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ