নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতিকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক সং
Published: 30th, September 2025 GMT
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. কামরুল হাসানকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক, ভিত্তিহীন এবং মনগড়া সংবাদ প্রচারের অভিযোগ উঠেছে। তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
সম্প্রতি কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে ‘ফেইক আইডি নিয়ে আলোচনায় মানবজমিনের সাংবাদিক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয় Afnan Raj নামের একটি ফেক আইডি দিয়ে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো.
আরো পড়ুন:
‘সিভিক ডিফেন্ডারস অব বাংলাদেশ’ ওয়েব পোর্টাল উদ্বোধন
খাগড়াছড়ি ইস্যুতে গুজবে সয়লাব সোশ্যাল মিডিয়া: বাংলাফ্যাক্ট
অভিযোগ উঠেছে, একটি রাজনৈতিক দল তাদের নিজেদের এজেন্ডা সাংবাদিক সমিতির সভাপতিকে দিয়ে বাস্তবায়ন করাতে না পেরে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের ভিত্তিহীন, মনগড়া এবং উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে। এছাড়া প্রকাশিত নিউজে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান এবং সাবেক সাংগঠিনক সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের বক্তব্যও ভুলভাবে প্রচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল নেতারা।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান বলেন, “সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. কামরুল হাসানকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে আমার যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তা ভুলভাবে দেওয়া হয়েছে। আমি এভাবে বক্তব্য দেইনি। তার কিংবা সাংবাদিকদের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো ধরণের দ্বন্দ্ব নেই।”
ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, “আমি কোথাও বলিনি যে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান আমার নামে কোনো ধরনের অপপ্রচার করেছে কিংবা Afnan Raj আইডি থেকে আমার বিষয়ে কোনো ধরণের বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. কামরুল হাসান বলেন, “আমি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হওয়ার পর থেকেই একটি রাজনৈতিক দল আমাকে দিয়ে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। আমি সেসব বাস্তবায়ন না করায় তারা আমাকে দায়িত্ব থেকে সরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এই হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য অন্য সাংবাদিকদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে।”
তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ফেইসবুক পেজ এবং গ্রুপে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি এবং ত্রিশাল থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। এসব তথ্য প্রমাণ থাকার পরও আমাকে নিয়ে মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করা হয় এবং আমাকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ট্যাগ দেওয়া হয়।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. কামরুল হাসান ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হন। এরপর তিনি ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন এবং বর্তমানে সাংবাদিক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ।
২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের কারণে তৎকালীন প্রশাসন ও ছাত্রলীগের যোগসাজশে তাকে বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার পায়তারার অভিযোগে ত্রিশাল থানায় অভিযোগ দায়ের করে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটি যাচাই করে দেখা যায় ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতেই তার নাম নেই এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে তার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
কামরুল হাসানের পরিবার দীর্ঘ ১৭ বছরের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কামরুল হাসান একজন সংবাদকর্মী ও আন্দোলনকারী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এর ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে তাকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়।
ঢাকা/মুজিবুর/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব দ প রক শ ছ ত রদল র উদ দ শ য
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ
আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।
সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।
এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।
সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।
৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’
কারা আছে তালিকায়দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।
দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।
১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।
২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।
কীভাবে এই মূল্যায়ন৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।
ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।
এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;
কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;
কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;
সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;
কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।