দেশে ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে
Published: 30th, September 2025 GMT
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভোগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ বলেছেন, “বাংলাদেশে কম বয়সী শিশুদের সামগ্রিক পুষ্টি পরিস্থিতি এখনও আশঙ্কাজনক। শিশু ও নারীদের মধ্যে ভিটামিন, আয়রন, জিঙ্ক ও আয়োডিনের ঘাটতি ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে।”
তিনি বলেন, “অন্যদিকে নারীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ জিঙ্ক এবং ৪২ শতাংশ আয়োডিন ঘাটতিতে আক্রান্ত। অপুষ্টি ও ভিটামিন-খনিজ ঘাটতি বর্তমানে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই লবণ ছাড়াও অন্যান্য খাবারে এসব পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধকরণ (ফর্টিফিকেশন) জরুরি হয়ে পড়েছে।”
আরো পড়ুন:
পায়রা নদীর তীর থেকে শিশুর মরেদেহ উদ্ধার
রাজশাহীতে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় ‘বাংলাদেশে খাদ্য সমৃদ্ধকরণের (ফুড ফর্টিফিকেশন) গুরুত্ব’ শীর্ষক এক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। বাকৃবির কৃষি অনুষদীয় সম্মেলন কক্ষে কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাকৃবির প্রফেসর মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার (পিএমএইচসিএল) এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (জিএআইএন)।
মূল প্রবন্ধে ড.
তিনি করেন, “এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই বাধ্যতামূলক খাদ্য সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালু করেছে। যেমন— চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় লবণে আয়োডিন সমৃদ্ধকরণ চালু রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে গমের আটা, তেল, চাল ও চিনি সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো কেবল লবণ আয়োডিনেশন কার্যকর রয়েছে। গমের আটা বা অন্যান্য খাদ্যে সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।”
পিএমএইচসিএল-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. শরিফুল হক ভূঁইয়া।
কর্মশালায় ‘বাংলাদেশে বৃহৎ আকারের ফুড ফর্টিফিকেশন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিএআইএন-এর লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন অ্যান্ড ভ্যালু চেইনের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ।
তিনি বলেন, “খাদ্য সমৃদ্ধকরণের জন্য আমাদের দেশে কোনো কেন্দ্রীয় হাব নেই। আমরা বর্তমানে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ায় এ নিয়ে কাজ করছি। গবেষণার জন্য দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেওয়া হয়েছে, যার একটি হলো বাকৃবি। আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফর্টিফিকেশন নয়, বরং বায়োফর্টিফিকেশন নিয়ে কাজ করছি। বায়োফর্টিফিকেশন সমৃদ্ধ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ডাল জাতীয় ফসলে জিঙ্ক ও আয়রন সমৃদ্ধ করার কাজ চলছে।”
তিনি আরো বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে তেলে ভিটামিন-এ এবং লবণে আয়োডিন যোগ করা হচ্ছে। তবে সাধারণ ভোক্তা আসলে কতটুকু ভিটামিন-এ ও আয়োডিন পাচ্ছেন, সেটিও গবেষণার বিষয়।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “খাদ্যের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধকরণের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে জাতিকে সচেতন করা জরুরি, যাতে সবাই সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে। সচেতনতার অভাবে আজ অনেক মানুষ ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ নানা মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ উদ্যোগকে সফল করতে আমার পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্য পুষ্টিগুণ বিষয়ে সচেতনতা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। তবে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প আলাদা আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পরিবর্তে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা হলে ফলাফল আরো দ্রুত ও কার্যকর হবে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ ধ কর আয় ড ন
এছাড়াও পড়ুন:
শেষ হলো এক ছাদের নিচে ৩ খাতের প্রদর্শনী
দেশের আবাসন, নির্মাণ, পানি ও বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আজ শনিবার শেষ হয়েছে। এতে ২০ দেশের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান এক ছাদের নিচে তিন খাতের প্রায় সব ধরনের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেছে।
প্রদর্শনীটির আয়োজন করে সেমস গ্লোবাল। এতে ওয়ালটন, এসিআই, রহিমআফরোজ, ওমেরা, এসএসজিসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো তাদের সর্বশেষ পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেছে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী প্রতিদিনই ব্যবসায়ী, গ্রাহক ও দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় বলে জানান আয়োজকেরা।
আজ প্রদর্শনীতে গিয়ে স্টলগুলোতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা দেখা যায়। সবাই ক্রেতা–দর্শনার্থীকে নিজেদের পণ্যসেবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। একই সঙ্গে আগ্রহীদের নাম, মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখছিলেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আয়োজকেরা জানান, প্রদর্শনীতে সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক বুথ ও আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়ন ছিল।
ওয়ালটনের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তাদের নতুন কেব্ল পণ্য প্রদর্শন করছে। এ বছরের জানুয়ারিতে কেব্লের ব্যবসায়ে আসে দেশীয় টেক ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠানটি। এখন দেশের বাজারের পাশাপাশি ৭টি দেশে কেব্ল রপ্তানি করছে বলে জানান ওয়ালটনের বিপণন কর্মকর্তা ইদ্রিস মোল্লা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ সাত দেশে আমাদের পণ্য যাচ্ছে। আমাদের পণ্যের মধ্যে এলিভেটর এবং ক্রেনে ব্যবহার করার কেব্ল রয়েছে। তা ছাড়া ফায়ার অ্যালার্ম কেব্লও আছে আমাদের।’ প্রদর্শনীতে তাদের লিফটও দেখছেন ক্রেতারা।
এসিআইয়ের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, দেশের ভ্রমণপিপাসুদের কথা চিন্তা করে পোর্টেবল এসির প্রদর্শনী করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে যাঁরা তাঁবু টাঙিয়ে ক্যাম্প করতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য ৫ থেকে ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তাঁবুর পরিবেশ ঠান্ডা এ গরম করার ব্যবস্থা থাকবে। দেড় ঘণ্টার চার্জে এটি টানা ৮ ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে। তবে পণ্যটি এখনো বাজারে আসেনি। তাই এর দাম সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী নাবিল মোর্শেদ। প্রথম আলোকে তিনি জানান, পণ্যটি চীনে ব্যাপক চলছে। চায়না ইকো ফ্লো কোম্পানির একক পরিবেশক হিসেবে দেশের বাজার যাচাই করার জন্য প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে ১৫ কেজি ওজনের যন্ত্রটি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি চীনের তৈরি ৫০০ ওয়াটের ১ ঘণ্টা ব্যাকআপের আইপিএস প্রদর্শনীতে নিয়ে আসে। এটির দাম ৭৭ হাজার ৯০০ টাকা।
সুপার স্টার কোম্পানি সৌরচালিত সেচপাম্প প্রদর্শনীতে নিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা জানান, খরচ কমে আসায় এখন কৃষিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এই সোলার পাম্প।
ওমেরা সোলার তাদের তৈরি সোলার প্যানেল নিয়ে আসে। ওমরা সেলারের প্রধান ডিজাইনার আমির হামজা প্রথম আলোকে জানান, এখন দেশের বাজারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় তাদের সোলার প্যানেল রপ্তানি হচ্ছে। দেশের মধ্যে পাহাড়ি এলাকায় ছোট আকারের সোলার প্যানেল বেশি বিক্রি হচ্ছে।
প্রদর্শনীর আবাসন অংশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রকল্পগুলো নিয়ে আসে। তাদের আবাসিক ভবন ছাড়াও বিভিন্ন হোটেল এবং রিসোর্টে বিনিয়োগের জন্য ক্রেতা–দর্শনার্থীদের নানা অফার দিতে দেখা যায়। কুয়াকাটায় পাঁচ তারকা মানের হোটেল তৈরি করছে ম্যানগ্রোভ ইকো রিসোর্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ৫০ শতাংশ শেয়ারের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার ইউনিটের মালিকানা বিক্রি করছে তারা। ৪ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকায় এই হোটেলের মালিকানা নেওয়ার অফার করা হয় প্রদর্শনীতে।
প্রদর্শনীর পানির অংশে বিভিন্ন পণ্যের সমাহার দেখা যায়। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অফিস কিংবা কারখানার সুপেয় পানি বিশুদ্ধকরণের নানা প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছিল বিভিন্ন কোম্পানি। ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানগুলো।