ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে কুষ্টিয়ার চাঁদ মানব উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এই সংগঠনটি। প্রতিবন্ধীদের হুইলচেয়ার দেওয়া, রোজাদারদের ইফতার করানো, বন্যায় ত্রাণ বিতরণের মতো স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করে তারা। সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ নেই প্রতিষ্ঠানটির।

যদিও নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালায় বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং নিবন্ধিত গঠনতন্ত্রের মধ্যে এ বিষয়সহ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে তথ্য প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণের অঙ্গীকার রয়েছে, কেবল সেসব বেসরকারি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে।

নিজের সংগঠন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নিবন্ধন পেয়েছে, তা জানতেন না এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কামরুজ্জামান। গত রোববার বিকেলে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক সেখানে গেলে তিনি প্রথম জানতে পারেন নিবন্ধনের কথা। কামরুজ্জামান পাশের জেলা রাজবাড়ীর পাংশার মাছপাড়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। চাঁদট গ্রামে বাড়ি হলেও তিনি থাকেন খোকসা উপজেলা শহরে।

আরও পড়ুনভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থাও, অফিস বাসায়, পরিত্যক্ত ঘরে ৮ ঘণ্টা আগে

কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের চাঁদট বাজারে একটি দোকান মাসিক ১ হাজার ৩০০ টাকা ভাড়া নিয়ে চাঁদ মানব উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এক কক্ষের ছোট্ট এই ঘরে চাঁদ পাঠগার নামে একটি পাঠাগারও পরিচালিত হয়। সংস্থায় ৩১ সদস্যের কমিটি আছে। এর মধ্যে ৯ সদস্যের পরিচালনা পরিষদ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারের ভেতরে দোকানের সঙ্গে একপাশে চাঁদ মানব উন্নয়ন সংস্থার ৩ ফুট বাই ২ ফুটের একটি সাইনবোর্ড টাঙানো। আরেক পাশে পাঠাগারের সাইনবোর্ড লাগানো। প্রতিদিন বিকেলে সাটার খুলে সেখানে পাঠাগারের কার্যক্রম চলে। কামরুজ্জামান মাঝেমধ্যে সেখানে যান। বিকেলে পাঠাগার খোলা হয়। গ্রামের ছাত্রছাত্রী ও দু–একজন কৃষকও পাঠাগারে আসেন। মূলত সন্ধ্যার পর পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সংস্থার আর কোনো শাখা অফিস নেই।

জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার এবং উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে গড়াই নদের তীরে চাঁদট বাজারে চাঁদ মানব উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়। বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের সব দোকানই তখন বন্ধ,। সুনসান নীরবতা। সংস্থার কার্যালয়ও তালা লাগানো ছিল।

স্থানীয় তিন–চারজন বাসিন্দা জানান, বিকেলের দিকে কয়েকজন তরুণ এসে পাঠাগার খুলে পড়াশোনা করেন। তৈবুর রহমান নামের এক তরুণ বলেন, বিনা মূল্যে হুইলচেয়ার বিতরণ করা হয়। ত্রাণ দেওয়া হয়। বিকেলে সাধারণত খোলা হয়। কামরুজ্জামান এটার পরিচালক। পাঠাগারে অনেক বই আছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে।
আবদুল মালেক নামের এক বৃদ্ধ জানান, ছেলেরা কয়েকবার প্রতিবন্ধীদের হুইলচেয়ার দিয়েছে। রোজার সময় ইফতার করায়। রাস্তাঘাট ভেঙে গেলে নিজেদের শ্রমে সংস্কার করে।

গ্রামের আরেক বৃদ্ধ তোবারেক আলী বলেন, ‘কামরুল (কামরুজ্জামান) নামের ছেলেটিই এসব করে। সেই বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে জোগারটোগার করে এসব করে। মানুষ উপকারও পাচ্ছে।’

আরও পড়ুননির্বাহী পরিচালকের গ্রামের বাড়িতে সংস্থার কার্যালয়, বেশির ভাগ সময় থাকে তালাবদ্ধ৪ ঘণ্টা আগে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী নিজের দোকানের তালা খুলতে খুলতে বলেন, কামরুজ্জামান দল করেন না। আরও যাঁরা আছেন, তাঁদের পরিবারের এক-দুজন বিএনপি–জামায়াত সমর্থন করেন। তবে কেউ কোনো দলের মিছিল–মিটিংয়ে যান না।
ফেরার পথে খোকসা শহরে পাওয়া গেলে সংস্থার প্রধান প্রভাষক কামরুজ্জামানকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের জনবল বলতে ৯ জন, বড় ফান্ডও নেই। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সংস্থার পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই। তিনি নিজেও পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন না। তবে কলেজ থেকে ছুটি পেলে করবেন। তাঁদের কোনো জনবল নেই।

কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞাপন দেখে ২০০ টাকা ব্যয় করে অনলাইনে ফরম পূরণ করেছিলেন। যদি হয়। তখন তো সবই ছিলেন অনিশ্চিত। এখন যখন হয়েই গেছে, অন্য সব সংস্থার সঙ্গে মিল রেখে স্বেচ্ছাশ্রমে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করবেন। নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষকদের কোনো প্রকার সম্মানী দেবে না বলে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছিল।

কামরুজ্জামান আরও বলেন, ইতিমধ্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোক তাঁদের অফিস ঘুরে গেছেন। তাঁদের সক্ষমতা যাচাই করেছেন। নিবন্ধন পাওয়াটা অনেক জটিল প্রক্রিয়া ছিল। যেসব যোগ্যতায় নিবন্ধন পাওয়া যায়, তার সবগুলোই তাঁদের সংস্থার আছে বলেও তিনি মনে করেন।

আরও পড়ুনসংস্থার কার্যালয় পরিত্যক্ত, ঝোপঝাড়ে ঘেরা টিনশেডে ভিমরুলের চাক২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর চ ল ত হয় ন বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা

কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’

সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।

সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে

সম্পর্কিত নিবন্ধ