বৃদ্ধা মাকে তালাবদ্ধ করে ৮ দিন ধরে নির্যাতন করলো দুই ছেলে, উদ্ধার
Published: 30th, September 2025 GMT
সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক বৃদ্ধা মাকে (৮০) আট দিন ধরে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ রেখে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া (নুরু মেম্বারের পুল) এলাকায়। খবর পেয়ে ভুক্তভোগীর অন্য সন্তানেরা মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) স্থানীয়দের সহায়তায় তালা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই মা কদবানু তার দুই ছেলে জায়নাল হোসেন ও গুলজার হোসেনের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বৃদ্ধা কদবানু বলেন, নিজের সন্তানরা আমার সাথে এমন অমানবিক আচরণ করল আমি সুষ্ঠু বিচারের আশায় অনেক কষ্ট করে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
আমি আর কারো কাছে কিছু চাই না, আল্লাহর কাছে এর বিচার চাই। তিনিই তো সত্যিকারের বিচারক। তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, এমন সন্তান যেন আর কোনো মায়ের গর্ভে জন্ম না নেয়।
এলাকাবাসী জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই কদবানুর সঙ্গে তার ছেলেদের জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরেই তার দুই ছেলে তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেয়। মঙ্গলবার সকালে ঘর থেকে বৃদ্ধার কান্নার শব্দ শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে কদবানুর অন্য সন্তানরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসে ঘরের তালা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন এবং থানায় নিয়ে যান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত জায়নাল ও গুলজার দীর্ঘদিন ধরে তাদের অন্য ভাই-বোনদের জায়গা-সম্পত্তি ও টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে আসছিল। মা কদবানু এতে বাধা দিলে তারা তার ওপর বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত এবং অন্য ছেলেমেয়েদেরও হুমকি দিত।
এরই ধারাবাহিকতায় তারা তাকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নিজ বাড়িতেই একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহুরুল ইসলাম জানান, অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনূর আলম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই অমানবিক ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ সন ত ন
এছাড়াও পড়ুন:
১২ দিনের নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত
জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে ১ থেকে ১২ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে একই দাবিতে সেপ্টেম্বর মাসে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল দলটি।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে ছাত্রলীগ কর্মীর ছুরিকাঘাতে জামায়াতের যুব বিভাগের নেতা নিহত
ক্ষমতায় গেলে কাউকে দাবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না: জামায়াতের আমির
পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জামায়াত ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো-
৫ দফা দাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে গণসংযোগ। এ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা। গোলটেবিল বৈঠক। সেমিনার ইত্যাদি।
এছাড়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০ অক্টোবর রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ।
যে পাঁচ দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো হলো-জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা। ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরাল ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি' হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াত ইতোমধ্যে সরকারের কাছে দুটি প্রস্তাব করেছে।
প্রথমত, জুলাই জাতীয় সনদের জন্য ‘সংবিধান আদেশ' জারি করা। দ্বিতীয়ত, এই সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে গণভোট করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, সেটা না হলে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ছাড়া ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করতে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে জানিয়েছে জামায়াত।
জামায়াতের এর আগে ঘোষণা করা পাঁচ দফা জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। তাই জনগণের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান, মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ