টিনশেডে তিন কক্ষের ইসিয়াও আছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের যোগ্য তালিকায়
Published: 30th, September 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভ ফর সোসিও ইকনোমিক এ্যাকটিভিটি (ইসিয়া)। ইসিতে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাসনা গ্রামে।
নির্বাচন কমিশন ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের ৭৩টি সংস্থার নাম-ঠিকানাসহ যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, সেই তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনভিজ্ঞ এবং নাম সর্বস্ব কিছু সংস্থা। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রাতিষ্ঠানিক পূর্ব অভিজ্ঞতা বা সংযোগ না থাকলেও ইসির নিবন্ধনযোগ্য তালিকায় রয়েছে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম খাতে নিবন্ধিত সংস্থা ইসিয়া।
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরায় নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে পরামর্শ সভা
পূজার ছুটির পর গকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিষেক
দুই দিন ইসিয়ার দুটি ঠিকানায় ঘুরে সংস্থাটির কার্যক্রম ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থাকা, না থাকার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, আগে অন্য সংস্থার হয়ে দুটি জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে ধামরাই উপজেলার বাসনা এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের কাছে ইসিয়া নামে সংস্থাটির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। স্থানীয়রা বাসনা বাসস্ট্যান্ডের একটি মার্কেটে প্রতিষ্ঠানটি ছিল বলে তথ্য দেন।
স্থানীয়দের দেওয়া ঠিকানা অনুসারে ওই মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, পাকা দেয়ালের টিনশেডের মার্কেটটির একটি অংশে রয়েছে চায়ের দোকান। পাশাপাশি আরেক অংশের সাঁটার বন্ধ।
পাশের চা-বিক্রেতা বেলায়েত হোসেনের কাছে মার্কেটের দোকানগুলোতে কার কী কাজ, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্ধ থাকা দোকানটিতে বেকারির বিস্কুট বিক্রি হয়। পাশে দোকানটিতে চা বিক্রি করা হয়।
ইসিয়া সম্পর্কে বেলায়েত হোসেনের তার স্মৃতি হাতড়ে যে তথ্য দিলেন, সে অনুযায়ী বছর দশেক আগে এখানে ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভ ফর সোসিও ইকনোমিক এ্যাকটিভিটির কার্যালয় ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ঋণ দিত, টয়লেটের সামগ্রী দিত।
ইসিয়া সম্পর্কে আরো খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে ধামরাই উপজেলার সানোড়া ইউনিয়নের বাসনা গ্রামের বাসনা বাসস্ট্যান্ডে একটি আধাপাকা টিনশেড ঘরের ঠিকানায় নিবন্ধন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইসিয়ার কার্যক্রম পরিচালনা হয় ওখানেই। এরপর সংস্থাটির কার্যালয় স্থানান্তর করা হয় বাথুলি এলাকায়। তবে নিবন্ধনের ঠিকানা হিসেবে সেটি আর হালনাগাদ করা হয়নি।
সোমবার বাসনায় ঘুরে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বাথুলি এলাকায় গিয়ে পাওয়া যায় ইসিয়ার কার্যালয়। এর ঠিক অবস্থান হলো বাথুলি বাজার-নবগ্রাম সড়কের বাথুলি বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কিবরিয়া বেকারির পাশে বাঁয়ে আতাব আলীর বাড়িতে। এখানে তিন কক্ষবিশিষ্ট টিনের ঘরে ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভ ফর সোসিও ইকোনমিক এ্যাকটিভিটির (ইসিয়া) কার্যালয়।
সেখানে সড়কের পাশেই সীমানা দেয়ালে ইসিয়ার একটি দুই ফুট বাই দুই ফুট সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। সীমানার ভেতরে ঢুকে বাঁ দিয়ে এগিয়ে পূর্ব দিকে একটি পাকা টিনের চৌচালা বাড়ি। এর তিনটি কক্ষ নিয়ে ইসিয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
কার্যালয়ের ডানের প্রথম কক্ষটিতে চারটি টেবিল, একটি লকার রয়েছে। ক্রেডিট অফিসারা বসেন এখানে। ইসিয়ার ঋণগ্রহীতা ও পরিশোধকারী সদস্যরাও এখানে বসেন। মাঝের কক্ষটি প্রধান নির্বাহীর কার্যালয়। একটা টেবিল, কম্পিউটার, একটি আলমারি রয়েছে। ইসিয়ার কর্মকর্তারা জানালেন, বাঁয়ের সবশেষ কক্ষটি কর্মরতদের খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করা হয়। বিকালের পর হিসাবপত্রের কাজের জন্যও কক্ষটি ব্যবহার করা হয়।
এই কার্যালয়ের শাখা ব্যবস্থাপক মো.
ইসিয়ার পরিচালনায় সাত সদস্যের কমিটি রয়েছে। এরমধ্যে চারজনের নাম জানাতে পেরেছেন কর্মরতরা। তারা হলেন: এনজিও কর্মকর্তা ফজলুর রহমান, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা আওলাদ হোসেন, স্কুল শিক্ষক জিয়া উদ্দিন ও এনজিও কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম।
এই কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর ইসিয়ার কার্যালয় ছিল পার্শ্ববর্তী সানোড়া ইউনিয়নের বাসনা এলাকায়। তবে ২০১৭ সালে কার্যালয় স্থানান্তরিত হয় বাথুলি এলাকায়। বর্তমানে এখানেই ক্ষুদ্র ঋণের কাজ করেন তারা। সদস্যদের ঋণপ্রদান ও অর্থ উত্তোলনের কাজ করা হয় কার্যালয় থেকে। অবশ্য চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প, থেরাপি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রমও এখান থকে পরিচালনা করা হয়।
ইসিয়ার ঠিকানার বিষয়ে কথা হয় প্রধান নির্বাহী আব্দুল আজিজের সঙ্গে। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন যখন করা হয়, তখন ওই ঠিকানা (বাসনার ঠিকানা) ছিল। পরে সমাজসেবা, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় নতুন ঠিকানা দেওয়া হয়। কিন্তু রেজিষ্ট্রেশনের ঠিকানা তো একই রয়ে গেছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা আছে কিনা, জানতে চাইলে আব্দুল আজিজ বলেন, আমি ২০১৮, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি। তখন আমি অন্য সংস্থায় ছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা আছে।
ইসিয়ার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে তাদের নাম দিয়ে গুগলে সার্চ দিয়ে একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা পাওয়া যায় এমন: yisea.yolasite.com। যার হোম পেজে শুধু লেখা, To Log in our New Website Click below… www.yisea.x10.mx। তবে এই ঠিকানায় ক্লিক করে প্রবেশ করা যায় না। গুগল ঘেঁটে দেখা গেল, ইসিয়ার ওয়েব অ্যাড্রেসে যে ইয়োলা লেখা রয়েছে, এটি একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরির অনলাইন প্ল্যাটফর্মের নাম। তবে অকেজো এই ওয়েবসাইট-ই ইসিয়ার কিনা, তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
২৭ সেপ্টেম্বর গণবিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানায়, নিবন্ধনযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারো দাবি বা আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তা আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে ইসি বরাবর লিখিতভাবে জানাতে হবে। এরপর দাবি-আপত্তি নিয়ে শুনানি শেষে পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমানে দেশীয় কোনো সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে ইসিতে নিবন্ধিত হতে হয়। গত ১৮ জুলাই আগের নিবন্ধিত ৯৬টি স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার সবগুলোর নিবন্ধন বাতিল করার কথা জানায় ইসি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি নতুন করে পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশকে যার অগ্রগতি বলা যায়।
অবশ্য এরই মধ্যে কিছু নামসর্বস্ব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে। যার মধ্যে অগ্রযাত্রা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা একটি। তালিকায় ২৯ নম্বরে থাকা সংস্থাটির ঠিকানায় বলা হয়েছে, সিন্দুরমতি, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম। এই নামে একটি সংস্থার কিছু কাজ আগে ছিল, তবে এখন কোনো কার্যক্রম এখন নেই। একসময় প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা ও নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করত তারা।
নাম সর্বস্ব এমন আরেকটি প্রতিষ্ঠান চাঁদ মানব উন্নয়ন সংস্থা। এর অবস্থান কুষ্টিয়া জেলার বেতবাড়িয়ার চাঁদট বাজারে। এমন আরো সংস্থা রয়েছে, যারা ছোট পরিসরে এক কক্ষ, দুই কক্ষের অফিস নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করে এসব প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করেছে কিনা, সে বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থাগুলোর প্রকৃত তথ্য পাওয়ার উদ্দেশ্যেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। কোনো সংস্থা সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া হাতে এলে তাদের বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঢাকা/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইস ইস স প ট ম বর কর মকর ত র ন বন ধ পর চ ল এল ক য় ক জ কর র ব সন
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।