মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা ‘শান্তি’ প্রস্তাবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়টি অস্পষ্টভাবে এসেছে। অথচ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য যুগের পর যুগ ফিলিস্তিনিরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য বিশ্বজনমত জোরদার হয়েছে। এমনকি ইসরায়েলের মিত্র বলে পরিচিত দেশগুলোও ফিলিস্তিনিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে।

হোয়াইট হাউসে গত সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এরপর নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্য ২০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। এতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ‘অস্পষ্টতা’ এবং প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত না থাকায় এ পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও ট্রাম্প তাঁর প্রস্তাবের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে তিন থেকে চার দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন। না হলে হামাসের চরম পরিণতি হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।

এদিকে ট্রাম্পের ‘শান্তি’ প্রস্তাবের পরও গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজায় প্রতি মিনিটে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল হামলায় ৪২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনইসরায়েলের প্রতি মার্কিনদের সমর্থন নাটকীয়ভাবে কমছে: টাইমস/সিয়েনা জরিপ১২ ঘণ্টা আগেপ্রস্তাবে অস্পষ্টতা

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে শর্ত সাপেক্ষে এবং অস্পষ্টভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনা ঘোষণার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘কয়েকটি মিত্রদেশ “বোকার মতো” ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে…তারা সত্যিই এটা করেছে। কারণ, আমি মনে করি যা ঘটছে, তাতে তারা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।’

এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবে গাজার উন্নয়ন এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) ‘সংস্কার’কে শর্ত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি তারপরও একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের আলোচনা শুরু ‘হতে পারে’ কিনা নিশ্চিত নয়।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে অস্পষ্টতার বিষয়টি নেতানিয়াহুর বক্তব্যেও এসেছে। দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, নেতানিয়াহু তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন, সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তখন নেতানিয়াহুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে তিনি একমত হয়েছেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, কোনোভাবেই নয়।’ তিনি বলেন, ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা প্রস্তাবে এ ধরনের কিছু নেই।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অস্পষ্টভাবে রয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা শান্তি পরিকল্পনায় আসলেই কি ট্রাম্প আর নেতানিয়াহুর সমঝোতা হয়েছে১৫ ঘণ্টা আগে

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নেতানিয়াহুর সাংঘর্ষিক বক্তব্য এবং তাঁর সরকারে অতি রক্ষণশীল শরিকদের অবস্থানের কারণে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোনো কঠিন হবে। আর শেষ পর্যন্ত হামাস অতীতের মতো ‘মেনে নিয়েছি, তবে কথা আছে’—এ ধরনের জবাব দিলে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যদি উভয় পক্ষ (ইসরায়েল ও হামাস) প্রস্তাব মেনে নেয়, তবে যুদ্ধ মুহূর্তেই থেমে যাবে। গাজায় আটক সব জীবিত ও মৃত জিম্মিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে আর ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে। নতুন ব্যবস্থায় গাজা শাসনের দায়িত্ব নেবে একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট সরকার, যার তত্ত্বাবধানে থাকবে আন্তর্জাতিক একটি পর্ষদ (বোর্ড অব পিস)। সেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। ইসরায়েলও গাজা দখল করবে না বা এই ভূখণ্ডকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করবে না।

ইউরোপ, রাশিয়া, চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক, ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশ এবং ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতার দায়িত্বে থাকা মিসর ও কাতার ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। যদিও একই সঙ্গে এখনই এই প্রস্তাবের সাফল্য নিয়ে আশাবাদী না হওয়ার কথা বলছে কাতার।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘সব পক্ষকে’ ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মহাসচিবের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক এক বিবৃতিতে গুতেরেসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এই সংঘাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া ব্যাপক ভোগান্তি লাঘব করা।’ গুতেরেস আশা প্রকাশ করেন, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

আরও পড়ুনট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা, এটা আরেকটা ধোঁকাবাজি নয়তো২১ ঘণ্টা আগেপ্রস্তাব নিয়ে হামাসের অবস্থান

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে হামাস যুক্ত ছিল না। এই পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্র করার কথা বলা হয়েছে, যা হামাস এর আগেও প্রত্যাখ্যান করেছে।

হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, এই পরিকল্পনা ‘সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট’ এবং এর মাধ্যমে হামাসকে নির্মূল করার ‘অসম্ভব শর্ত’ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আলোচনা সম্পর্কে অবহিত এক কর্মকর্তা গতকাল রয়টার্সকে বলেন, হামাসের আলোচকেরা ‘সদিচ্ছা নিয়ে এটি পর্যালোচনা করবেন এবং এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাবেন’।

প্রস্তাবের বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, হামাস কর্মকর্তারা সোমবার রাতে পুরো পরিকল্পনাটি হাতে পেয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা ‘দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পর্যালোচনার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল তাঁদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

মাজেদ আল-আনসারি আরও বলেন, সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে আগবাড়িয়ে আশাবাদী হওয়া ঠিক হবে না। তবে তিনি বলেন, পরিকল্পনাটিতে ‘সার্বিক বিষয় স্থান পাওয়ায়’ কাতার এ নিয়ে ইতিবাচক।

তবে কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান বারাকাত আল-জাজিরাকে বলেছেন, ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা ‘সমস্যাজনক’ এবং হামাসের জন্য এটি গ্রহণ করা হবে একেবারেই ‘অবিবেচকের কাজ’।

বারাকাত বলেন, এই পরিকল্পনার শুরুতেই হামাসকে তাদের সব চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার এমন এক পক্ষের কাছে ছেড়ে দিতে হবে, যাদের তারা বিশ্বাস করে না। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প যেভাবে নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে পরিকল্পনাটি ঘোষণা করেছেন, তা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে প্রস্তাবটি ইসরায়েলের স্বার্থের দিকেই বেশি ঝুঁকে আছে।

আরও পড়ুনগাজায় ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা পরিকল্পনায় কী আছে২২ ঘণ্টা আগেসময় বেঁধে দিয়েছেন ট্রাম্পডোনাল্ড ট্রাম্প.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব র ইসর য় ল র জন য ব ষয়ট গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ