যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি কার্যক্রমে শাটডাউন শুরু হয়েছে। মার্কিন সিনেট মঙ্গলবার প্রশাসনের তহবিল সংক্রান্ত বিল অনুমোদন করতে না পারায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অচলাবস্থার কবলে পড়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১২ থেকে (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ১০টা) ‘শাটডাউন’ শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। শাটডাউন এড়ানোর জন্য মঙ্গলবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বৈঠক করেছিলেন সিনেটের ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান সদস্যেরা। কিন্তু তহবিল নিয়ে একমত হতে পারেননি তারা। 

আরো পড়ুন:

বাজেট নিয়ে অচলাবস্থা, শাটডাউনের পথে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন ‘আগ্রাসনের’ হুমকি, জরুরি অবস্থা জারি করতে প্রস্তুত ভেনেজুয়েলা

১ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থবর্ষ শুরু হয়। চলে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেই হিসাবে মঙ্গলবারই ছিল চলতি অর্থবর্ষের শেষ দিন। মার্কিন সরকারের জন্য বরাদ্দ তহবিলের মেয়াদ ওই দিনই শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন বিলের জন্য একমত হতে পারেননি সিনেটের রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট সদস্যেরা। বিলটি ৪৩-৫৩ ভোট পাওয়ায় সিনেটে অনুমোদিত হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে মোট সদস্য সংখ্যা ১০০। সরকারি তহবিল সংক্রান্ত বিল পাস করাতে হলে তার পক্ষে অন্তত ৬০টি ভোট প্রয়োজন হয়। সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩। যে কোনো বিল পাস করাতে অন্তত সাত জন ডেমোক্র্যাটের সমর্থন তাদের প্রয়োজন হয়। সরকারি তহবিল সংক্রান্ত বিলে তা হয়নি। সেই কারণে সিনেটের অনুমোদনও মেলেনি।

সিএনএন জানিয়েছে, ব্যয় বাজেট গঠনকারী ১২টি বিলের কোনোটিই এখনও সংসদের দুই কক্ষে পাস হয়নি। ফলে ‘শাটডাউন’টি হতে চলেছে ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’।

মার্কিন সরকারে শাটডাউন শুরু হওয়ার ফলে সরকারের যে সব বিভাগের কাজ জরুরি পরিষেবার তালিকায় পড়ে না, সেই বিভাগগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। হাজার হাজার সরকারি কর্মীর বেতন সাময়িকভাবে বন্ধ হবে। বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক, নিরাপত্তাজনিত প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হবে। মার্কিন সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী এবং এয়ার ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণকারীদের কাজ করে যেতে হবে। ‘শাটডাউন’ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত বেতন পাবেন না তারা। ছোটখাটো ব্যবসার জন্য ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

কত দিন এই ‘শাটডাউন’ চলতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। এর আগে ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম দফায় মার্কিন প্রশাসন ৩৫ দিনের জন্য অচল হয়ে পড়েছিল। এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সেটাই সবচেয়ে বড় ‘শাটডাউন’। সে সময় লাখো সরকারি কর্মী বেতন ছাড়াই কাজ করেছেন বা সাময়িক ছুটিতে গিয়েছিলেন। সরকারি সেবায় ভরসা করা ব্যবসা, ঠিকাদার, এমনকি সাধারণ নাগরিকরাও ভোগান্তির শিকার হয়েছিলেন।

তহবিল সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি না-হওয়ায় ডেমোক্র্যাটদেরই দোষারোপ করছেন ট্রাম্প। তিনি ইতিমধ্যে গণছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়ে রেখেছেন। বলেছেন, ‘‘শাটডাউনের অনেক ভালো দিকও রয়েছে। আমরা যেগুলো চাই না, তেমন অনেক জিনিস ফেলে দিতে পারি। অনেককে ছাঁটাই করা হবে। তারা প্রত্যেকেই হবেন ডেমোক্র্যাট।’”

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র তহব ল স ক র ন ত য ক তর ষ ট র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে চিপ উৎপাদন কারখানা স্থানান্তর করবে না তাইওয়ান

তাইওয়ানের চিপ উৎপাদনের অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরের কথা থাকলেও সেই প্রতিশ্রুতি মানছে না তাইওয়ান। চিপ উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল। তাইওয়ানের বড় চিপ তৈরির প্রতিষ্ঠান টিএসএমসি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত চিপ সরবরাহ করে। তাদের অন্যতম গ্রাহক এনভিডিয়া ও অ্যাপল। খবর সিএনএনের।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, তাইওয়ান মনে করছে, চিপ তৈরি করার ক্ষমতা তাদের জন্য একটি সিলিকন ঢাল। শুধু অর্থনৈতিক দিক নয়, চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধে চিপ বড় ভূমিকা রাখবে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রেও বড় অবদান রাখবে।

সাম্প্রতিক শুল্ক আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে এসে গণমাধ্যমকে তাইওয়ানের উপপ্রধানমন্ত্রী চেং লি চিউন গত বুধবার বলেন, তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রে তার সেমিকন্ডাক্টরের ৫০ শতাংশ উৎপাদন স্থানান্তর করতে কোনোভাবেই সম্মতি দেবে না। এসব চিপ ইলেকট্রনিকস, আইফোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষণ ও সামরিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চেং লি চিউন আরও বলেন, ‘আমাদের আলোচনাকারী দল কখনোই অর্ধেক উৎপাদন ভাগ করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তাই তাইওয়ানের জনগণ এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে।’

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব কমার্স হাওয়ার্ড লুটনিক এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, তাইওয়ানকে তাদের চিপ উৎপাদনের অর্ধেক দেশীয় কারখানা ও বাকি অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রে করতে হবে।

এ বক্তব্য তাইওয়ানের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফলে চলমান যুক্তরাষ্ট্র-তাইওয়ান বাণিজ্য আলোচনায় নতুন উত্তেজনা যোগ করেছে।

নিউজনেশন চ্যানেলের ওই সাক্ষাৎকারে হাওয়ার্ড লুটনিক সিলিকন ঢাল ধারণার কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, ‘তাইওয়ানকে সুরক্ষিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ৫৮০ শতাংশ উৎপাদন করা প্রয়োজন। তাইওয়ান যদি ৯৫ শতাংশ চিপ উৎপাদন করে, তাহলে আমি কীভাবে সেটা ব্যবহার করে আপনাদের রক্ষা করব? সেটা কি বিমানে করে আনব, নাকি জাহাজে করে?

হাওয়ার্ড লুটনিক আরও বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে অর্ধেক চিপ তৈরির ক্ষমতা থাকে, তবে প্রয়োজনে যা করার দরকার, তা করার সক্ষমতা আমাদের থাকবে।’

তবে চীন যদি তাইওয়ানকে আক্রমণ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, এ বিষয়ে লুটকিন খোলাসা করেননি। চীন তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করে আসছে। যদিও দ্বীপটি তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে কখনোই ছিল না। চীন বলছে, প্রয়োজনে শক্তি ব্যবহার করে হলেও তারা তাইওয়ানকে নিজেদের সঙ্গে একীভূত করবে।

তাইওয়ানের উপপ্রধানমন্ত্রী চেং লি চিউন বলেন, সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এ ধরনের কোনো প্রস্তাব তোলা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র-তাইওয়ান আলোচনায় বিশ্বের শীর্ষ চিপ নির্মাতা টিএসএমসি অংশ নিয়েছে কি না, তা–ও স্পষ্ট নয়।

সোমবার তাইওয়ানের বিরোধী দল কুওমিনতাংয়ের (কেএমটি) আইনপ্রণেতা হসু ইউ-চেন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এটি সহযোগিতা নয়, সরাসরি লুটপাট। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দেওয়া সমতুল্য এ দাবি প্রত্যাখ্যান করতে।

হসু ইউ-চেন বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র জোর করে টিএসএমসির উন্নত চিপ উৎপাদনক্ষমতা ভাগ করে নেয়, তাহলে সিলিকন ঢালের কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে যাবে। আর তাইওয়ানের কৌশলগত নিরাপত্তার হাতিয়ার একেবারেই হারিয়ে যাবে।

বুধবার এক বিবৃতিতে তাইওয়ানের মন্ত্রিসভা বলে, যুক্তরাষ্ট্র শেষ হওয়া দুই দেশের মধ্যে পঞ্চম দফা বাণিজ্য আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তাইওয়ানের লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্যের ওপর বর্তমানে যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, তা কমানো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রে চিপ উৎপাদন কারখানা স্থানান্তর করবে না তাইওয়ান