ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে কুষ্টিয়ার চাঁদ মানব উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই সংগঠনটি পরিচালিত হয়। 

প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার দেওয়া, রোজাদারদের ইফতার করানো, বন্যায় ত্রাণ বিতরণের মতো স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করে তারা। প্রতিষ্ঠানটির সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ নেই। যদিও নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালায় বলা হয়েছে- গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং নিবন্ধিত গঠনতন্ত্রের মধ্যে এ বিষয়সহ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে তথ্য প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণের অঙ্গীকার রয়েছে। কেবল সেসব বেসরকারি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে। নিজের সংগঠন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নিবন্ধন পেয়েছে, তা জানতেন না এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কামরুজ্জামান। 

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্থানীয় সাংবাদিকরা সেখানে গেলে তিনি নিবন্ধনের কথা জানতে পারেন।

কামরুজ্জামান পাশের জেলা রাজবাড়ির পাংশার মাছপাড়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। চাঁদট গ্রামে বাড়ি হলেও তিনি খোকসা উপজেলা শহরে থাকেন। 

তিনি জানান, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের চাঁদট বাজারে একটি দোকান মাসিক এক হাজার ৩০০ টাকা ভাড়া নিয়ে চাঁদ মানব উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এক কক্ষের ছোট্ট এই ঘরে চাঁদ পাঠগার নামে একটি পাঠাগারও পরিচালিত হয়। সংস্থায় ৩১ সদস্যের কমিটি আছে। এর মধ্যে ৯ সদস্যের পরিচালনা পরিষদ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারের ভেতরে দোকানের সঙ্গে একপাশে চাঁদ মানব উন্নয়ন সংস্থার ৩ ফুট বাই ২ ফুটের একটি সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। আরেক পাশে পাঠাগারের সাইনবোর্ড লাগানো। 

প্রতিদিন বিকেলে সাটার খুলে সেখানে পাঠাগারের কার্যক্রম চলে। কামরুজ্জামান মাঝে মধ্যে সেখানে যান। বিকেলে পাঠাগার খোলা হয়। গ্রামের ছাত্র-ছাত্রী ও দুই একজন কৃষকও পাঠাগারে আসেন। মূলত সন্ধ্যার পর পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সংস্থার আর কোনো শাখা অফিস নেই। 

জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার এবং উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে গড়াই নদের তীরে চাঁদট বাজারে চাঁদ মানব উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়। বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের সব দোকানই তখন বন্ধ। সুনসান নীরবতা। সংস্থার কার্যালয়ও তালা লাগানো ছিল।

স্থানীয় তিন-চারজন বাসিন্দা জানান, বিকেলের দিকে কয়েকজন তরুণ এসে পাঠাগার খুলে পড়াশোনা করেন। তৈবুর রহমান নামের এক তরুণ বলেন, “বিনামূল্যে হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়। ত্রাণ দেওয়া হয়। সাধারণত বিকেলে খোলা হয়। কামরুজ্জামান এটার পরিচালক। পাঠাগারে অনেক বই আছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে।”

আবদুল মালেক নামের এক বৃদ্ধ জানান, ছেলেরা কয়েকবার প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার দিয়েছে। রোজার সময় ইফতার করায়। রাস্তাঘাট ভেঙে গেলে নিজেদের শ্রমে সংস্কার করে।

গ্রামের আরেক বৃদ্ধ তোবারেক আলী বলেন, “কামরুল (কামরুজ্জামান) নামের ছেলেটিই এসব করে। সেই বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে জোগার টোগার করে এসব করে। মানুষ উপকার পাচ্ছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী নিজের দোকানের তালা খুলতে খুলতে বলেন, “কামরুজ্জামান দল করেন না। আরও যারা আছেন, তাদের পরিবারের এক-দুইজন বিএনপি-জামায়াত সমর্থন করেন। তবে কেউ কোনো দলের মিছিল মিটিংয়ে যান না।”

চাঁদ মানব উন্নয়ন সংস্থার প্রধান প্রভাষক কামরুজ্জামান বলেন, “তাদের জনবল বলতে ৯ জন, বড় ফান্ডও নেই। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সংস্থার পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই। তিনি নিজেও পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন না। তবে কলেজ থেকে ছুটি পেলে করবেন। তাদের কোনো জনবল নেই।”

কামরুজ্জামান বলেন, “নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞাপন দেখে ২০০ টাকা ব্যয় করে অনলাইনে ফরম পূরণ করেছিলেন। যদি হয়। তখন তো সবই ছিলেন অনিশ্চিত। এখন যখন হয়েই গেছে, অন্য সব সংস্থার সঙ্গে মিল রেখে স্বেচ্ছাশ্রমে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করবেন। নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষকদের কোনো প্রকার সম্মানী দেবে না বলে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছিল।”

কামরুজ্জামান আরো বলেন, ‘এরইমধ্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোক আমাদের অফিস ঘুরে গেছেন। সক্ষমতা যাচাই করেছেন। নিবন্ধন পাওয়াটা অনেক জটিল প্রক্রিয়া ছিল। যেসব যোগ্যতায় নিবন্ধন পাওয়া যায়, তার সবগুলোই আমাদের সংস্থার আছে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর চ ল ত হয় ন বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ