আবি ডেয়ার-এর উপন্যাস ‘দ্য গার্ল উইথ দ্য লাউডিং ভয়েস’-এ উঠে এসেছে নাইজেরিয়ার গ্রামীণ কিশোরী আদুনির গল্প। আদুনি চায় পড়াশোনা করতে, নিজের ‘লাউডিং ভয়েস’ খুঁজে পেতে; যাতে সে নিজের কথা নিজেই বলতে পারে। জীবনের নানা বাধা সত্ত্বেও আদুনি নিজের স্বপ্ন ছাড়েনি। সে বিশ্বাস করে শিক্ষার মাধ্যমে নিজের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে এবং তার মতো আরও অনেক মেয়ের জন্যও সেই সুযোগ তৈরি করবে।

আবি ডেয়ার হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল ও হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ কনফারেন্সের অন্যতম প্রধান বক্তা ছিলেন। সেই কনফারেন্সে অংশগ্রহণের সুবাদে তাঁর কাজ সম্পর্কে জানতে পারি।

বর্তমানে অনেক সংস্থা ‘দ্য গার্ল উইথ দ্য লাউডিং ভয়েস’ বইটিকে বাল্যবিবাহ রোধের কাজে ব্যবহার করছে। আবি ডেয়ার-এর বক্তব্য শুনতে শুনতে আমি ফিরে যাচ্ছিলাম বাংলাদেশে, যেখানে কুড়িগ্রামের চর থেকে সুনামগঞ্জের হাওর পর্যন্ত অসংখ্য ‘আদুনি’-র সঙ্গে কথা বলেছি। তারা পড়াশোনা করতে চায়, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু অনেকেই বাল্যবিবাহের কারণে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে, তাদের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটছে।

২০২৫ সালে এসেও দক্ষিণ এশিয়ায় বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে। বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি-২০২৩ প্রতিবেদনে ২০০৬ থেকে ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়েশিশুর বিয়ে হয়ে যায়।

‘উপযুক্ত পাত্র’ না খুঁজে মেয়েদের শিক্ষিত ও স্বনির্ভর করতে হবে

ব্র্যাকের ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ‘বর্ন টু বি আ ব্রাইড’ শীর্ষক জরিপ থেকে জানা যায়, মেয়েদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমি যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ এখনো ব্যাপকভাবে ঘটছে। দারিদ্র্য ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের পাশাপাশি অভিভাবকেরা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘উপযুক্ত পাত্র পাওয়া’–কে। আইনের দুর্বল প্রয়োগ একটি বড় সমস্যা, আর বাল্যবিবাহের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা অত্যন্ত বড় একটি বাধা।

সব ধরনের আর্থসামাজিক অবস্থাতেই মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা নারীদের অবস্থান নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ—যেখানে বিয়ে ও সন্তান প্রতিপালনকেই নারীর জীবনের কেন্দ্রীয় ঘটনা হিসেবে মনে করা হয়। ঢাকায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েদের পড়াশোনা শেষ না করে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবারগুলো অহরহ নিচ্ছে। এখানে আর্থিক সমস্যার বিষয় নেই; বরং মেয়েদের পড়াশোনা ও কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গুরুত্ব না দেওয়াই প্রধান কারণ। তবে ব্যতিক্রমী গল্পও আছে।

সিনডারেলায় শহরের সব মেয়ে রাজপুত্রের স্ত্রী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় একটি জুতাতে নিজেদের পা ‘ফিট’ করার জন্য মরিয়া চেষ্টা করে। এই গল্প মেয়েশিশুদের এই ধারণা দিতে পারে যে, ‘বিশেষ’ একজন নারী হয়ে রাজপুত্রকে ‘অর্জন’ করাই যেন জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের গল্প পড়ে এবং দেখে বড় হলে মেয়েরা নিজেদের জীবনে অর্থপূর্ণ কোনো কাজ করার অনুপ্রেরণা পাবে কীভাবে?

ম্যাগসাইসাই পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। আমার নানির চিন্তাধারাও ছিল খুব আধুনিক। তিনি আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। নানা-নানি দুজনেই ভূমিকা রেখেছেন আমার গবেষক হওয়ার পেছনে। তখন আমার বোনদের বিয়ের প্রস্তাব আসত। নানি এগুলোর প্রশ্রয় দিতেন না। বরং বিয়ের প্রস্তাব এলে তিনি রেগে যেতেন। পড়তে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে; এটাই আমাদের বলতেন সব সময়।’

রাজকন্যার গল্পের দিন শেষ

কয়েক বছর আগে লন্ডনে রোজী অ্যালেন চিত্রকর্মের সিরিজ ‘ডেঞ্জারস অব ডিজনি’ দেখে চিন্তার খোরাক পেয়েছি। তিনি কিছু জনপ্রিয় গল্প (সিনডারেলা, বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট, স্নো হোয়াইট, স্লিপিং বিউটি ইত্যাদি) নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করেছেন এবং রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে নিপীড়ন, সম্মতির প্রয়োজনীয়তা, নারীদের জীবনে শারীরিক সৌন্দর্যের মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব, বার্ধক্যের ভীতিসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
‘দ্য পারফেক্ট ফিট’ ছবিতে একটি সামাজিক সমস্যা তুলে ধরতে সিনডারেলার গল্প ব্যবহার করা হয়েছে। চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন, সাহিত্য ইত্যাদিতে অনবরত এই বার্তা দেওয়া হয়—নারীদের সব বিষয়ে নিখুঁত (পারফেক্ট) হতে হবে। এটি তাদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করে এবং প্রায় সব সময়ই তাদের জন্য ক্ষতিকর।

সিনডারেলায় শহরের সব মেয়ে রাজপুত্রের স্ত্রী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় একটি জুতাতে নিজেদের পা ‘ফিট’ করার জন্য মরিয়া চেষ্টা করে। এই গল্প মেয়েশিশুদের এই ধারণা দিতে পারে যে, ‘বিশেষ’ একজন নারী হয়ে রাজপুত্রকে ‘অর্জন’ করাই যেন জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনআমাদের স্বপ্ন ছেলে আর মেয়েদের ভাগ করে দিই০৭ অক্টোবর ২০২০

এই ধরনের গল্প পড়ে এবং দেখে বড় হলে মেয়েরা নিজেদের জীবনে অর্থপূর্ণ কোনো কাজ করার অনুপ্রেরণা পাবে কীভাবে? তারা কি নিজের মেধা ও যোগ্যতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিজস্ব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে?

আশার কথা, পুরোনো রূপকথা নতুন করে লেখা এবং এই যুগের উপযোগী গল্প লেখার কাজ শুরু হয়েছে। এসব গল্পের মেয়েরা সাহসী, আত্মবিশ্বাসী এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী। কোনো রাজপুত্র এসে ‘উদ্ধার’ করবে সেই আশায় তারা বসে থাকে না, নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে, এবং সমাজটাকেও এগিয়ে নেয়।

সাজগোজের দিকে মনোযোগ দিয়ে মেয়েদের ‘রাজকন্যা’ এবং পরনির্ভরশীল বানিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। সেই যুগ শেষ। মেয়েরা নিজের ইচ্ছামতো খেলুক বা যা করতে ভালো লাগে করুক। তারা ধুলো-কাদা গায়ে মাখুক, হাসুক, আনন্দ করুক।

হার স্টোরিজ: বাংলার দুঃসাহসী মেয়েরা

‘হার স্টোরিজ: বাংলার দুঃসাহসী মেয়েরা’ একটি চমৎকার বই। এতে রয়েছে সাহসী নারীদের দুঃসাহসী অর্জনের গল্প। তাঁদের মধ্যে আছেন জ্যোতির্বিদ, গল্পকথক, শিক্ষাবিদ, বিপ্লবী, কবি, চিকিৎসক, সংগ্রামী, যুদ্ধাপরাধ তদন্তকারী, সংগীতশিল্পী, ভাস্কর, নৃত্যশিল্পী, আলোকচিত্রী, অভিনেত্রী, রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, স্থপতি, মানবাধিকার কর্মী, পর্বতারোহী, কমব্যাট পাইলট, ভারোত্তোলক এবং মা।

কিছুদিন আগে ঢাকা এয়ারপোর্টে তেমন এক দুঃসাহসী মেয়ের সঙ্গে পরিচিত হলাম। তিনি চীনে যাচ্ছিলেন। সাত বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। তিনি উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ছিলেন; সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে বৃত্তি নিয়ে চীনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নিয়ে পড়ছেন। তাঁর মা ও তাঁকে পড়াশোনার ব্যাপারে সব সময় উৎসাহ জুগিয়েছেন। চীনের যে শহরে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে এত ঠান্ডা যে তাঁর নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু করে। তিনি ঢাকায় এসে চিকিৎসা নিয়ে আবার পড়তে যান। কী অসম্ভব মনের জোর! ফিরদৌসী কাদরী, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসহ নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারা মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিবারের অনুপ্রেরণা একটা বিশাল ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুনবাল্যবিবাহ এবং আমাদের মাধ্যমিক পড়াশোনায় বাধা১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫মেয়েদের সাফল্য উদ্‌যাপন করতে শিখুন

বাংলাদেশের মেয়েরা মানসিকতা এবং সাহসে অনেক এগিয়ে আছে। তাঁরা খেলাধুলা থেকে শুরু করে রোবোটিকস সব ক্ষেত্রেই অবদান রাখছে। সমস্যা হলো সমাজের অনেকেই মেয়েদের সাফল্য উদ্‌যাপনে তেমন আগ্রহী নয়, বরং তাদের সংকীর্ণ গণ্ডিতে বেঁধে ফেলা হয়। সমাজের সবাইকে মেয়ে এবং নারীদের পড়াশোনা এবং পেশাগত জীবনের অর্জন উদ্‌যাপন করা শিখতে হবে।

বাবা-মায়ের দায়িত্ব মেয়েদের শিক্ষায় উৎসাহ দেওয়া এবং তাদের জন্য বই, চলচ্চিত্র এবং খেলনা বাছাই করার সময় সচেতনভাবে সেই সব বিষয় বেছে নেওয়া, যা মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। লেখক, শিল্পী, চলচ্চিত্র পরিচালকসহ সাংস্কৃতিক কর্মীদের উচিত শক্তিশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ক নারী চরিত্র নিয়ে গল্প বলা।

গণমাধ্যমকেও ইতিবাচক নারী রোল মডেলদের তুলে ধরতে হবে। বাল্যবিবাহ নিয়ে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত, সমাজটাকে মেয়েদের জন্য নিরাপদ করা এবং মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

লায়লা খন্দকার উন্নয়ন কর্মী

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র গল প র জন য র জ বন হওয় র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ

আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।

এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।

সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।

৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’

কারা আছে তালিকায়

দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।

দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।

১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।

২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।

কীভাবে এই মূল্যায়ন

৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।

ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।

এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।

জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:

বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;

কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;

কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;

সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;

কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ