ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতীর গ্রেপ্তারের পর তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে এমন চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ওই চ্যাটে ছাত্রীদের ওপর তাঁর যৌন হয়রানির চিত্র উঠে এসেছে।

ভারতের সাউথওয়েস্ট পশ্চিম দিল্লি এলাকায় একটি আশ্রমের মাধ্যমে শ্রী শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে থাকে। অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ছিলেন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।

বার্তা আদানপ্রদানের প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপে একটি চ্যাটে দেখা যায়, স্বামী চৈতন্যানন্দ কথিত ‘দুবাইয়ের এক শেখের’ সঙ্গে এক ছাত্রীর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন।

এক ছাত্রীর সঙ্গে কথোপকথনে ৬২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি এমন কথা লিখেছেন যাতে দেখা যায়, তিনি দুবাইয়ের এক শেখের কথা বলে এক ছাত্রীকে সঙ্গী খুঁজে দেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁর কোনো সহপাঠী বা জুনিয়র কেউ আছে কি না, জানতে চেয়েছেন। ওই ছাত্রী ‘না’ সূচক জবাব দিয়েছেন।

আরেকটি চ্যাটে দেখা যায়, চৈতন্যানন্দ এক ছাত্রীকে বারবার ‘বেবি’ ‘বেবি ডটার ডল’ বলে সম্বোধন করছেন।

একবার স্বামী চৈতন্যানন্দ লিখেছিলেন, ‘শুভ সন্ধ্যা আমার সবচেয়ে প্রিয় বেবি ডটার ডল।’

জবাবে ওই ছাত্রী লিখেছেন, ‘এখানে তো দুপুর স্যার, শুভ দুপুর। আপনি কিছু খেয়েছেন স্যার?’

অন্য একটি চ্যাটে স্বামী চৈতন্যানন্দ ‘ডিসকো ডান্স’ করার বিষয়ে রসিকতা করে ছাত্রীকে বার্তা দেন। ছাত্রীটি তাঁর সঙ্গে এতে যোগ দিতে চান কি না, তা জানতে চান। ছাত্রীটি সম্ভবত ভদ্রতার খাতিরে উত্তরে লেখে, ‘ওয়াও স্যার, দারুণ।’

আরেকটি কথোপকথনে স্বামী চৈতন্যানন্দ এক ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাবে না?’

আগ্রা থেকে গ্রেপ্তার

কমপক্ষে ১৭ জন ছাত্রীকে হয়রানির অভিযোগে স্বামী চৈতন্যানন্দকে গত রোরবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে আগ্রার তাজগঞ্জ এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, তিনি প্রায় দুই মাস ধরে গ্রেপ্তার এড়াতে বৃন্দাবন, মথুরা ও আগ্রার মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিলেন। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে প্রায়ই তিনি ছোট হোটেলে থাকতেন ও ট্যাক্সি ব্যবহার করতেন।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বামী চৈতন্যানন্দ গত ২৭ সেপ্টেম্বর ‘পার্থ সারথি’ ছদ্মনামে আগ্রার ওই হোটেলে ওঠেন এবং ১০১ নম্বর কক্ষে ছিলেন। কর্মচারীরা জানান, গ্রেপ্তারের আগপর্যন্ত তিনি তাঁর কক্ষেই ছিলেন।

স্বামী চৈতন্যানন্দ পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে আছেন। তাঁকে শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের তিনজন নারী সহকর্মীর মুখোমুখি করা হবে। অভিযোগ রয়েছে, এই নারী সহকর্মীরা তাঁর পক্ষ নিয়ে ছাত্রীদের হুমকি দিতেন এবং অপরাধমূলক মেসেজ মুছে ফেলতে সাহায্য করেছিলেন।

গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ একটি আইপ্যাড ও তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে, যার একটির মাধ্যমে ইনস্টিটিউটের সিসিটিভি ক্যামেরা এবং হোস্টেলের চত্বরে দূর থেকে নজর রাখা যেত।

রাষ্ট্রসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলে ‘স্থায়ী রাষ্ট্রদূত’ ও ব্রিকসের জন্য ‘বিশেষ দূত’ হিসেবে স্বামী চৈতন্যানন্দের নামে বানানো জাল ভিজিটিং কার্ডও উদ্ধার করা হয়েছে।

স্বামী চৈতন্যানন্দের কাছ থেকে দুটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। একটি ‘স্বামী পার্থ সারথি’ নামে এবং অন্যটি ‘স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী’ নামে। দুই পাসপোর্টে তাঁর জন্মস্থান ও পিতামাতার তথ্যে গরমিল ছিল। পুলিশ তাঁর ৮ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।

তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, আগস্টে এফআইআর দায়ের হওয়ার পর স্বামী চৈতন্যানন্দ জাল নথি ব্যবহার করে ৫০ লাখ টাকারও বেশি তুলে নিয়েছিলেন।
এসব অভিযোগ প্রথম সামনে আসে দিল্লিতে স্বামী চৈতন্যানন্দের ব্যক্তিগত ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ছাত্রীদের কাছ থেকে। এফআইআরে বলা হয়েছে, তিনি কিছু ছাত্রীকে গভীর রাতে তাঁর কক্ষে যেতে বাধ্য করতেন। অসময়ে অশ্লীল ও আপত্তিকর বার্তা পাঠাতেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ছ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

দিল্লির স্বামী চৈতন্যানন্দ হোয়াটসঅ্যাপে ছাত্রীদের কী ধরনের বার্তা পাঠাতেন

ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতীর গ্রেপ্তারের পর তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে এমন চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ওই চ্যাটে ছাত্রীদের ওপর তাঁর যৌন হয়রানির চিত্র উঠে এসেছে।

ভারতের সাউথওয়েস্ট পশ্চিম দিল্লি এলাকায় একটি আশ্রমের মাধ্যমে শ্রী শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে থাকে। অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ছিলেন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।

বার্তা আদানপ্রদানের প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপে একটি চ্যাটে দেখা যায়, স্বামী চৈতন্যানন্দ কথিত ‘দুবাইয়ের এক শেখের’ সঙ্গে এক ছাত্রীর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন।

এক ছাত্রীর সঙ্গে কথোপকথনে ৬২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি এমন কথা লিখেছেন যাতে দেখা যায়, তিনি দুবাইয়ের এক শেখের কথা বলে এক ছাত্রীকে সঙ্গী খুঁজে দেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁর কোনো সহপাঠী বা জুনিয়র কেউ আছে কি না, জানতে চেয়েছেন। ওই ছাত্রী ‘না’ সূচক জবাব দিয়েছেন।

আরেকটি চ্যাটে দেখা যায়, চৈতন্যানন্দ এক ছাত্রীকে বারবার ‘বেবি’ ‘বেবি ডটার ডল’ বলে সম্বোধন করছেন।

একবার স্বামী চৈতন্যানন্দ লিখেছিলেন, ‘শুভ সন্ধ্যা আমার সবচেয়ে প্রিয় বেবি ডটার ডল।’

জবাবে ওই ছাত্রী লিখেছেন, ‘এখানে তো দুপুর স্যার, শুভ দুপুর। আপনি কিছু খেয়েছেন স্যার?’

অন্য একটি চ্যাটে স্বামী চৈতন্যানন্দ ‘ডিসকো ডান্স’ করার বিষয়ে রসিকতা করে ছাত্রীকে বার্তা দেন। ছাত্রীটি তাঁর সঙ্গে এতে যোগ দিতে চান কি না, তা জানতে চান। ছাত্রীটি সম্ভবত ভদ্রতার খাতিরে উত্তরে লেখে, ‘ওয়াও স্যার, দারুণ।’

আরেকটি কথোপকথনে স্বামী চৈতন্যানন্দ এক ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাবে না?’

আগ্রা থেকে গ্রেপ্তার

কমপক্ষে ১৭ জন ছাত্রীকে হয়রানির অভিযোগে স্বামী চৈতন্যানন্দকে গত রোরবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে আগ্রার তাজগঞ্জ এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, তিনি প্রায় দুই মাস ধরে গ্রেপ্তার এড়াতে বৃন্দাবন, মথুরা ও আগ্রার মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিলেন। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে প্রায়ই তিনি ছোট হোটেলে থাকতেন ও ট্যাক্সি ব্যবহার করতেন।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বামী চৈতন্যানন্দ গত ২৭ সেপ্টেম্বর ‘পার্থ সারথি’ ছদ্মনামে আগ্রার ওই হোটেলে ওঠেন এবং ১০১ নম্বর কক্ষে ছিলেন। কর্মচারীরা জানান, গ্রেপ্তারের আগপর্যন্ত তিনি তাঁর কক্ষেই ছিলেন।

স্বামী চৈতন্যানন্দ পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে আছেন। তাঁকে শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের তিনজন নারী সহকর্মীর মুখোমুখি করা হবে। অভিযোগ রয়েছে, এই নারী সহকর্মীরা তাঁর পক্ষ নিয়ে ছাত্রীদের হুমকি দিতেন এবং অপরাধমূলক মেসেজ মুছে ফেলতে সাহায্য করেছিলেন।

গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ একটি আইপ্যাড ও তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে, যার একটির মাধ্যমে ইনস্টিটিউটের সিসিটিভি ক্যামেরা এবং হোস্টেলের চত্বরে দূর থেকে নজর রাখা যেত।

রাষ্ট্রসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলে ‘স্থায়ী রাষ্ট্রদূত’ ও ব্রিকসের জন্য ‘বিশেষ দূত’ হিসেবে স্বামী চৈতন্যানন্দের নামে বানানো জাল ভিজিটিং কার্ডও উদ্ধার করা হয়েছে।

স্বামী চৈতন্যানন্দের কাছ থেকে দুটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। একটি ‘স্বামী পার্থ সারথি’ নামে এবং অন্যটি ‘স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী’ নামে। দুই পাসপোর্টে তাঁর জন্মস্থান ও পিতামাতার তথ্যে গরমিল ছিল। পুলিশ তাঁর ৮ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।

তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, আগস্টে এফআইআর দায়ের হওয়ার পর স্বামী চৈতন্যানন্দ জাল নথি ব্যবহার করে ৫০ লাখ টাকারও বেশি তুলে নিয়েছিলেন।
এসব অভিযোগ প্রথম সামনে আসে দিল্লিতে স্বামী চৈতন্যানন্দের ব্যক্তিগত ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ছাত্রীদের কাছ থেকে। এফআইআরে বলা হয়েছে, তিনি কিছু ছাত্রীকে গভীর রাতে তাঁর কক্ষে যেতে বাধ্য করতেন। অসময়ে অশ্লীল ও আপত্তিকর বার্তা পাঠাতেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ