৭৮ বলে সেঞ্চুরিতে নতুন রেকর্ড সূর্যবংশীর
Published: 1st, October 2025 GMT
বৈভব সূর্যবংশী মাঠে নামলেই যেন রেকর্ড বইয়ে তাঁর নাম ওঠে!
ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে আজ যুব টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৭৮ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ওপেনার। যুব টেস্ট ইতিহাসে এটা চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি।
তবে এই সেঞ্চুরি দিয়ে একটি জায়গায় নিউজিল্যান্ড কিংবদন্তি ব্রেন্ডন ম্যাককালামের পাশে বসেছেন ১৪ বছর বয়সী সূর্যবংশী। ম্যাককালামের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে যুব টেস্টে ১০০–এর কম বলে একাধিক সেঞ্চুরি পেলেন এই বিস্ময়বালক। বয়সের হিসাবে আবার এই পথে ছাপিয়ে গেছেন ম্যাককালামকেও। ১৫তম জন্মদিনের আগেই যুব টেস্টে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০–এর কম বলে দুটি সেঞ্চুরি তুলে নিলেন সূর্যবংশী।
আগে ব্যাট করা অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দল গতকাল প্রথম দিনে ৯১.
এই ৮ ছক্কায় যুব টেস্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন সূর্যবংশী। পাঁচটি যুব টেস্টে এ পর্যন্ত ১৫টি ছক্কা তার। ইংল্যান্ডের জর্জ বার্টলেটেরে ১৩ ছক্কা রেকর্ড ভেঙেছেন সূর্যবংশী।
শুধু কী তা–ই, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যুব টেস্টে এটা দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও। লিয়াম ব্ল্যাকফোর্ডের ১২৪ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে নতুন এই রেকর্ড গড়লেন সূর্যবংশী।
যুব টেস্টে সূর্যবংশীর প্রথম সেঞ্চুরি ৫৮ বলে। গত বছর চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটি করেন। যুব টেস্টের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ৫৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন মঈন আলী।
আরও পড়ুনমার্শের ঝড়ে বৃথা রবিনসনের সেঞ্চুরি২ ঘণ্টা আগেসূর্যবংশী আজ আউট হওয়ার সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস থেকে ২৩ রানে পিছিয়ে ছিল ভারতের যুবারা। অর্থাৎ তাঁর ইনিংসে ভর করেই দ্বিতীয় দিনটা শাসন করেছে ভারত। সূর্যবংশীর পাশাপাশি বেদান্ত ত্রিবেদীর সেঞ্চুরিতে (১৪০) ভর করে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৮১.৩ ওভারে ৪২৮ রান তুলে অলআউট হয় ভারত। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১ উইকেটে ৮ রান তুলে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
সর্বশেষ আইপিএলেও ধুন্ধুমার ব্যাট করে নজর কাড়েন সূর্যবংশীউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বল হাতে দুর্দান্ত মারুফা, ব্যাট হাতে রুবাইয়া—পাকিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
তিন বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেকে একটিই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সেটি এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিন বছর পর আজ সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে নিগার সুলতানার দল। গত এপ্রিলে যে পাকিস্তানের কাছে বাছাইপর্বে হেরে শঙ্কার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, সেই দলটিকেই ১২৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে। ১৩০ রানের লক্ষ্যটা ১৮.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে যান নিগাররা।
রান তাড়ার শুরুটা অবশ্য শঙ্কা জাগিয়েছিল। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২৩ রান করতেই ১ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওপেনার ফারজানা হক ১৭ বলে মাত্র ২ রান করে এলবিডব্লু হয়েছেন ডায়ানা বেগের বলে।
পাওয়ার প্লের পর ১২তম ওভারের শেষ বলে ফিরে যান তিনে নামা শারমিন আক্তার। ১০ রান করতে ৩০ বল খেলতে হয়েছে শারমিনকে। শারমিন ফেরার পর ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ও নিগার সুলতানা পরের দুই ওভারে তুলতে পারেন মাত্র ২ রান।
বাংলাদেশ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে ১৫তম ওভারে। পাকিস্তান নারী দলের সাদিয়া ইকবালকে চার মেরে আড়মোড়া ভাঙেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাকিস্তানি অফ স্পিনার রামিন শামীমের করা পরের ওভারে আসে ১৩ রান, দুই চারে যার ৯-ই নিগারের। রান-উৎসবে এরপর যোগ যেন রুবাইয়াও। বাঁহাতি স্পিনার নাশরা সান্ধুর করা ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারেন এদিনই প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা রুবাইয়া।
শেষ পর্যন্ত অভিষেকটা ফিফটি করে রাঙিয়েছেন তিনি। ৬২ রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ফিরে গেলেও ২৮ বছর বয়সী রুবাইয়া ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে, সঙ্গে একটা রেকর্ড নিয়েও। ৭৭ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মেয়েদের ওয়ানডে অভিষেকে যা বাংলাদেশের ব্যাটারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। রুবাইয়া ভেঙেছেন আয়েশা রহমানের রেকর্ড, ২০১১ সালে বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রান করেছিলেন আয়েশা।
৪৪ বলে ২৩ রান করে নিগারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা সোবহানা মোস্তারি ১৯ বলে করেন অপরাজিত ২৪ রান। ৬টি চার ছিল সোবহানার ইনিংসে।
এর আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন পেসার মারুফা আক্তার। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে ফেরান মারুফা। দুর্দান্ত এক বলে প্রথম উইকেটটি পেয়েছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া ফুলার লেংথের বলটা বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢুকে লেগ স্টাম্পে আঘাত হানে। ‘গোল্ডেন ডাক’ পান পাকিস্তান ওপেনার ওমাইমা। পরের বলে আরেকটি ‘গোল্ডেন ডাক।’ এবারও অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, সিদরা ড্রাইভ করতে গিয়ে সেটিকে টেনে নিয়ে যান লেগ স্টাম্পে। হ্যাটট্রিক অবশ্য পাননি মারুফা, থেমেছেন এই ২ উইকেট নিয়েই।
তবে ম্যাচ সেরা মারুফার ওই শুরুটাকেই টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। তাঁদের মধ্যে আলাদা করেই বলতে হয় লেগ স্পিনার স্বর্ণা আক্তারের কথা। ৩.৩ ওভার বল করে মাত্র ৫ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। তাঁর পুরো করা তিনটি ওভারই ছিল মেডেন।
২ রানে ২ উইকেট খোয়ানোর মুনিবা আলীকে নিয়ে ৪২ রান যোগ করেন পাকিস্তানের রামিন শামীম। পরপর দুই ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে আবারও পাকিস্তানকে চাপে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদ আক্তার। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। ফল, ৩৮.৮ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট পাকিস্তানের মেয়েরা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের বিপক্ষে এটিই কোনো দলের সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের করা ৯ উইকেটে ১৪০ রান। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ম্যাচটি অবশ্য হেরেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৩৬ রানে। আজ এমন কিছুর শঙ্কা দূর হয়েছে অভিষিক্ত রুবাইয়াতের ব্যাটে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ অক্টোবর, গুয়াহাটিতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোরপাকিস্তান: ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ (রামিন ২৩, সানা ২২, মুনিবা ১৭, ডায়না ১৬*, সিদরা ১৫, আলিয়া ১৩; স্বর্ণা ৩/৫, নাহিদা ২/১৯, মারুফা ২/৩১)।বাংলাদেশ: ৩১.১ ওভারে ১৩১/৩ (রুবাইয়া ৫৪*, সোবহানা ২৪*, নিগার ২৩; ডায়না ১/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মারুফা আক্তার।