যুক্তরাষ্ট্রে চিপ উৎপাদন কারখানা স্থানান্তর করবে না তাইওয়ান
Published: 1st, October 2025 GMT
তাইওয়ানের চিপ উৎপাদনের অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরের কথা থাকলেও সেই প্রতিশ্রুতি মানছে না তাইওয়ান। চিপ উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল। তাইওয়ানের বড় চিপ তৈরির প্রতিষ্ঠান টিএসএমসি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত চিপ সরবরাহ করে। তাদের অন্যতম গ্রাহক এনভিডিয়া ও অ্যাপল। খবর সিএনএনের।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, তাইওয়ান মনে করছে, চিপ তৈরি করার ক্ষমতা তাদের জন্য একটি সিলিকন ঢাল। শুধু অর্থনৈতিক দিক নয়, চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধে চিপ বড় ভূমিকা রাখবে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রেও বড় অবদান রাখবে।
সাম্প্রতিক শুল্ক আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে এসে গণমাধ্যমকে তাইওয়ানের উপপ্রধানমন্ত্রী চেং লি চিউন গত বুধবার বলেন, তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রে তার সেমিকন্ডাক্টরের ৫০ শতাংশ উৎপাদন স্থানান্তর করতে কোনোভাবেই সম্মতি দেবে না। এসব চিপ ইলেকট্রনিকস, আইফোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষণ ও সামরিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চেং লি চিউন আরও বলেন, ‘আমাদের আলোচনাকারী দল কখনোই অর্ধেক উৎপাদন ভাগ করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তাই তাইওয়ানের জনগণ এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে।’
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব কমার্স হাওয়ার্ড লুটনিক এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, তাইওয়ানকে তাদের চিপ উৎপাদনের অর্ধেক দেশীয় কারখানা ও বাকি অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রে করতে হবে।
এ বক্তব্য তাইওয়ানের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফলে চলমান যুক্তরাষ্ট্র-তাইওয়ান বাণিজ্য আলোচনায় নতুন উত্তেজনা যোগ করেছে।
নিউজনেশন চ্যানেলের ওই সাক্ষাৎকারে হাওয়ার্ড লুটনিক সিলিকন ঢাল ধারণার কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, ‘তাইওয়ানকে সুরক্ষিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ৫৮০ শতাংশ উৎপাদন করা প্রয়োজন। তাইওয়ান যদি ৯৫ শতাংশ চিপ উৎপাদন করে, তাহলে আমি কীভাবে সেটা ব্যবহার করে আপনাদের রক্ষা করব? সেটা কি বিমানে করে আনব, নাকি জাহাজে করে?
হাওয়ার্ড লুটনিক আরও বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে অর্ধেক চিপ তৈরির ক্ষমতা থাকে, তবে প্রয়োজনে যা করার দরকার, তা করার সক্ষমতা আমাদের থাকবে।’
তবে চীন যদি তাইওয়ানকে আক্রমণ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, এ বিষয়ে লুটকিন খোলাসা করেননি। চীন তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করে আসছে। যদিও দ্বীপটি তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে কখনোই ছিল না। চীন বলছে, প্রয়োজনে শক্তি ব্যবহার করে হলেও তারা তাইওয়ানকে নিজেদের সঙ্গে একীভূত করবে।
তাইওয়ানের উপপ্রধানমন্ত্রী চেং লি চিউন বলেন, সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এ ধরনের কোনো প্রস্তাব তোলা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র-তাইওয়ান আলোচনায় বিশ্বের শীর্ষ চিপ নির্মাতা টিএসএমসি অংশ নিয়েছে কি না, তা–ও স্পষ্ট নয়।
সোমবার তাইওয়ানের বিরোধী দল কুওমিনতাংয়ের (কেএমটি) আইনপ্রণেতা হসু ইউ-চেন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এটি সহযোগিতা নয়, সরাসরি লুটপাট। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দেওয়া সমতুল্য এ দাবি প্রত্যাখ্যান করতে।
হসু ইউ-চেন বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র জোর করে টিএসএমসির উন্নত চিপ উৎপাদনক্ষমতা ভাগ করে নেয়, তাহলে সিলিকন ঢালের কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে যাবে। আর তাইওয়ানের কৌশলগত নিরাপত্তার হাতিয়ার একেবারেই হারিয়ে যাবে।
বুধবার এক বিবৃতিতে তাইওয়ানের মন্ত্রিসভা বলে, যুক্তরাষ্ট্র শেষ হওয়া দুই দেশের মধ্যে পঞ্চম দফা বাণিজ্য আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তাইওয়ানের লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্যের ওপর বর্তমানে যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, তা কমানো।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ত ইওয় ন ত ইওয় ন র অর ধ ক ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
রণতরিসহ ডজনখানেক যুদ্ধজাহাজ ও ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন, ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হামলা কি আসন্ন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় হামলা চালানোর বিষয়ে তিনি অনেকটাই মনস্থির করে ফেলেছেন। সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁকে কয়েক দফায় এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। এরপর তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করা হয়েছে।
চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, মার্কিন কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযান পরিচালনার বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে ট্রাম্পকে ব্রিফ করেন। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিস্তৃত অভিযান শুরু করলে কী কী লাভ-ক্ষতি হতে পারে, তা পর্যালোচনা করছেন তাঁরা।
এদিকে, ‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’ নামে পেন্টাগন ঘোষিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্যারিবীয় অঞ্চলে ১২টির বেশি যুদ্ধজাহাজ এবং ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী।
গত শুক্রবার ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে অবৈধ অভিবাসীর ঢল ও মাদক পাচার বন্ধ করতে তিনি তাঁর লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছেন। এয়ারফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি অনেকটা মনস্থির করে ফেলেছি। সেটা কেমন হবে, আমি আপনাদের ঠিক বলতে পারছি না, তবে আমি একরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।’
ট্রাম্পকে কর্মকর্তারা কী বলেছেন
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনসহ মার্কিন কর্মকর্তাদের ছোট একটি দল ট্রাম্পকে ব্রিফ করে। এরপর বৃহস্পতিবার ‘সিচুয়েশন রুমে’ বড় পরিসরে জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ অন্য শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুটি বৈঠকেই ট্রাম্প ও তাঁর কর্মকর্তারা সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করেন। ট্রাম্পকে ভেনেজুয়েলা নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন বিকল্প পথ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক বা সরকারি স্থাপনায় বিমান হামলা, মাদক পাচারের রুটগুলোয় হামলা অথবা মাদুরোকে উৎখাতে আরও সরাসরি প্রচেষ্টা চালানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। এর আগে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন উৎপাদনকেন্দ্র এবং মাদক পাচারের রুটগুলো লক্ষ্য করে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্প ভাবছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড চলতি সপ্তাহের শুরুতে লাতিন ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে পৌঁছেছে। এই রণতরি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। সামরিক বাহিনীর প্রায় ১৫ হাজার সদস্য এবং ১ ডজনের বেশি যুদ্ধজাহাজ সেখানে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।শেষ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সরেও আসতে পারেন ট্রাম্প। গত মাসে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি সিআইএকে (কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা) দেশটিতে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, ভেনেজুয়েলার ভেতরে স্থল অভিযান চালানোর পক্ষে কোনো আইনি ভিত্তি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই। যদিও প্রয়োজন হলে তাঁরা এমন আইন তৈরি করে নিতে পারেন। সমপ৶তি ট্রাম্প সিবিএসের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলার ভেতরে হামলার কথা ভাবছেন না। যদিও এর আগে তিনি এ ধরনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের বৈঠকের বিষয়ে অবগত সূত্র বলছে, ব্যর্থ হতে পারে বা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপের ব্যাপারে আদেশ দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক বলে মনে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প