গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণার পর এখন কী হবে
Published: 2nd, October 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ বন্ধে তাঁর প্রশাসনের ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণার দিনটিকে ‘মানবসভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম মহান দিন’ বলে অভিহিত করেছেন। গত সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই খুব কাছাকাছি পৌঁছেছি।’
এ ধরনের অত্যধিক উৎসাহপূর্ণ ভাষা সবাই ট্রাম্পের কাছ থেকে আশা করেন, কিন্তু এটি বাস্তবসম্মত কি না, সেটিই মূল প্রশ্ন।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল ২৫০ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে, সেই সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আটক ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেবে। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ৪৮ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করবে। তাঁদের মধ্যে ২০ জন জীবিত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এরপর হামাসের সদস্যরা যদি ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করার ও তাঁদের অস্ত্র ত্যাগের’ প্রতিশ্রুতি দেন, তবে তাঁদের ক্ষমা করা যেতে পারে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েল ধীরে ধীরে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে এবং আরব দেশগুলোর নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) উপত্যকাটির নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। ইতিমধ্যে, ‘পিস বোর্ড’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে এক ফিলিস্তিনি কমিটি গাজার প্রশাসন পরিচালনা করবে; যতক্ষণ না পুনর্গঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ক্ষমতা গ্রহণে প্রস্তুত হয়। প্রস্তাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা স্বীকৃত হয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের ‘স্ব-নিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্রহণযোগ্য পথ’ দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
নেতানিয়াহু পরিকল্পনাটি সমর্থন করছেন। তবে ইসরায়েল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়নি। কারণ, তা কার্যকর করতে মন্ত্রিসভার সম্মতি প্রয়োজন। আবার পরিকল্পনাটি এখনো চূড়ান্ত নয়। কারণ, হামাসকে মতামত দেওয়ার ও প্রস্তাবে পরিবর্তন চাওয়ার জন্য কিছু সময় দেওয়া হবে।
হামাস (পরিকল্পনাকে) না বলবে—সম্ভবত এটিই নেতানিয়াহুর মূল পরিকল্পনা। ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রকাশের পর নেতানিয়াহু তাঁর চরম দক্ষিণপন্থী মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, হামাস সম্ভবত প্রস্তাবটি গ্রহণ করবে না। এতে তিনি ট্রাম্পের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে গাজার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবেন।হামাস কি এ পরিকল্পনা গ্রহণ করবে
ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু এখন হামাসের প্রতিক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। পরিকল্পনাটি নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দোহায় যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসরের হামাসের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল। হামাসের মিত্র তুরস্কেরও আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা।
পরিকল্পনাটি হামাসের ইতিপূর্বে ঘোষণা করা ‘রেড লাইন’ (চূড়ান্ত সীমারেখা) অতিক্রম করে, যেমন তাদের অস্ত্র ত্যাগ করা ও ভবিষ্যতে গাজার শাসনে অংশগ্রহণ না করা। প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসের সব অবকাঠামো স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ধ্বংস করা হবে এবং সেগুলো পুনর্নির্মাণ করা হবে না।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা হামাসকে এক কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এটি তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান তামির হায়মান ও তেল আবিবের জাতীয় নিরাপত্তা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইএনএসএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ওফের গুটারম্যান লিখেছেন, ‘হামাস সম্ভবত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করবে—এটা অনুমান করাই যুক্তিসংগত।’
হামাসের জন্য একটি বিশেষ শর্ত বড় সমস্যা তৈরি করেছে। পরিকল্পনার ১৭ ধারা অনুযায়ী, হামাস যদি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তবু গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং ইসরায়েলি সেনাদের দখলকৃত এলাকা তাঁদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক বাহিনীতে হস্তান্তরের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের শেয়ার করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলাপ করছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব মন ত র ইসর য গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ
আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।
সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।
এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।
সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।
৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’
কারা আছে তালিকায়দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।
দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।
১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।
২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।
কীভাবে এই মূল্যায়ন৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।
ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।
এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;
কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;
কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;
সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;
কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।