দাঁত না ফেলে কেন রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করাবেন
Published: 16th, October 2025 GMT
ঘুমের মধ্যে বা হঠাৎ অসহনীয় দাঁতব্যথা। কিছুতেই কমছে না। কেউ বলছেন দাঁতটি ফেলে দিতে হবে। কেউ ব্যথানাশক ওষুধে সাময়িক ব্যথা লাঘবের চেষ্টা করছেন। কিন্তু আসলে দাঁতের ভেতরের মজ্জা আক্রান্ত হলে এনডোডোন্টিক চিকিৎসা ছাড়া সেই দাঁত রক্ষার কোনো উপায় নেই।
আজ ১৬ অক্টোবর বিশ্ব এনডোডোন্টিক দিবস। দাঁত নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সেলিব্রেটিং টুথ সেভারস’ অর্থাৎ জনগণের মধ্যে দাঁতের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরা।
দাঁত মানবদেহের এক অমূল্য অঙ্গ। এটি হারালে শুধু খাবার চিবানোতেই সমস্যা হয় না, বরং মুখের সৌন্দর্য-সামঞ্জস্য, উচ্চারণ, আত্মবিশ্বাস এমনকি স্মরণশক্তিও নষ্ট হয়। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাঁত উপড়ে ফেলার পরিবর্তে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা রক্ষা সম্ভব। এই চিকিৎসার নাম ‘রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট’।
আরও পড়ুনদাঁত স্কেলিং কী, কেন করা হয়, না করালেই–বা কী হয়৩০ আগস্ট ২০২৫রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্টরুট ক্যানেল হলো একধরনের সূক্ষ্ম ডেন্টাল চিকিৎসা। এই পদ্ধতিতে দাঁতের ভেতরের সংক্রমিত বা মৃত টিস্যু অপসারণ করা হয়। এর মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করা হয় দাঁতকে। এরপর বিশেষ উপাদান দিয়ে সেই স্থান ভরাট বা সিল করে দেওয়া হয়। এতে করে ব্যথা, ফোলা অথবা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত হয়। বহু বছর কার্যকর রাখা সম্ভব হয় দাঁতকেও। তাই কথায় কথায় দাঁত ফেলে দেওয়ার আত্মঘাতী ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
রুট ক্যানেল নিয়ে অনেকের মধ্যে একধরনের ভয় কাজ করে। কেউ কেউ মনে করেন, এই চিকিৎসা অনেক কষ্টের, ব্যয়বহুল ও কিছু দিন পর আবার কষ্ট শুরু হবে বা দাঁত ভেঙে যাবে। এগুলো একেবারে ভ্রান্ত ধারণা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।
অনুমোদিত ও দক্ষ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিলে এর সফলতার হার অনেক। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে কৃত্রিম মুকুট বা ক্যাপ পরিয়ে না নিলে দাঁত ভেঙে যেতে পারে। অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে এমন সংবেদনশীল চিকিৎসা নিলে খারাপ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
আরও পড়ুনডায়াবেটিক রোগীদের দাঁত ও মাড়ির রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকারের উপায়১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫পরামর্শকোনো ব্যথা বা কষ্ট না হলেও বছরে অন্তত একবার ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এতে রোগের শুরুতেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দাঁতের গর্তের শুরুতে বা শিনশিন করলে ফিলিং নামক সহজ ও সবার জন্য সহনশীল খরচে চিকিৎসা করিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে। রোগ পুষে রাখলে জটিলতা, সময় ও খরচ সব বাড়তে থাকে।
ডা.
মো. আসাফুজ্জোহা রাজ, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, পান্থপথ, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা
প্রাণঘাতী রোগ ক্যানসারের বিরুদ্ধে দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম ‘সুপার ভ্যাকসিন’ তৈরি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় অ্যামহার্স্টের বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে নিজেদের তৈরি টিকার কার্যকারিতা ইঁদুরের শরীরে পরীক্ষা করেছেন তাঁরা। গবেষণায় টিকাটি ইঁদুরের শরীরে ত্বকের (মেলানোমা), অগ্ন্যাশয় ও স্তন ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী ক্যানসার প্রতিরোধে আশাব্যঞ্জক ফল দিয়েছে। আর তাই ভবিষ্যতে মানবদেহেও টিকাটি কার্যকর হতে পারে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, সুপার ভ্যাকসিনে রয়েছে চর্বিজাত অণু দিয়ে তৈরি ন্যানো কণা। এই ন্যানো কণা শরীরে পৌঁছে দেয় দুটি ‘অ্যাডজুভ্যান্ট’ নামের উপাদান, যা দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, টিকা দেওয়া ৮৮ শতাংশ ইঁদুরের শরীরে কোনো টিউমার তৈরি হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ইঁদুরের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়াও পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। টিকাটি মানবদেহে প্রয়োগ শুরুর আগে আরও কয়েকটি ধাপে গবেষণা করতে হবে।
গবেষণার সময় প্রথমে ন্যানো কণাকে একধরনের অ্যান্টিজেনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা দেহে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এরপর ইঁদুরের শরীরে টিকা প্রয়োগের পর তাদের মেলানোমা কোষের সংস্পর্শে আনা হয়। এটি এমন একধরনের ক্যানসার, যা শরীরের যেকোনো অঙ্গে দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে। যেসব ইঁদুরকে ন্যানো কণাভিত্তিক টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের ৮০ শতাংশই ২৫০ দিন পর্যন্ত টিউমারমুক্ত ছিল। অন্যদিকে প্রচলিত টিকা দেওয়া বা টিকা না দেওয়া সব ইঁদুর ৩৫ দিনের মধ্যেই ক্যানসারে মারা যায়।
গবেষণায় নতুন এই টিকা ফুসফুসে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়াও সম্পূর্ণভাবে ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। আর তাই বিজ্ঞানীরা টিকার আরেকটি সংস্করণ তৈরি করেছেন, যেখানে ন্যানো কণার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ‘টিউমার লাইসেট’ নামের অ্যান্টিজেন। এরপর ইঁদুরের শরীরে মেলানোমা, স্তন ক্যানসার ও অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের (পিডিএসি) কোষ প্রবেশ করানো হয়। দেখা গেছে, অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত ৮৮ শতাংশ, স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ৭৫ শতাংশ ও মেলানোমায় আক্রান্ত ৬৯ শতাংশ ইঁদুরের শরীরে কোনো টিউমার তৈরি হয়নি।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এই টিকার মাধ্যমে একাধিক ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করা যেতে পারে। তবে টিকাটি বর্তমানে প্রাথমিক গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী গ্রিফিন কেইন বলেন, ‘আমাদের পাওয়া ফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমরা এখন পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে প্রাণী থেকে মানবদেহে এমন চিকিৎসা প্রয়োগের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ও জটিল।’
সূত্র: ডেইলি মেইল