জুবিনের মৃত্যু: আসামে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, পুলিশের গুলি
Published: 16th, October 2025 GMT
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে মৃত্যু হয় আসামের জনপ্রিয় শিল্পী জুবিন গার্গের। এর পর থেকেই উত্তপ্ত আসাম। প্রথমে প্রিয় শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন আসামবাসী। এর মধ্যে জুবিনের মৃত্যু ঘিরে নানা গুঞ্জন চাউর হয়। এর পর থেকেই বিচারের দাবিতে সোচ্চার ভক্তরা। তবে গতকাল বুধবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সেটা এতটাই যে পুলিশকে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়তে হয়। খবর ইন্ডিয়া টুডের
গতকাল জুবিন গার্গের মৃত্যুর মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জেলা কারাগারে আনা হয়। এরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গাড়ি জেলের ফটকে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ভক্তরা বিক্ষোভ শুরু করেন। মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
জুবিন গার্গ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনাথ আশ্রমে একটি বেদনা বেলা
আমার মেয়ে শুমশুমাকে নিয়ে প্রথমবারের মতো এতিমখানায় গেলাম। জীবন কত অসহায়ত্বে ভরপুর হতে পারে- তাই দেখানোর ইচ্ছা ছিল আমার। আমি মনে মনে সব সময়ই ভাবি আমার শুমশুম একদিন শিশুদের জন্য অত্যন্ত দরদী হয়ে উঠবে। বাবা নেই, মা নেই এমন ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে একটা বেলা কাটানো ছিল আমার জন্য এক অচেনা অজানা পরানপুরা অভিজ্ঞতা যেন।
বারে বারেই মনে হচ্ছিলো আলহামদুলিল্লা স্রষ্টা আমাদের ওপর কত বড় রহমত প্রদানকারী, এদের মতন এমন নিঃসঙ্গ একা একা বেড়ে ওঠার জীবন উনি আমাদের দেননি।
আরো পড়ুন:
সন্তান পরীক্ষায় ফেল করেছে, বাবা-মায়ের করণীয়
ত্বক সতেজ রাখতে এই ফল খেতে পারেন
দেশে এলে প্রতিবারই আমার পরলোকগত পিতা ও মরহুম শ্বশুর-শ্বাশুড়ির জন্য কিছু মিলাদের আয়োজন করি।এবারও তাই, তবে এবার একটু অন্য রকম ছিল। প্রতিবারের মতন মিলাদের পর খাবারের প্যাকেট বিতরণ করে চলে আসিনি। আমরা কিছু দুঃখী শিশুর পাশে গিয়ে বসতে চেয়েছিলাম কিছুটা সময়। কিছুটা সময় ওদের সাথে থাকার চেষ্টাতে ওদের হয়তোবা তেমন কোন লাভ হয়নি কিন্তু আমার মনে হয়েছিলো, আহারে মানব জীবন।
সেদিন বৃষ্টি ছিল খুব। তারপরও আমরা অদম্য। ৩ অক্টোবর, ২০২৫ মুষল ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিলো, আমরা হাজির হলাম ছোটোখাটো এই এতিম আশ্রমে। বলেছিলো ১৬০ জন এতিম আছে কিন্তু ছিল আরো কম, শুক্রবার বলে অনেকে অনুপস্থিত, তারা গিয়েছে তাদের আত্মীয়দের কাছে। আমাদের আয়োজন ছিল ১৬০ জনেরই। আসরের নামাজের পর ফিরে আসবে ওদের অনেকেই, তারাও তখন খাওয়া পেয়ে যাবে বলে জানালো।
রান্না হয়েছে এতিমখানার মাঠে, মিলাদ হয়েছে মসজিদে, দোআ হলো এতিমদের ঘরে বসে, সকালেই কোরআন খতম করে রাখা হয়েছিল। তারপর ভোজন পর্ব।
মুরগি, ভাত, সবজি, ডাল, ডিম সিদ্ধ, কোক, আমিত্তি— এই ছিল মেনু।রাসেল, শাহাদাত, আনিসসহ আরও কয়েকজন শিশু এসে আমাদের সবার সাথে হাত মেলালো। আমার সামর্থ নেই প্রতিটি হাত ভরে দেওয়ার। কিন্তু বিশ্বাস করি এমন একটা দিন এই পৃথিবীতে আসবে যেদিন সবাই এগিয়ে আসবে, হাত ধরে টেনে তুলতে এই মানব শিশুদের।পরের মুহূর্তেই মনে হলো, তাই কী হয়?
জীবনে আসলেই সেরকম কিছু হয় না, হবে না। জীবনের বাস্তবতা ভিন্ন। সবার ক্ষেত্রে সমান্তরাল কোনো পরিবর্তন আসে না। কারো কারো জন্য হয়তোবা আসবে। আহা স্রষ্টা কেন আমাকে ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ বা জেফ বেজোস কিংবা বিড়লা টাটাদের মত বড়োলোক করলেন না, এই ভেবে সত্যিই আমার এই প্রথম মনে বড় কষ্ট হলো।
ওরা যে খুব উঁকিঝুঁকি মেরে আমাদের দেখছিলো তাও কিন্তু না, বরঞ্চ আমি-ই দেখছিলাম। ঘরের চারদিকে মাটিতে রাখা টিনের ট্রাঙ্ক বা সুটকেস, তার ভেতরে কি আছে- জানার বড় ইচ্ছে হতে থাকলো আমার। এক শিশুকে তা জিজ্ঞেস করতেই সে জানতে চাইলো, আমি ওখান থেকে কি কি নিয়ে যেতে চাই ! ওরা কেবল হারাতে শিখেছে তাই হয়তোবা আমাকে অমন বললো।
এক দেয়ালে এক বাচ্চা কাপড় শুকাতে দিচ্ছিলো, জানতে চাইলাম কে ধুয়ে দিলো? বললো, আর কে? আমি। ওরাই ওদের সবটুকু। এখন থেকেই স্বাবলম্বী। আমার মেয়ে যেহেতু অন্য দেশে বড় হয়ে ওঠা একজন মানুষ, সে আমাদের দেশীয় দারিদ্রতায দেখে অতি মর্মাহত। আমি এই জীবনে গরিব ফকির মানুষ প্রচুর দেখেছি, তাই আমার কষ্টের ভার অনেক কম। অরফানেজ বিশ্বময় থাকবে এটা সে বুঝে, মানেও, কিন্তু এতো নিম্মমানের জীবনযাপনের চিত্র আমার শুমকে ব্যথিত করেছে। অমানবিক এক জীবন তারা যাপন করছে।
আমাদের আগে খাওয়ার জন্য ডাকা হলো, খাদেমদের জানালাম আমরা খাওয়া তদারক করবো, বাচ্চাদের খাওয়া শেষ হলে তারপরে খেতে বসবো। আমরা ওদের খাওয়া তদারকিতে বেশ অবাক হয়ে দেখলাম ওরা সবজি খেতে চায়না। ডালও না। অনেকে দেখলাম ভাতের ভেতর মুরগির মাংস লুকিয়ে রাখলো বা ভাত দিয়ে লেগ পিসগুলো ঢেকে রাখলো। জানতে চাইলাম এটা কেন, উত্তরে কেবল হাসলো। সম্ভবত এটাই খেলা তাদের। নিজেদের খেয়ালের কোনো এক প্রকাশ এটি।
একজন কোক নিয়ে ঝাঁকি দিতে থাকলো, আমার মেয়ে বললো, মা ওরা যদি এখন ঢাকনা খুলে তাহলে ছিটকে সব বের হবে। আমি নিষেধ করলাম এটি করতে, ৭/৮ বছরের ছেলেটি দ্রুত তা করা থেকে বিরত থাকলো। কিন্তু একটু পরেই আমার মেয়ে বললো, তুমি পেছন ফিরতেই সে আবার বোতল ঝাঁকিয়েছে, খুলেছে, তারপর ফেনা ফেনা হয়ে যে কোক বেরিয়েছে তাই আনন্দ করে সারা মুখে মেখে খেয়েছে। বলে আমার মেয়ে চোখ বড় বড় করে ওই ছেলের জন্য ‘হোয়াট এ ফানি বয় হি ইজ ’ জাতীয় ভঙ্গি করে হাসলো। আমার ইচ্ছে হলো ঘাড় ফিরিয়ে বলি, আচ্ছা পাজি ছেলে তো তুই !
আমরা বাচ্চাদের খাওয়া শেষে ওদের ঘরে খেতে বসলাম। আমার সাথে আমার আম্মা আছেন। বোন, বোনের বর ও ওদের ছেলে আছে, আমার বর এবং ভাসুরও আছেন। আমরা এতিমখানার প্লেটে খেতে বসলাম। আমরা পেপার প্লেট সাথে এনেছিলাম। কিন্তু দেখলাম ওখানকার প্লেট বা ‘বর্তন’ বা বাসন-কোসন আশাতীত ভাবেই ভালো। কেন যে আমার মনে হচ্ছিলো টিনের প্লেট থাকবে তা জানি না কিন্তু দেখলাম বেশ সুন্দর খান্দানি কাঁচের প্লেট দেওয়া হয়েছে আমাদের। আমার বোন বললো, অনেকে জিনিস পত্র দান করে। মাথার উপর ফ্যান চলছে পুরাদমে, ওটাও নাকি কার দান করা। কিন্তু কোনো খাট নেই। মেঝেতে পাটি বা গদি বিছিয়ে তারা ঘুমায় একসাথে, দলবেঁধে, জড়াজড়ি করে।
ভেবেছিলাম গরমে মরে যাবো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেরকম কিছু হলো না।
(চলবে)
ঢাকা/লিপি