ঢাকার মেট্রোরেলে স্থায়ী কার্ড নিয়ে সংকট চলছে। নিয়মিত যাতায়াতের জন্য স্থায়ী কার্ড করতে চাইলেও অনেকে তা পাচ্ছে না। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা এই সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও তাতে সংকট মোচনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। স্থায়ী কার্ড কেনা এবং নিয়ন্ত্রণ কোন প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকবে, এ নিয়ে টানাটানি চলেছে গত এক বছর।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ নূর হোসেন, বৃদ্ধ মজিবুর রহমান এবং শামসুর রাহমানের কবিতা

কবি আর কবিতার প্রতি ভালোবাসা, অনুপ্রাণিত আকর্ষণ সব সময়েরই সঙ্গী আমার। এক সময়ে, ষাটের দশকের শুরু থেকে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময়কাল পর্যন্ত কবিতাচর্চায় বেশ নিমগ্ন সময় কেটেছিল।

এরপরও কোনো কোনো সময়ে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো কবিতার রাজ্যে ফিরে গেলেও তা কখনই ষাটের দশকের সে দিনগুলোর মতো উজ্জ্বল হয় না। আর, ১৯৬৪ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির কার্জন হলের অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতার সামনে কবিতা পাঠের মতো সাহস প্রদর্শনের সুযোগও আসেনি কোনো দিন।

তবে কবি আর কবিতার রাজ্যে বিচরণ আজও অব্যাহত রয়েছে। সেদিন, ২০ জানুয়ারি সকালে, নিজ বাসগৃহের ছোট বারান্দায় হঠাৎ যে অনিন্দ্য কাব্যিক পরিবেশ গড়ে উঠেছিল, তা আগামী দিনগুলোর জন্য এক মধুর স্মৃতি হয়ে বিরাজ করবে। শ্রোতা তিনজন।

বৃদ্ধ মজিবুর রহমান, বন্ধু অজয় এবং শৈশব আর কৈশোরের সন্ধিক্ষণের সাশা। অনভ্যস্ত এবং অপরিশীলিত কণ্ঠে পাঠ করছি সাপ্তাহিক একতা থেকে আজকের বাংলাদেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমানের সদ্য প্রকাশিত কবিতা ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’। আবৃত্তি নয়, বিলম্বিত তালে ধীরে ধীরে পড়ছি। শ্রোতা তিনজন গভীর মগ্নতায় শুনছেন। কবিতা পাঠ চলছে, কবিতার কথা, ভাষা আর ভাবে বৃদ্ধ মজিবুর রহমানের দুচোখ সজল হয়ে উঠছে। কবিতা পাঠ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুদ্ধশ্বাস দমন করে, অশ্রুভরা দুচোখ নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বৃদ্ধ মজিবুর রহমান বলতে থাকলেন, বারবার বলতে থাকলেন, ‘ধন্য কবি’, ‘ধন্য কবি’। তিনি চোখ মুছছেন দুহাতে, আর বুকফাটা আর্তনাদ চেপে, কান্নাভেজা কণ্ঠে বলছেন, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’।

গণতন্ত্র যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বলছেন, আমি দোয়া করছি, ২২-দলের ঐক্য টিকে থাকুক। মানুষের মঙ্গল হোক। সকলের চোখ তখন সজল। অশ্রুধারা রুখতে সকলেরই চলেছে কষ্টপ্রয়াস। পিতা পুত্র হারানোর শোকে বিহ্বল, আর উপস্থিত সকলে গভীরভাবে আলোড়িত, অনুপ্রাণিত। এমন সুন্দর এক মহতী পরিবেশ জীবনে কতবার আসে?

আরও পড়ুনইতিহাসের দায় ও শহীদ নূর হোসেন১২ নভেম্বর ২০১৯

বৃদ্ধ মজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয়ের ঘটনাটিও বড় বেদনাদায়ক। ২৮ নভেম্বর (’৮৭ সাল) ওয়ারী থেকে বেবি ট্যাক্সিতে মণিপুরীপাড়ায় শিল্পী কামরুল হাসানের বাসা হয়ে বংশালের দিকে রওনা দিয়েছি। বেবি ট্যাক্সি ইন্দিরা রোড হয়ে ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছে। এ সময়েই বৃদ্ধ ট্যাক্সিচালক চকিতে পেছনে ফিরে বললেন, ‘আমি আপনাকে চিনি। আপনি পত্রিকার লোক। আর আমি শহীদ নূর হোসেনের বাবা।’ আমি চমকে উঠলাম। বেবি ট্যাক্সিচালক মজিবুর রহমান নানা কথা বলছেন। আমি নির্বাক আর অভিভূত। লজ্জায় কুণ্ঠিত।

বুকে-পিঠে স্লোগান লিখে রাজপথের আন্দোলনে নূর হোসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ