ইসরায়েলকে আবার যুদ্ধ শুরুর অনুমতি দেওয়া হতে পারে: ট্রাম্প
Published: 16th, October 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার বলেছেন, যদি হামাস শান্তিচুক্তি মানতে না চায়, তিনি ইসরায়েলকে গাজায় আবার অভিযান চালানোর অনুমতি দিতে পারেন। সিএনএনকে তিনি বলেছেন, ‘আমি বললেই ইসরায়েলি সেনারা আবার সড়কে নামবেন।’
ট্রাম্প একটি সংক্ষিপ্ত ফোনালাপে বলেন, ‘হামাসের কারণে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার দ্রুত সমাধান হবে।’
এর আগে ইসরায়েল হামাসকে অভিযুক্ত করে বলে, তারা গাজা যুদ্ধ বন্ধে করা চুক্তি মানছে না। ইসরায়েলের অভিযোগ, হামাস জীবিত ও মৃত জিম্মিদের ফেরত দেওয়ার শর্ত মানছে না। এতে ইসরায়েলে ক্ষোভ বাড়ছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘকে জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সহায়তার সরবরাহ কমানো বা বিলম্বিত হতে পারে। কারণ, খুব কমসংখ্যক মৃত জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করেছে হামাস।
হামাস বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় জিম্মিদের মরদেহ খুঁজে পেতে সমস্য হচ্ছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘকে জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সহায়তার সরবরাহ কমানো বা বিলম্বিত হতে পারে। কারণ, খুব কমসংখ্যক মৃত জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করেছে হামাস। ফিলিস্তিন সংগঠনটি বলেছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় জিম্মিদের মরদেহ খুঁজে পেতে সমস্য হচ্ছে।তবে ইসরায়েলের অভিযোগের পরও এ পর্যন্ত শান্তিচুক্তি টিকে আছে।
ট্রাম্পঘোষিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার চতুর্থ ধারায় বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল যখন প্রকাশ্যে এ চুক্তি মেনে নেবে, তখন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মিকে—জীবিত ও মৃত—ফেরত পাঠানো হবে।’
গতকাল সকাল পর্যন্ত ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মির সবাই দেশে ফিরেছেন। আর হামাস আটটি মরদেহ হস্তান্তর করেছে। এর মধ্যে চারটি হস্তান্তর করা হয়েছে গতকাল রাতে (মঙ্গলবার দিবাগত রাত)।
আরও পড়ুনট্রাম্প কীভাবে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব করলেন১০ অক্টোবর ২০২৫ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, মরদেহগুলোর মধ্যে একটি কোনো ইসরায়েলি জিম্মির নয়। বিষয়টি সম্পর্কে জানাশোনা আছে, এমন একটি সূত্র গতকাল সিএনএনকে বলেছে, ‘সন্ধ্যায় আরও চার–পাঁচটি মরদেহ ফেরত আসতে পারে।’
ট্রাম্প বলেছেন, জীবিত জিম্মিদের উদ্ধার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সিএনএনের সঙ্গে ট্রাম্পের আলাপের পর জ্যেষ্ঠ দুই মার্কিন উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না যে হামাস মৃত জিম্মিদের সবার দেহ না দিয়ে চুক্তির শর্ত ভাঙছে। তাঁরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার মাধ্যমে হামাসের কাছ থেকে নিশ্চিয়তা পেয়েছে যে অবশিষ্ট মরদেহ উদ্ধার ও ফেরত দেওয়ার সব চেষ্টা করা হবে। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য ও লজিস্টিক সহায়তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও ওই মরদেহগুলো খুঁজছে। অনেক ক্ষেত্রে মরদেহ ভবন বা স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের নিচে থাকতে পারে।
জ্যেষ্ঠ দুই মার্কিন উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না যে হামাস মৃত জিম্মিদের সবার মরদেহ না দিয়ে চুক্তির শর্ত ভাঙছে। তাঁরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার মাধ্যমে হামাসের কাছ থেকে নিশ্চিয়তা পেয়েছে যে অবশিষ্ট মরদেহ উদ্ধার ও ফেরত দেওয়ার সব চেষ্টা করা হবে।এদিকে ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তির পর গাজায় হামাস ও প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সহিংস সংঘাত শুরু হয়েছে। এক ঘটনায় হামাস প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প আগেই সতর্ক করে বলেছেন, হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে, না হলে বলপ্রয়োগে অস্ত্র সমর্পণ করানো হবে। তাঁর ২০ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে হামাস গাজার শাসনে কোনো ভূমিকা রাখবে না; উপত্যকাটি সামরিকীকরণমুক্ত করা হবে এবং স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থার অধীন থাকবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন স্বীকার করেছে যে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও কাজ বাকি আছে এবং জিম্মি–বন্দীমুক্তি চুক্তি ওই পরিকল্পনার প্রথম ধাপ মাত্র।
আরও পড়ুনগাজায় উচ্ছ্বাস, কী আছে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে০৯ অক্টোবর ২০২৫ট্রাম্প সিএনএনকে বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে হামাস গিয়ে (গাজায়) সহিংস গোষ্ঠীগুলোকে সরাচ্ছে।’
ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, হামাস নির্দোষ ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমরা তা জানতে পারব। এটি শুধু গ্যাং না–ও হতে পারে।’
হামাসের কারণে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার দ্রুত সমাধান হবে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টশান্তি পরিকল্পনার ষষ্ঠ ধারা বলছে, ‘সব জিম্মি ফেরত আসার পর হামাসের যেসব সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি দেবেন ও অস্ত্র ছাড়বেন, তাঁদের ক্ষমা করা হবে। যাঁরা গাজা ছাড়তে চান, তাঁদের নিরাপদ পথ দেওয়া হবে।’
সিএনএন প্রশ্ন করেছিল, হামাস অস্ত্র পরিত্যাগ করতে না চাইলে কী হবে? ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভাবছি। যখন আমি বলব, ইসরায়েল দ্রুতই সড়কে ফিরবে (গাজায় আবার অভিযান শুরু করবে)।’
আরও পড়ুনগাজায় যেভাবে ইসরায়েলের পরাজয় আর ফিলিস্তিনের পুনর্জন্ম হলো১৭ ঘণ্টা আগেডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও নেতানিয়াহু যুদ্ধ শুরু করতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি তাঁদের থামিয়েছেন। এ নিয়ে বিবির (নেতানিয়াহু) সঙ্গে তাঁর তর্ক হয়েছে।
ট্রাম্প তবু দীর্ঘমেয়াদি শান্তির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী; বিশেষ করে যখন এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের এ বিষয়ে শক্ত সমর্থন রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এ যুদ্ধবিরতি চুক্তির সঙ্গে ৫৯টি দেশ যুক্ত। আমরা এর আগে এমন কিছু দেখিনি। তারা আব্রাহাম চুক্তির অংশ হতে চায়। এখন ইরান আর কোনো সমস্যা নয়।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের ওপর কেন হামাস এতটা আস্থা রাখছে১৪ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র কর ছ বল ছ ন মরদ হ ইসর য গতক ল সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
সিএমএসএমই ঋণ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
ব্যাংকের কার্ড থেকে নগদ, বিকাশে টাকা পাঠানোর নতুন সুবিধা
তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণে রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। আর এই প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে, আর রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ১২৬ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামে ১৪০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে, একই দরে গত ১৫ জুলাই ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। আর ডলারের দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বে অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।
গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ