দেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠী উদীচীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপিত হলো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে উদ্‌যাপন করা হয়েছে দিনটি। স্মরণ করা হয়েছে সত্যেন সেন আর রণেশ দাশগুপ্তকে। রাজধানীতে উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন হয়েছে দুই জায়গায়। ‘সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবিরোধী লড়াইয়ে উদীচী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে উদ্‌যাপন করেছে একাংশ। অপরাংশের প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রগতির পথে জীবনের গান’।

প্রগতির পথে জীবনের গান প্রতিপাদ্য নিয়ে উদীচীর একাংশের আয়োজনের উদ্বোধন হয় আজ বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমি ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি পথনাটক লালশহর–এর পরিবেশনা। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সাঁওতাল নারী অধিকারকর্মী এবং প্রয়াত সাঁওতাল নেতা আলফ্রেড সরেনের বোন রেবেকা সরেন। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলমের সভাপতিত্বে ও সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার।

রেবেকা সরেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছেন দেশের মেহনতি মানুষ ও তাঁদের সন্তানেরা। কিন্তু গত এক বছরে দেখা গেছে, ভাগ্য খুলেছে শুধু সারজিস, হাসনাতদের। তিনি বলেন, ‘দেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি এসেছে ক্ষমতায় কিন্তু এ দেশের মেহনতি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। সাংস্কৃতিক মুক্তি হয়নি আমাদের।’

আলোচনা পর্বে কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, দেশে ষাটের দশকে রাজনীতি ও সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটেছিল, যা এখন অনেকাংশে থিতু হয়েছে। এখন নতুন করে সংস্কৃতিতে আঘাত আসছে উল্লেখ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাওয়ালি ছাড়া অন্য সংগীত চলবে না অথবা শরৎ উৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের পর আমরা মুক্ত পরিবেশে থাকব বলে প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু এখন মাজার, দরগাহ আক্রান্ত হচ্ছে। বাউল শিল্পী, লোকশিল্পীদের ওপর হামলা হচ্ছে।’ এসব ক্ষেত্রে সরকার শুধু একটি বিবৃতি দিয়ে তার দায় শেষ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমি ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি পথনাটক ‘লালশহর’ পরিবেশন করা হয়। বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উদ চ র

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরায় পূজা উপলক্ষে ৯০ ফুটের তোরণ, নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের

মাগুরায় শতবর্ষী কাত্যায়নী পূজা উপলক্ষে শহরের নতুন বাজার সেতুর ওপর নির্মিত হয়েছে প্রায় ৯০ ফুট উচ্চতার একটি বর্ণিল তোরণ, যা নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। আয়োজকদের দাবি, জেলায় সাধারণত এত উঁচু তোরণ চোখে পড়ে না। তোরণটির নির্মাণে কাজ করেছেন ৩০ জনের বেশি শিল্পী ও শ্রমিক। গতকাল সোমবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের এই উৎসব।

মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকার নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম পূজা উদ্‌যাপন কমিটির পক্ষ থেকে এই তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা হলেও মাগুরায় জাঁকজমকভাবে কাত্যায়নী পূজাই অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবছর শারদীয় দুর্গাপূজার এক মাস পরই মাগুরায় কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের সমাপনী হবে আগামী শুক্রবার।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, কাত্যায়নী পূজার সময় প্রতিবছর উৎসবের শহরে পরিণত হয় মাগুরা। এবারও গোটা শহরকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এবার পূজামণ্ডপ এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন তোরণ, প্যান্ডেল ও চোখধাঁধানো আলোকসজ্জা। দিনে ও রাতে পূজা মণ্ডপগুলোয় হাজারো মানুষের ঢল নামে। পূজামণ্ডপগুলো তৈরি করা হয়েছে প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্থাপত্যকলার আদলে। কয়েক শ পটুয়াশিল্পী প্রায় এক মাস পরিশ্রম করে এসব প্রতিমা, মণ্ডপ ও পূজার আনুষঙ্গিক সাজসজ্জা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার জেলায় ৮৭টি মণ্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে পৌর এলাকায় ২০টি, সদর উপজেলার অন্য এলাকায় ২০টি, শালিখায় ২৫টি, মহম্মদপুরে ১২টি এবং শ্রীপুরে ১০টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে পৌর এলাকার মণ্ডপগুলো ঘিরেই দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকে। পূজাকে ঘিরে প্রতিটি মণ্ডপে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।

গতকাল সকালে নতুন বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দূর থেকে চোখ আটকে যাচ্ছে বর্ণিল এই তোরণে। মাথা উঁচু করে সেটি দেখার চেষ্টা করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী।

আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তোরণটির উচ্চতা প্রায় ৯০ ফুট ও প্রস্থ ৩০ ফুট। এটি বাঁশ, কাঠ, কর্কশিট ও নানা রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তোরণটির কাঠামোয় ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ৫৫০টি বাঁশ। খুলনার শিল্পী নিতাই বিশ্বাস এটির নকশা করেছেন এবং নির্মাণ করেছে স্থানীয় একটি ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান।

ডেকোরেটরটির স্বত্বাধিকারী তরুণ ভৌমিক বলেন, ‘কাত্যায়ানী পূজা মাগুরার বিশেষ একটি উৎসব। এখানে আমরা প্রতিবছর নতুন কিছু প্রদর্শনের চেষ্টা করি। এর আগে একই জায়গায় ৭০ থেকে ৭৫ ফুট উচ্চতার তোরণ নির্মাণ করেছিলাম। তবে এবার আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।’

শিল্পী নিতাই বিশ্বাস বলেন, তোরণটির বিশেষত্বই হচ্ছে এর উচ্চতা। এ ধরনের তোরণ দেশের কোনো প্রান্তেই তেমন একটা চোখে পড়ে না। জনবহুল একটি সেতুর ওপর এটির নির্মাণ করাটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেক দূর থেকে এটি চোখে পড়ছে। ৩০ জনের বেশি শিল্পী ও শ্রমিক প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে এটি তৈরি করেছেন।

নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাপাই শিকদার বলেন, ‘বড় আকারের তোরণ আমাদের কাত্যায়নী পূজার ঐতিহ্য। গত ১০ বছর লাইট বোর্ডের তোরণ নির্মাণ করা হতো। এবার আমরা আবার পুরোনো ঐতিহ্যে ফিরে গেছি। এবার এই তোরণ নির্মাণে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাগুরায় পূজা উপলক্ষে ৯০ ফুটের তোরণ, নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের