নারীকে ব্যবহার করে খুলনার সাবেক কাউন্সিলর টিপুকে হত্যা: পুলিশ
Published: 15th, January 2025 GMT
খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু (৫৪) হত্যাকাণ্ড একটি পূর্বপরিকল্পিত টার্গেট কিলিং ছিল। আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের পরিকল্পনায় এক নারীকে ব্যবহার করে তাকে কক্সবাজার ডেকে এনে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ওই নারীসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ব্যবহৃত একটি পিস্তল এবং গুলিভর্তি ম্যাগাজিন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো.
পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিশ্চিত হওয়া যায়, তিনজন আসামি মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার কাপনা পাহাড় এলাকায় অবস্থান করছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে অভিযান চালিয়ে শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৯), গোলাম রসুল (২৫) এবং ঋতুকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়। এদের সবার বাড়ি খুলনায়।
আরো পড়ুন:
শিশু নাবিলা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামির মৃত্যুদণ্ড
মানিকগঞ্জে বৃদ্ধাকে গলাকেটে হত্যা
তিনি আরো জানান, খুলনা থেকে ওই নারীকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজারে আসেন গোলাম রব্বানী টিপু। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের কলাতলীর হোটেল গোল্ডেন হিল থেকে বের হওয়ার পর রাত ৮টা ২০ মিনিটে সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন হোটেল সি-গালের সামনের ফুটপাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে তিনি নিহত হন। গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যমতে, কক্সবাজার শহরের কক্স কুইন রিসোর্টের ২০৮ নম্বর কক্ষের চিলেকোঠা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, গত শুক্রবার রাতে খুলনার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার সালু এবং কক্সবাজারের মেজবাউল হক ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
প্রসঙ্গত, গোলাম রব্বানী খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আত্মগোপনে যান তিনি।
ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ফেলনা জিনিসের পণ্য রপ্তানি করে সাফল্য রহমতুল ইসলামের
কয়েক বছর আগেও পেঁপেগাছের ডালপালা বা নল ছিল ফেলনা। কাঁচা বা পাকা পেঁপে সংগ্রহের পর ছেঁটে দেওয়া ডালপালা পড়ে থাকত বাগানে। ফেলে দেওয়া এই ডাল এখন মূল্যবান রপ্তানি পণ্য। শুধু পেঁপের নলই নয়, আমগাছ ও নিমগাছের ফেলে দেওয়া চিকন ডাল, পাটচুন ঘাস, নীলকণ্ঠ ফুলের মতো ফেলনা জিনিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা। এসব বিশেষায়িত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও।
ফেলনা জিনিসকে রপ্তানি পণ্য বানানোর পথ দেখিয়েছেন দেশেরই একজন উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তা হলেন রহমতুল ইসলাম। পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির জন্য মাগুরার প্রত্যন্ত গ্রাম জাগলায় কারখানা গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে এসব পণ্য তৈরি করছেন গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা। বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড নামের এই কারখানায় প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০০ জনের।
গ্রামের এই ব্যতিক্রমী কারখানা দেখতে নিয়মিতই আসছেন বিদেশি ক্রেতারা। সংখ্যা কত হবে? রহমতুল ইসলাম জানালেন, গত আট বছরে কারখানা দেখতে আসা বিদেশি প্রতিনিধিদলের সংখ্যা চার শ জনের কম হবে না। মুঠোফোনে কথা বলার সময় তিনি জানালেন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদল এখন তাঁর কারখানা ঘুরে দেখছে।
যেভাবে শুরু
মাগুরার সন্তান রহমতুল ইসলাম উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা শুরু করেন। একসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপানে থিতু হন। তবে নিজের এলাকায় ব্যতিক্রমী কিছু করার তাড়না থেকে যায়। শুরুতে পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। এরপর দেশে ফিরে ২০১৮ সালে মাগুরার জাগলা গ্রামে চার–পাঁচজন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন। পোষা প্রাণীর দুই ধরনের খেলনা তৈরির মাধ্যমে শুরু হয় কারখানার কর্মযজ্ঞ। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে জাপানে প্রথমবারের মতো তিন হাজার মার্কিন ডলারের পোষা প্রাণীর খেলনা রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।
চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধীরে ধীরে রপ্তানিও বাড়তে থাকে। প্রয়োজন পড়ে নতুন কর্মীর। কিন্ত তাঁদের দক্ষ করে তোলার জন্য দরকার প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয় কারখানায়। কর্মী হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত নারীদের। কর্মযজ্ঞ বৃদ্ধির পর জাপান ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে এই কারখানায়। প্রায় ২০ একর জমিতে কারখানার পাশাপাশি খাবার ও খেলনা তৈরির কাঁচামালের জন্য ঘাস ও গাছ রোপণ করেন তিনি। চাহিদা পূরণ না হওয়ায় এখন কাঁচামাল সরবরাহের জন্য প্রচারণাও শুরু করেছেন। ফেলনা জিনিস এনে বিক্রি করলেই নগদ টাকা দেওয়া হয়। এমন উদ্যোগে গ্রামের লোকজন ফেলনা জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করতে শুরু করেন কারখানায়। এমন সরবরাহকারীর সংখ্যাও এখন প্রায় ১০০।
পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।