ইন্টারনেটে আপলোড হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে সবাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত। প্রত্যেকের বুকে লাগানো লাল-হলুদ-সবুজ ফিতা দিয়ে বানানো ‘অতিথি ব্যাচ’। অনুষ্ঠানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন থানার ওসি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা।

গত সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের জে. কে পোল্লাডাঙ্গা এলাকার খেলার মাঠে এমনই দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে নানা প্রতিক্রিয়া।

অনুষ্ঠানটি ছিল ‘স্বর্ণ কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা’র উদ্বোধন। এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রতিবছর স্থানীয়ভাবে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করায় সববয়সী মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করার ইঙ্গিত দিয়ে আয়োজকদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করছেন।

আরো পড়ুন:

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতেই হবে: দুলু

মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস, আরো ৫ বিএনপি নেতা কারামুক্ত

ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

শাহিনুর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য মো. মোজাম্মেল হক (চুটু), ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আতাউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাব্বুল হোসেন, দলদলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন যুবদল নেতা সামিরুল ইসলাম গাজী। তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘খেলা মানেই আনন্দ। দলমত নির্বিশেষে এ টুর্নামেন্ট সফল করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এখন কোনো দলীয় সরকার ক্ষমতায় নেই। অন্তর্বর্তী সরকার আছে। তাই খেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি।’’

এ মঞ্চে ভোলাহাট থানার ওসি শাহিনুর রহমান প্রতিযোগিতার পক্ষে সাফাই গেয়ে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন।

এ প্রতিযোগিতার একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখান। মুনসুর আলী নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘‘ধন্যবাদ টুর্নামেন্ট কমিটিকে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মিলে তোমরা খেলাটাকে পরিচালনা করছ।’’ তবে শাহজামাল খান স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘ভোলাহাটেও তাহলে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন হলো। কাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাব সেটাই চিন্তায় পড়ে গেলাম। উনাদের, না পুনর্বাসনকারীদের?’’

এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন নেতার মোবাইল নম্বরে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি ভোলাহাট থানার ওসি শাহিনুর রহমানের ব্যবহৃত নম্বরে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/মেহেদী/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ আওয় ম ল গ র রহম ন উপস থ ত আওয় ম ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা কেন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবনের ফলে সারা দুনিয়াতেই নির্বাচনী প্রচারণার চিত্র এখন পুরোটাই পাল্টে গেছে। একসময় হয়তো ভাবা হতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু ছোটখাটো প্রশাসনিক কাজ গুছিয়ে দেবে। কিন্তু এখন এটি আধুনিক নির্বাচনী কৌশলের একেবারে কেন্দ্রে চলে এসেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে শুধু একটি প্রযুক্তিকে বোঝায় না; এর মধ্যে অনেক পদ্ধতি (যেমন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ, প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ এবং অত্যাধুনিক জেনারেটিভ এআই) রয়েছে। এগুলো আধুনিক মিডিয়া কৌশলের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

এই পরিবর্তনটা অবশ্য হঠাৎ করে আসেনি। এর শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, যখন টিভিতে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন আসা শুরু হয়। এরপর ২০০০-এর দশকে এল ‘বিগ ডেটা’, যখন প্রার্থীরা ভোটারদের কাছ থেকে এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেন। এআই এখন সেই ডেটা-চালিত কৌশলের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনী প্রচারণাকে এমন এক স্তরে নিয়ে গেছে, যা আগে কখনো ভাবা যায়নি।

২.

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে একদিকে যেমন গণতন্ত্রের উন্নতির সহায়ক হিসেবে দেখা হয়, তেমনি এটি নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক নিয়মকানুনের জন্য হুমকিও তৈরি করতে পারে।

 কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভালো দিক হলো, এটা নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্য জানতে সাহায্য করে; রাজনীতিবিদদেরও তাদের ভোটারদের ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করে। এর ফলে এটা নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে পারে।

কিন্তু উল্টো দিকে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এআই দিয়ে খুব সহজে এবং বড় পরিসরে ভুল তথ্য ছড়ানো যায়, জনমতকে প্রভাবিত করা যায় এবং গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করে ফেলা যায়।

কাজেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কৌশলগত ব্যবহার, নৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং এটি কীভাবে দায়িত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা যায়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।

৩.

নির্বাচনী প্রচারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি বড় কৌশল হলো ভোটারদের তথ্য বিশ্লেষণ করা বা ‘হাইপার টার্গেটিং’। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে এখন আর পুরোনো, স্থির তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হয় না, বরং বাস্তব সময়ের তথ্য দিয়ে নির্বাচনী কৌশল ঠিক করা যায়।

এআই প্ল্যাটফর্মগুলো ভোটারদের মানসিকতা, মূল্যবোধ, তারা কোন ধরনের মিডিয়া ব্যবহার করে—এসব নানা ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করে। এর মাধ্যমে অত্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে ভোটারদের লক্ষ্যবস্তু তৈরি করা হয়।

ব্যাপারটা শুধু কে কোন দলের সমর্থক বা তাদের বয়স কত, তা জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করা হয়, কোন বিষয়গুলো ভোটারদের কাছে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ; তা হতে পারে দেশের নিরাপত্তা, পরিবেশ সংরক্ষণ বা সামাজিক কোনো বিষয়। এই ক্ষমতাকেই ‘পলিটিক্যাল মাইক্রো-টার্গেটিং’ বলা হয়।

প্রার্থীরা এআই ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ভোটারদের (বিশেষ করে যাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি বা দোদুল্যমান) জন্য আরও কার্যকর ও ব্যক্তিগত বার্তা তৈরি করতে পারেন। এই ব্যবস্থা প্রার্থীদের আগে থেকেই অনুমান করতে সাহায্য করে যে কোন বার্তাটি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করবে। এরপর সেই বার্তা তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন বা বিভিন্ন ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেন।

জেনারেটিভ এআইয়ের উদ্ভাবনের ফলে রাজনৈতিক কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু তৈরি করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখন কম খরচে প্রায় অসীম বার্তা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এই টুলগুলো একটি সাধারণ নির্দেশ থেকেই টেক্সট, ছবি, ভিডিও বা অডিও তৈরি করতে পারে।

এর ফলে বিজ্ঞাপন, তহবিল সংগ্রহের আবেদন বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট খুব দ্রুত তৈরি করা যাচ্ছে। এই ক্ষমতার ফলে ছোট দল বা কম বাজেটের প্রার্থীরাও লাভবান হচ্ছেন; কারণ, তাঁদের আর বড় ডিজিটাল টিমের প্রয়োজন পড়ছে না।

৪.

আধুনিক নির্বাচনী প্রচারণা চলে বাস্তব সময়ের ওপর ভিত্তি করে, যেখানে মানুষের মতামত মুহূর্তের মধ্যে বদলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে এআইচালিত ‘সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস’ (জনমত বিশ্লেষণ) ভোটারদের মনমেজাজ বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এটি গতানুগতিক জনমত জরিপের একটি বিকল্প হিসেবেও কাজ করছে।

 মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এই উন্নত টুলগুলো লাখ লাখ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, পাবলিক ফোরাম এবং অন্যান্য জায়গা থেকে তথ্য স্ক্যান করতে পারে। এরপর এটি জনমতকে ইতিবাচক, নেতিবাচক বা নিরপেক্ষ হিসেবে ভাগ করে। এর মাধ্যমে প্রার্থীরা বুঝতে পারেন মানুষ কোনো বিতর্ক, নীতিগত ঘোষণা বা ভাইরাল পোস্টকে কীভাবে নিচ্ছেন এবং কোন বিষয়গুলো সেই মুহূর্তে তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

এটি একটি শক্তিশালী চক্রের মতো কাজ করে; প্রথমে সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস দিয়ে বোঝা হয় কোন বার্তাটি কাজ করছে। তারপর জেনারেটিভ এআই দিয়ে সেই ধরনের আরও কনটেন্ট তৈরি করা হয়। শেষে মাইক্রো টার্গেটিং ব্যবহার করে সেই কনটেন্ট সবচেয়ে সংবেদনশীল দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

এই গতিশীল ব্যবস্থার কারণে প্রচারণাগুলো খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। তবে এর একটি ঝুঁকি হলো, প্রার্থীরা হয়তো একটি স্থিতিশীল নীতি ধরে রাখার চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারেন।

এর একটি ভালো দিকও আছে। এআই রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায়ন করতে পারে। এটি তাঁদের কাছে আসা বিপুল পরিমাণ মন্তব্য বা ই-মেইল সংক্ষিপ্ত করে বুঝতে সাহায্য করে, যা তাঁদের ভোটারদের মতামত ভালোভাবে জানতে এবং এমনকি ব্যক্তিগতকৃত উত্তর তৈরি করতেও সহায়তা করে।

৫.

রাজনৈতিক যোগাযোগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং সমাজের জন্য বড় ধরনের নৈতিক ও সামাজিক ঝুঁকি তৈরি করে। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, এআই খুব দ্রুত ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

জেনারেটিভ এআই দিয়ে ‘ডিপ ফেক’ অর্থাৎ এমন বাস্তবসম্মত ছবি, ভিডিও বা কণ্ঠস্বর তৈরি করা যায়, যা আসল কনটেন্ট থেকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। এআই সিস্টেমগুলো নিরপেক্ষ নয়। তাই এখানে পক্ষপাতিত্বের ঝুঁকি থাকে।

অ্যালগরিদমকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য যে ডেটা ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যেই আগে থেকে বিদ্যমান সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে। এই পক্ষপাতদুষ্ট ডেটার কারণে মেশিন লার্নিংয়ের ফলাফলও পদ্ধতিগতভাবে অন্যায্য হতে পারে।

আবার বেশির ভাগ এআই মডেল ইংরেজি ভাষার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এর ফলে রাজনৈতিক আদর্শগুলো একটি সংকীর্ণ অ্যাংলো-আমেরিকান দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপিত হতে পারে। এটা ভাষাগত বৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর এবং অন্য ভাষাভাষী গোষ্ঠীর বড় একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এআইয়ের এমন ব্যাপক ব্যবহার জনগণের আস্থার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে আসতে পারে।

৬.

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে নানা ধরনের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে এআই নিয়ে তেমন কোনো শক্ত বা খণ্ডিত নীতিমালা নেই। আবার ভারতে এর দ্বৈত ব্যবহার দেখা গেছে, যা একটি ব্যাপক এবং দূরদর্শী কাঠামোর জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে এআইয়ের বিদ্বেষপূর্ণ ও গঠনমূলক উভয় ব্যবহারই দেখা গেছে; যেমন নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করা ও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পুনর্নির্বাচনী প্রচারণায় এআইয়ের ব্যবহার। এর ফলে মার্কিন নির্বাচনে জেনারেটিভ এআইয়ের নৈতিক ব্যবহার নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম হয়েছে।

একইভাবে ২০২৪ সালের ভারতের সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো এআই-জেনারেটেড কনটেন্টের পেছনে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ডিপ ফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নরেন্দ্র মোদির বহুভাষিক ভয়েসওভার তৈরি করা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রচারণামূলক কাজে এর ব্যবহার। গণতন্ত্রের প্রেক্ষাপটে তাই বিশ্বজুড়ে নির্বাচনে এআইয়ের ব্যবহার ও এর বিস্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

৭.

বাংলাদেশে নির্বাচনে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে এক নতুন উদ্বেগের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশে এর আগে যেহেতু নির্বাচনে এআইয়ের ব্যবহার খুব একটা দেখা যায়নি এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে এখনো তেমন দক্ষতা গড়ে ওঠেনি, কাজেই নির্বাচনে এর অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে দ্রুত মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার উদ্বেগের কারণে বিশেষজ্ঞরা এআইয়ের ব্যবহারে আরও সুরক্ষাব্যবস্থা ও বিধিনিষেধের ওপর জোর দেন। অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে এই প্রযুক্তিগত বিষয়ে দক্ষতা এবং জ্ঞানের অভাব রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় এবং নির্দলীয় নাগরিক-সমাজগোষ্ঠীর সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে এই সক্ষমতা তৈরি করা সম্ভব। মূল লক্ষ্য হলো এআই যেন নির্বাচনকর্মীদের জন্য একটি ‘সহায়ক সরঞ্জাম’ হিসেবে কাজ করে, কোনো ‘ব্ল্যাক বক্স’ বা ‘প্রতিস্থাপন প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে নয়।

এই নতুন যুগে সফলভাবে চলার জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং নিরীক্ষণের মতো নীতিগুলোর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকেরা এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে পারেন, যা উদ্ভাবনের সম্ভাবনা এবং গণতান্ত্রিক অখণ্ডতা রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য আনে।

যেমন: এআই দিয়ে কোনো কনটেন্ট তৈরি করা হলে তা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করা, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা কর্তৃত্ব যেন মানুষের তত্ত্বাবধানেই থাকে, তা নিশ্চিত করা এবং এআই সিস্টেমগুলোর স্বাধীন মূল্যায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা।

শেষ পর্যন্ত এআই তার ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যকেই প্রতিফলিত করে। গণতান্ত্রিক অখণ্ডতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে এই প্রযুক্তিকে গঠনমূলক
কাজে ব্যবহার করা এবং এর ক্ষতির সম্ভাবনা কমানোর ওপর।

মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ