কিশোরীকে উদ্ধারে গিয়ে মারধরে আহত ৩ পুলিশ
Published: 5th, May 2025 GMT
যশোর থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে পালিয়ে যাওয়া এক কিশোরীকে উদ্ধার করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য। সোমবার (৫ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পৌর শহরের বাকুলিয়া গ্রামে ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- যশোর কোতয়ালি থানার এএসআই তাপস কুমার, কনেস্টবল রাবেয়া খাতুন ও ফারজানা খাতুন।
এলাকাবাসী জানান, বাকুলিয়া গ্রামের সুজন হোসেন যশোরের পুলের হাট এলাকার এক কিশোরীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গত ২ মে যশোর কোতয়ালি থানায় অভিযোগ দেন মেয়েটির বাবা। এরপর মেয়েটিকে আনতে তার পরিবারের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করে সুজনের পরিবার। এরই মধ্যে মেয়েটি বাকুলিয়া গ্রামে চলে আসে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা
বগুড়ায় ২ সাংবাদিকের ওপর হামলা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
সোমবার দুপুরে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে যশোর কোতয়ালি থানার চার পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে এবং মেয়ের বাবা ও ভাই বাকুলিয়া গ্রামে আসেন। মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে নারী কনস্টেবল রাবেয়া তাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মেয়েটি যেতে অস্বীকৃতি জানালে নারী কনস্টেবল রাবেয়া ও ফারজানা সবাইকে ধাক্কা দিয়ে তাকে (মেয়ে) গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করে।
এসময় স্থানীয় নারীরা ঠেকাতে গেলে তাদের সঙ্গে নারী পুলিশ কনস্টেবলের ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি হয়। এ সময় নারী কনস্টেবল রাবেয়া এক নারীর নাকে ঘুষি দেন। ওই নারী রক্তাক্ত হওয়ার স্থানীয় জনতা পুলিশকে ধাওয়া দেয় এবং মারধর করে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
ঘটনাটি জানতে পেরে কালীগঞ্জ থানার ওসি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। তারা কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বাকুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আহমেদ সুজন বলেন, “সাদা পোশাকে কয়েকজন পুলিশ ওই ছেলের (সুজন) বাড়িতে আসে। এ সময় তাদের বসতে বলে ছেলের পরিবারের লোকজন। তারা কথা না শুনে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। ছেলেকে মারধর করেন এএসআই তাপস কুমার। কিশোরীকে আনার সময় মাছুরার নাকে ঘুষি মারেন কনস্টেবল রাবেয়া। তার নাক দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “পুলিশের কেউ ইউনিফর্ম পরিহিত ছিল না। ঘটনার পরে পুলিশ কনস্টেবল রাবেয়া মাইক্রোবাসের মধ্যে ইউনিফর্ম পরেন।”
আহত মাছুরা খাতুনের স্বামী আসাদুজ্জামান বলেন, “বাড়ির পাশের ঘটনা হওয়ায় আমার স্ত্রী সেখানে যান। হঠাৎ পুলিশ আমার স্ত্রীর নাকে ঘুষি মারে। আমার স্ত্রীর অবস্থা বেশি ভালো না। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
কালীগঞ্জ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, “বাকুলিয়া গ্রামে এক কিশোরীকে উদ্ধারে গেলে হামলার শিকার হন তিন পুলিশ সদস্য। তাদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যশোর পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত অভ য গ ত ন প ল শ সদস য ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিলের ওপর রায় প্রদান শুরু
ঢাকার পল্লবীতে এক দশকের বেশি সময় আগে পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেনের (জনি) মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিলের ওপর রায় প্রদান শুরু করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার প্রথম দিনের মতো রায় প্রদানের পর আগামীকাল সোমবার পরবর্তী দিন রাখেন।
২০১৩ সালে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন প্রণয়ন করা হয়। ইশতিয়াক হোসেনকে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট মামলা করা হয়, যেটি ওই আইনে করা প্রথম কোনো মামলা। এই মামলায় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রায় দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ।
বিচারিক আদালতের রায়ে পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল হাসান ও এএসআই কামরুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। এঁদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। অপর দুই আসামি পুলিশের সোর্স (তথ্যদাতা) সুমন ও রাসেলের সাত বছর কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন বিচারিক আদালত।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তিন আসামি ২০২০ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। তাঁরা হলেন জাহিদুর রহমান, রাশেদুল হাসান ও রাসেল। ২০২১ সালে হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে তিন আসামির আপিলের ওপর একসঙ্গে গত ৯ জুলাই হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। ষষ্ঠ দিনে ৭ আগস্ট শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ১০ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করেন। আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টায় রায় প্রদান শুরু করেন আদালত। মাঝে দুপুরে এক ঘণ্টা বিরত দিয়ে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত রায় ঘোষণা চলে।
আদালতে আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান এবং আইনজীবী মো. আবদুর রাজ্জাক এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার উপস্থিত ছিলেন। বাদীপক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম। রায় ঘোষণার পুরো সময় মামলার বাদী নিহত ইশতিয়াকের ভাই ইমতিয়াজ হোসেন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম দিনের রায়ে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. আবদুর রাজ্জাক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২৪ জন সাক্ষী রয়েছে। প্রথম দিনের রায়ে সাক্ষীদের বক্তব্য ও জেরা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। রায় ঘোষণা শেষ হয়নি। অসমাপ্ত রায় ঘোষণার জন্য সোমবার দিন রাখা হয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুসারে, দণ্ডিত পাঁচ আসামির মধ্যে কামরুজ্জামান (তৎকালীন এএসআই) শুরু থেকে পলাতক। অপর আসামি সুমন সাজা ভোগ করে বেরিয়েছেন।
ঘটনা সম্পর্কে মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ইরানি ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. বিল্লালের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় সেখানে থাকা ইশতিয়াক ও তাঁর ভাই ইমতিয়াজকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে দুই ভাইয়ের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর সুমনের ফোন পেয়ে পুলিশ এসে ইশতিয়াক ও ইমতিয়াজকে ধরে নিয়ে যায় এবং থানায় নিয়ে দুই ভাইকে নির্যাতন করে। ইশতিয়াকের অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
(বাম থেকে) পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান, কামরুজ্জামান, রাশেদুল ইসলাম, পুলিশের কথিত সোর্স সুমন ও রাসেল