রাজুতে ফাঁসির মঞ্চের প্রতিকৃতিটি ‘শেখ হাসিনার’, ‘জাগ্রত জুলাইয়ের’ ছয় দফা ঘোষণা
Published: 6th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ফাঁসির মঞ্চের প্রতিকৃতিটি ‘শেখ হাসিনার’ এবং কিছু গণমাধ্যম এ ঘটনাকে ‘নারীর প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে ‘ভুলভাবে’ উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে উল্লেখ করে সমাবেশ করেছে ‘জাগ্রত জুলাই’ নামের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বিচারের দাবি জানায় সংগঠনটি। এর আগে ১ মে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার ফাঁসির মঞ্চের প্রতিকৃতি’ স্থাপনের বিষয়ে সংগঠনটি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে। তারা বলেছে, এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ কর্মসূচি, যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী অপরাধের বিচার দাবি করা হয়েছে।
তবে ৩ মে কিছু গণমাধ্যম এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ‘নারীর প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে প্রচার করলে সংগঠনটি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
এ বিষয়ে সোমবার সমাবেশে ‘জাগ্রত জুলাই’–এর সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আশরাফ আল দীন বলেন, ‘এই প্রতিবাদ ছিল নিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক ভাষ্য। একে বিকৃত করে নারীবিদ্বেষ হিসেবে উপস্থাপন করা সাংবাদিকতার নৈতিক অবক্ষয়ের পরিচায়ক।’
সংগঠনের সহসভাপতি কবি আবিদ আজম বলেন, ‘শহীদদের তালিকা নিরূপণ ও আহতদের চিকিৎসায় ব্যর্থ এই সরকার শেখ হাসিনার বিচারও নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই আমরা প্রতীকী ফাঁসির কুশপুত্তলিকা রাজু ভাস্কর্যের নিচে ঝুলিয়েছিলাম। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত্যাকারী, পিশাচ ও ডাইনি— সেই বিবেচনায় প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু একে নারীবিদ্বেষ বলে প্রচার করেছে ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন খবরের কাগজ।’
আবিদ আজম আরও বলেন, ‘জুলাইতে নারীদের ব্যবহার করে আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামীপন্থী আমলারা এখনো সচিবালয়ে সক্রিয় রয়েছে। আমরা সম্প্রতি আমাদের সদস্য হাসনাতের ওপর হামলার নিন্দা জানাই এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিচার দাবি করি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলি।’
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (বোরহান) বলেন, ‘জাগ্রত জুলাই কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংগঠন নয়। আমাদের ১ মের কর্মসূচি ছিল একনায়কতন্ত্রবিরোধী, হেফাজতের ৩ মের কর্মসূচির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিছু গণমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের কর্মসূচিকে বিকৃত করেছে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাফেজ আকরাম হোসেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাদের জঙ্গি, নারীবিরোধী বলে প্রচার করা হয়েছিল। অথচ শেখ হাসিনার একমাত্র পরিচয় সে একজন খুনি। আজ নারী নেত্রীদের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী কর্মীরা নারীদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন কবি জুনমুরাইন, কবি রফিক লিটন, সহসাধারণ সম্পাদক হাসনাইন ইকবাল, নাট্যকার হুসনে মোবারক, কবি তাজ ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজ সাইফুল্লাহ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আল নাহিয়ান, কবি রহমান মাজিদ ও সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক কবি লোকমান হোসেন জীবন প্রমুখ।
সমাবেশে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচারের বিরুদ্ধে সংগঠনটি ছয় দফা দাবি ঘোষণা করে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারকারী গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ; পিলখানা, শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু; ‘জুলাই বিপ্লব’–এর ঘোষণাপত্র প্রকাশ ও বিপ্লবকালীন কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি প্রদান; আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ; ফ্যাসিবাদের সহযোগী গণমাধ্যমকে বিচারের আওতায় আনা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা।
সংগঠনটি জানায়, তারা তাদের সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ স কর য র স গঠনট আম দ র স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
মাসরুর আরেফিন এবিবির নতুন চেয়ারম্যান
দেশের শীর্ষ ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সিটি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন। সম্প্রতি এবিবির পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় তাঁকে সংগঠনটির নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। তিনি এবিবির আগামী বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) পর্যন্ত অর্থাৎ অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করবেন।
এবিবি আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করায় এই সংগঠনের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয় এবং নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
এবিবির পরিচালনা পর্ষদের একই সভায় পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আলী সংগঠনটির নতুন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের এমডি ও সিইও আবুল কাশেম মো. শিরীন এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর আগের দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাসরুর আরেফিন ১৯৯৫ সালে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে যোগ দিয়ে ব্যাংকিং কর্মজীবন শুরু করেন। ৩০ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কাতার, এএনজেড ব্যাংকের মেলবোর্ন হেড অফিস, আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক এনএ প্রভৃতি ব্যাংকে কাজ করেন। ছয় বছর ধরে তিনি সিটি ব্যাংকের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবিবিতে প্রায় চার বছর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করার পর এবার তিনি সংগঠনটির নেতৃত্বে এলেন। ব্যাংকার পরিচয়ের বাইরে তিনি একজন লেখক ও অনুবাদক হিসেবেও সুপরিচিত।
এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ২০০৮ সালে পূবালী ব্যাংকে চিফ টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০১৬ সালে তিনি ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি), ২০২০ সালে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ও পরে এমডি ও সিইও পদে উন্নীত হন। এই ব্যাংকের কর্মজীবনে তিনি চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও), চিফ অ্যান্টি মানি লন্ডারিং অফিসার, চিফ রিস্ক অফিসার ও ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেন। এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে কয়েক বছর ধরে কাজ করছিলেন।