প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস উদযাপন করা হয়। সে হিসেবে এ বছর ১১ মে উদযাপিত হবে মা দিবস। এ দিনটি মাকে বিশেষভাবে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন তানজিনা আকতারী
মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক শুধু রক্তের বন্ধনে গাঁথা নয়, এটি পুরোপুরি আত্মার বন্ধন। মা ও শিশুর সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে কোমল, গভীর ও মূল্যবান সম্পর্কগুলোর একটি। মা মানেই স্নেহ ও আদরের অনুভূতি, নিরাপদ আশ্রয়, নির্ভরতার প্রতীক। এ সম্পর্ক নিঃস্বার্থ, গভীর এবং চিরন্তন। শিশু গর্ভাবস্থায় থাকতেই মায়ের সঙ্গে অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে এ সম্পর্ক নতুন করে রচিত হয়। মায়ের ভালোবাসা, স্নেহ ও মমতা শিশুর জীবনের প্রথম ও সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। মা শিশুর প্রথম ও সেরা শিক্ষক। শিশুর মুখে প্রথম বুলি ফোটে মায়ের ভাষায়।
সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম লিভিং উইথ ওয়েলনেসের মনোবিজ্ঞানী সোনিয়া জান্নাত বাঁশরীর কাছে। তিনি জানান, ‘জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর সম্পর্কগুলোর অন্যতম মা ও সন্তানের সম্পর্ক। মাতৃগর্ভ থেকে সন্তানের সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জন্মের পর মায়ের বুকই সন্তানের সবচেয়ে শান্তির ও নিরাপদ স্থান। বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীর হয়। সন্তানকে স্পর্শ, আদর, বুকের সংস্পর্শে থাকা, চোখে চোখে তাকানোর দ্বারা মায়ের সঙ্গে আন্তরিকতা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা তৈরি। মায়ের ভালোবাসায় সন্তান নিরাপত্তা বোধ করে ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।’
১২ থেকে ১৮ বছর ছেলেমেয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বয়সে সন্তান শিশু থেকে কৈশোরে পদার্পণ করে। তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয় হরমোনের প্রভাবে। ছেলেদের স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের মাসিক চক্র এ বয়সেই শুরু হয়; বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। নতুন এ শারীরিক পরিবর্তনের ফলে জীবনের সবচেয়ে জটিল সময়ে তারা পদার্পণ করে। তাই এ সময় মাকে আদরণীয়, স্নেহময়, বন্ধু, সংবেদনশীল ও কৌশলী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন।
খুনসুটি, প্রশ্ন-উত্তর, ভালোবাসা ও যুক্তির মাধ্যমে সন্তানকে সঠিক ও ভুলের পার্থক্য শেখানো মায়ের দায়িত্ব। সেই শেখানোয় যেন কঠোরতা প্রকাশ না পায়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। কৈশোরেই তাদের শারীরিক, মানসিক ও ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়। এ বয়সীদের সঙ্গে মাকে হতে হবে ভালো বন্ধু, শিক্ষক। সন্তানের যাতে কখনও মনে না হয় তার কথা বা চাওয়া মা বুঝতে পারছেন না। সন্তান এ বয়সে মায়ের কথা শুনতে চায় না, আমি নিজেই যথেষ্ট বড়, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারি– এমন মনোভাব প্রকাশ করতে পারে। তাই বকাঝকা না করে সন্তানকে নির্ভয়ে ও অকপটে তার মনের কথা ও সিদ্ধান্ত জানানোর স্বাধীনতা দিতে হবে। এ বয়সীদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে সন্তান আবেগপ্রবণ, জেদি বা একা থাকতে চাইতে পারে। কোনো তারকা, গায়ককে দেখে ওরা অনুপ্রাণিত হয়, বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ফলে মাকে পরিস্থিতি বুঝে পরিবর্তনগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে ও ধৈর্য ধরে সন্তানের আচরণ সামলাতে হবে। মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ছেলেমেয়েকে আত্মবিশ্বাসী, সচেতন ও সুস্থ চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
যুবক ও তরুণ বয়সে সন্তানের সঙ্গে মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে সবচেয়ে ভালো। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকে নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। মায়েদেরও সন্তানকে আমার ছেলে বা মেয়ে ছোটই আছে বলে আঁকড়ে রাখার মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। তবে সন্তানকে যে কোনো
সময় বা প্রয়োজনে সুন্দর ও সঠিক পরামর্শ দেওয়া উচিত ও নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করা উচিত।
সন্তানের বিয়ের পর সুন্দরভাবে পরিবার গঠনের পরামর্শ দিতে হবে মাকে। মায়েদের এমন আচরণ বা ব্যবহার করা উচিত নয়, যা তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। সংসারে অযাচিত জোর খাটানো থেকে বিরত থেকে সন্তানকে ধীরে ধীরে পরিবারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। বয়স্ক মায়েদের সেবাযত্ন, ভালোবাসা, মমতা দিয়ে আগলে রাখা দায়িত্ব তখন বর্তাবে সন্তানের কাঁধে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র সবচ য় র বন ধ এ বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন
এশিয়া কাপ-২০২৫ এ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা কেবল মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, পৌঁছে গেছে শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থাতেও। খেলোয়াড়দের আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনায় এবার শাস্তির মুখে পড়েছেন দুই দেশের কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সূর্যকুমার যাদব ও হারিস রউফের ওপর জরিমানা ও ‘ডিমেরিট পয়েন্ট’ আরোপ করেছে। আর ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ পেয়েছেন আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা।
আইসিসির এলিট প্যানেল অব ম্যাচ রেফারিরা সেপ্টেম্বর ১৪, ২১ ও ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোর কয়েকটি ঘটনার তদন্ত করেন।
প্রথমবার, সেপ্টেম্বর ১৪:
প্রথম ম্যাচেই মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ম্যাচে ভারতের সূর্যকুমার যাদব এবং পাকিস্তানের হারিস রউফ ও সাহিবজাদা ফারহানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় আইসিসির আচরণবিধির ২.২১ অনুচ্ছেদ ভঙ্গের দায়ে। যেখানে বলা আছে, এমন আচরণ যা খেলাটির সুনাম ক্ষুণ্ন করে।
ফলাফল হিসেবে সূর্যকুমারকে জরিমানা করা হয় ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং দেওয়া হয় দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। ফারহান পান আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা ও এক ডিমেরিট পয়েন্ট। রউফের শাস্তিও একই; ৩০ শতাংশ জরিমানা ও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট।
দ্বিতীয়বার, সেপ্টেম্বর ২১:
এক সপ্তাহ পরের ম্যাচে আবার বিতর্ক। ভারতীয় পেসার অর্শদীপ সিং অভিযুক্ত হন আইসিসির ২.৬ অনুচ্ছেদে, “অপমানজনক ভঙ্গি প্রদর্শনের” অভিযোগে। তবে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের শুনানিতে প্রমাণ না মেলায় তিনি মুক্তি পান। কোনো শাস্তি হয়নি তার।
ফাইনালের উত্তেজনা, সেপ্টেম্বর ২৮:
এশিয়া কাপের ফাইনালও ছাড় পায়নি শৃঙ্খলাভঙ্গের ছোঁয়া থেকে। ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ স্বীকার করেন যে তিনি খেলাটির মর্যাদাবিরোধী আচরণ করেছেন। ফলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করা হয় ও দেওয়া হয় এক ডিমেরিট পয়েন্ট। যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করেছিলেন, তাই আলাদা শুনানির প্রয়োজন হয়নি।
অন্যদিকে, হারিস রউফ আবারও জড়িয়ে পড়েন একই ধরনের ঘটনায়। ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসনের শুনানিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি আবার জরিমানা পান ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং আরও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। এতে তার মোট ডিমেরিট পয়েন্ট দাঁড়ায় চার। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় ফেলে। ফলে নভেম্বর ৪ ও ৬ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের দুইটি ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেলেন তিনি।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, লেভেল–১ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা এবং দুই ডিমেরিট পয়েন্ট পর্যন্ত দেওয়া যায়। কোনো খেলোয়াড় যদি ২৪ মাসের মধ্যে চার বা তার বেশি ডিমেরিট পয়েন্ট পান, তবে তা রূপান্তরিত হয় সাসপেনশন পয়েন্টে। অর্থাৎ পরবর্তী ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা অবশ্যম্ভাবী।
এশিয়া কাপে শাস্তিপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের তালিকা:
সূর্যকুমার যাদব (ভারত): ম্যাচ ফি’র ৩০% জরিমানা, ২ ডিমেরিট পয়েন্ট।
সাহিবজাদা ফারহান (পাকিস্তান): আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।
হারিস রউফ (পাকিস্তান): দুই আলাদা অপরাধে দু’বার জরিমানা, মোট ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট ও ২ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা।
জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত): সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।
অর্শদীপ সিং (ভারত): অভিযোগ থেকে মুক্ত, কোনো শাস্তি নয়।
এশিয়া কাপের মাঠে যেমন ব্যাট-বল লড়াই জমেছিল, মাঠের বাইরে ঠিক তেমনই শৃঙ্খলাভঙ্গের নাটকও কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। ক্রিকেটের সৌন্দর্য রক্ষায় এবার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে আইসিসি- “খেলা উত্তেজনার হতে পারে, কিন্তু সীমা অতিক্রম নয়।”
ঢাকা/আমিনুল