ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুই দেশই অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর দাবি করেছে। বৃহস্পতিবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, “অপারেশন সিন্দুর একটি চলমান অপারেশন”।

এই পরিস্থিতিতে দুটি দেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো কী অবস্থান নেবে, তা নিয়ে এই প্রতিবেদন।

‘মিডল ইস্ট ইনসাইটস' নামের প্ল্যাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা ড.

শুভদা চৌধুরী বলেছেন, “ভারত ও পাকিস্তানের আশপাশের দেশগুলোয় আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা মানুষের সংখ্যাই বেশি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এরকম মানুষের সংখ্যাটা খুব বড়।”

আরো পড়ুন:

পাকিস্তান ৩০০-৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে: ভারত

আঞ্চলিক বাহিনীকে সক্রিয় করেছে ভারত

তার কথায়, “কোভিড মহামারির পর থেকে এই সব দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে, তাই এ ধরনের দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি মনে করেন, ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো চেষ্টা করবে যাতে এই উত্তেজনা তাড়াতাড়ি শেষ হয়।

বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কার অবস্থান কী
আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিভিন্ন দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গত বছর বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের পতন হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে ভারতের মতপার্থক্য রয়েছে।

কামার আগা মনে করেন, চীনও অনেক দেশে বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু দেখা গেছে চীন ওইসব বিনিয়োগ থেকে বেশি লাভবান হয়েছে, ফলে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ আবারও ভারতের কাছাকাছি চলে এসেছে।

শুভদা চৌধুরী বলছেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে, তাহলে বিভিন্ন প্রতিবেশীর ওপর এর একেক রকম প্রভাব পড়বে। যদি নেপালের দিকে তাকানো যায়, তাদের ৬০ শতাংশ বাণিজ্যই ভারতের সঙ্গে, যেটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

“বন্দর এবং বাণিজ্যের ব্যাপারে নেপাল সমস্যায় পড়বে। নেপাল ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং তারা চাইবে এই সংঘাত যাতে দ্রুত শেষ হয়। তবে চীন এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নেপালের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে,” বলছিলেন শুভদা চৌধুরী।

তার মতে, ভুটানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ ভারতের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখানকার পর্যটন শিল্পও প্রভাবিত হবে।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ও সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ধনঞ্জয় ত্রিপাঠি মনে করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনার বিষয়ে আফগানিস্তান ছাড়া বাকি দেশগুলো নিরপেক্ষ এবং নীরব থাকবে।

অধ্যাপক ত্রিপাঠির কথায়, “ভারত এই অঞ্চলের একটা বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং ছোট ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের একাধিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর কাছে পর্যটন থেকে আয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা চাইবে যে এই সংঘাত তাড়াতাড়ি শেষ হোক।”

ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় ভারত শ্রীলঙ্কাকে অনেক সহায়তা করেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিলেন।

ধনঞ্জয় ত্রিপাঠি মনে করেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সময়ে এই দেশগুলো চাইবে যাতে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হয়।”

পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কামার আগাও এর সঙ্গে একমত বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, “প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।”

কামার আগা বলেন, “সংঘাত বাড়লে অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। কারণ যুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা ব্যয় বেড়ে যায় এবং তাতে কর্মসংস্থান হয় না। এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পাকিস্তানের কিছুটা কাছাকাছি চলে এসেছে এবং তাদের বড় ক্ষতি হতে পারে। তবে বাংলাদেশে ভারতের বড়সড় বিনিয়োগ আছে।”

চীনের অবস্থান
ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে অনেকেই চীনের অবস্থানের দিকে নজর রাখছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং ভারতের সঙ্গেও তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে।

চীন নিজেই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, আর তার ফলে চীনের নিজস্ব অর্থনীতিতেও সংকট দেখা দিচ্ছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ভারতের বিমান হামলাকে ‘দুঃখজনক' বলে অভিহিত করেছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “তারা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন”।

ওই মুখপাত্র বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের প্রতিবেশী এবং সবসময় তাই থাকবে। তারা আবার চীনেরও প্রতিবেশী। চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে।”

“উভয় দেশকে শান্ত থাকার, সংযম বজায় রাখার এবং পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে, এমন পদক্ষেপ এড়িয়ে” চলতে বলেন ওই মুখপাত্র।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীন কখনোই চাইবে না পাকিস্তান অস্থিতিশীল থাকুক, যাতে তাদের কোটি কোটি বিনিয়োগ নষ্ট হয়।

পাকিস্তানে ২০০৫ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন।

এছাড়া চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) এবং বেল্ট অ্যান্ড রোডের আওতায় পাকিস্তানে বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে চীন।

তবে পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কামার আগা বলছেন, “চীন চায় যে এই সংঘাত চলতে থাকুক, তাদের পক্ষে এটা ভালো। চীনের সাম্প্রতিক কিছু বিবৃতিও তাই বলছে। সংঘাত বাধলে পাকিস্তানের কাছে অস্ত্র বিক্রির সুযোগ পাবে চীন।”

আফগানিস্তানের অবস্থান কী হবে?
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল হামলার পর আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছিল, এ ধরনের ঘটনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ভারতের ‘অপারেশন সিদুর' এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়েও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করে এই সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনার মাধ্যমে এই উত্তেজনা অবসানের আহ্বান জানিয়েছে।

তবে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ চলছে।

কামার আগা বলেন, “আফগানিস্তানের কোনো সরকারই পাকিস্তানের সঙ্গে তার সীমানা অর্থাৎ ডুরান্ড লাইনকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অনেক পুরনো সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। ভারত-পাকিস্তান সংঘাত চরম আকার ধারণ করলে আফগানিস্তানকে ভারতের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাবে।”

“ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই এই বিবাদ চলছে, যখন দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ হয়েছিল এবং ডুরান্ড লাইনকে দুই দেশের সীমানা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল,” বলছিলেন আগা।

আফগান রাজা ও ব্রিটিশ শাসিত ভারতের বিদেশ মন্ত্রী স্যার মর্টিমার ডুরান্ডের ১৮৯৩ সালে একটি চুক্তির পর আফগানিস্তানের কিছু অংশ ব্রিটিশ-ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর অনেক আফগান শাসক ডুরান্ড চুক্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলছেন, "দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের সঙ্গেই ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে এবং এই সংঘাত বাড়লে এই দেশগুলোর উদ্বেগ বাড়বে।”

ইরানের উদ্বেগ কেন?
ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি চলতি সপ্তাহে পাকিস্তান ও ভারত সফর করেছেন। ইরান পহেলগাম হামলার নিন্দা করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাবও দিয়েছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পহেলগাম হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেছিলেন এবং ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

ইরান ও পাকিস্তান প্রতিবেশী এবং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

কামার আগা বলেন, “ইরান যত দ্রুত সম্ভব ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের অবসান দেখতে চায়, কারণ এ অঞ্চলে সংঘাত বাড়লে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত থাকার ফলে তাদের দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

অন্যদিকে ভারত ও ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিক, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কারণে বাণিজ্যিক সম্পর্কও বেশ মজবুত।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত ও ইরানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫০ কোটি ডলার।

ভারত ইরানের শীর্ষ পাঁচটি বাণিজ্যিক অংশীদারের অন্যতম। প্রতি বছর ইরানে প্রায় একশো কোটি ডলার মূল্যের চাল পাঠায় ভারত।

ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতে ইরানের তেল রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৯ সালের আগে ভারত তার তেলের চাহিদার ১০ শতাংশ মেটাত ইরানের তেল থেকে।

এছাড়া ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারত প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে।ভারত চাবাহার দিয়ে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার বাজারে প্রবেশ করতে চায়।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলছেন, “দুই দেশের সঙ্গেই ইরানের সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা দ্রুত এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে চায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে চায়।”

ঢাকা/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আফগ ন স ত ন র র অবস থ ন ক ম র আগ এই স ঘ ত পর স থ ত বলছ ন চলম ন ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা

দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’  অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক কোটেশন সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো (২৮-২৯ জুলাই ২০২৫ সময়ের জন্য ৩২তম) এলএনজি আমদানি করবে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি ২২ লাখ ৮৯ হাজার ৪২৭ টাকা।

সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে দেশীয় উৎপাদিত গ্যাসের পাশাপাশি কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপিত দু ’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে জি টু জি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২.৫ এমটিপিএ (মিলিয়ন টন পার এনাম) এবং ওমান হতে ১০ এমটিপিএ এলএনজি অর্থাৎ মোট ৩.৫ এমটিপিএ (৫৬ কার্গো) এলএনজি ক্রয় করা হচ্ছে। এছাড়া, চাহিদার আলোকে অ্যানুয়াল ডেলিভারি প্রোগ্রাম (এডিপি) এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি ক্রয় করা হয়।

আগামী জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০২৫ সময়ে স্পট মার্কেট থেকে ৫৯ কার্গো এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর তারিখে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অনুমোদন দেওয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা আগামী ২৮-২৯ জুলাই সময়ে এক কার্গো এলএনজি ক্রয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। 

উল্লেখ্য, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য  ‘পিপিআর-২০০৮’ এর বিধি ৮৫ অনুসরণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্টস (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী ২৩টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

‘পিপিআর-২০০৮’-এর বিধি-৮৫ অনুযায়ী গত ১৩ জুন  তারিখে কোটেশন আহ্বান করা হলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোটেশন না পাওয়ায় এলএনজি কার্গো ক্রয়ের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে গত ১৮ জুন তারিখে পুনরায় কোটেশন আহ্বান করে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে এলপিএস সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কোটেশন দাখিলের জন্য ই-মেইলে জানানো হয়। বর্ণিত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে দাখিলকৃত ৫ টি প্রতিষ্ঠানের কোটেশন দরপত্র ও প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি কারিগরি ও আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করে সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নিকট দাখিল করে।

দাখিলকৃত ৫টি কোটেশনের মধ্যে ৫টি কোটেশনই রেস্পন্সিভ হয়, এরমধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লি. প্রতি ইউনিটের দাম ১৫.৪৫০০ মা.ডলার দর উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহতব্য এলএনজির পরিমাণ ৩২,০০,০০০ এমএমবিটিইউ। স্বাক্ষরিত এমএসপিএ অনুয়ায়ী সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কম-বেশি বিবেচনায় সরবরাহতব্য এলএনজি’র পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ হতে পারে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৫.৪৫ মা.ডলার হিসেবে  ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৫১,৯১২,০০০.০০ মা.ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৩৭ কোটি ৪৭ লাখ ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা (এআইটি ব্যতিত)।

এলএনজি আমদানিতে ২ শতাংশ এআইটি প্রযোজ্য বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ১২,৭৪,৯৫,৮৭২.০০ টাকা। অর্থাৎ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ হবে সর্বমোট (৬৩৭,৪৭,৯৩,৬০০.০০+১২,৭৪,৯৫,৮৭২.০০)=৬৫০ কোটি ২২ লাখ ৮৯ হাজার ৪২৭ টাকা।

এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ