পূর্বশত্রুতার জেরে মব তৈরি করে রইস উদ্দিনকে হত্যা করা হয়
Published: 9th, May 2025 GMT
পূর্বশত্রুতার জের ধরে ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে ‘মব’ তৈরি করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগরীর সাবেক সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর পরিবার এ অভিযোগ করেছে।
ইমাম ও খতিব মাওলানা রইস উদ্দিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন ও বিনা চিকিৎসায় কারা হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং এ ঘটনার প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রইস উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদা আক্তার বলেন, মাওলানা রইস উদ্দিন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড হায়দারাবাদ এলাকার আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন। গত ২৭ এপ্রিল সকাল আটটায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে ধর্ষণের পরিকল্পিত ঘটনা সাজিয়ে একটি মব তৈরি করা হয়। তাঁকে গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পেটে, বুকে, পিঠে, তলপেটে, চোখের নিচে ও মাথায় আঘাতের পর আঘাত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, চার ঘণ্টা মারধর করার পর রইস উদ্দিনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে তাঁকে পুবাইল থানা থেকে গাজীপুরের আদালতে তোলে। আদালত তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠান। জেলা কারাগারে রাত সাড়ে তিনটায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন জানিয়ে এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান রইস উদ্দিনের স্ত্রী। পাশাপাশি তাঁর মৃত্যুর পেছনে থানা-পুলিশ এবং কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল কি না, তা সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারের প্রতি দাবি জানান সাজেদা আক্তার।
রইস উদ্দিন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন জানিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারে প্রতি দাবি জানান তাঁর স্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে রইস উদ্দিনের মা রহিমা বেগম বলেন, ‘অপবাদ দিয়ে একমাত্র কলিজার টুকরাকে হত্যা করে আমার থেকে দূরে সরানো হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার চাই। আসামিদের ফাঁসি চাই।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আসামিরা এখনো নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘পীর বাবার দোয়া’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মামলার এক সাক্ষীর বাড়িতে আসামিরা হামলা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রথম আলোকে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনার দিন মামলা নিতে পুলিশ অবহেলা করেছে। তাই মামলার আরজিতে সেটা উল্লেখ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ে বিচার পাবেন বলে আশা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ইকবাল হাসান ও শাহীদুল আলম, রইস উদ্দিনের মেয়ে সাইয়্যিদা মাহজাবিন মাহিরা, ভাই মিজানুর রহমান ও হাফেজ ওমর ফারুক, ভগ্নিপতি আব্বাস উদ্দিন প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যায় দুই কারণ সামনে রেখে তদন্ত করছে পুলিশ
গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামানকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুই কারণ সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এর একটি হচ্ছে গাজীপুরে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের ধাওয়া দেওয়ার ভিডিও ধারণ করা এবং আরেকটি হচ্ছে পূর্বশত্রুতার বিষয়। পুলিশের দাবি, ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করেছে তারা। তাঁদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. মিজান ওরফে কেটু মিজান, তাঁর স্ত্রী গোলাপি, মো. স্বাধীন ও আল আমিন। পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এই চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা ছিনতাইকারী দলের সদস্য। এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে।
পুলিশ জানায়, আসাদুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ পরই স্থানীয় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেই ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়। এরপর তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের তিনটি দল ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় অভিযানে নামে। গতকাল রাত আনুমানিক ১০টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর থেকে মো. মিজান ওরফে কেটু মিজান ও তাঁর স্ত্রী গোলাপিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের অপর একটি দল গাজীপুর শহরের পাশ থেকে স্বাধীনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, আসাদুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ পরই স্থানীয় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেই ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়।নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন