ভাঙ্গায় লাইনচ্যুত হওয়ার ১৩ ঘণ্টা পর ছাড়ল জাহানাবাদ এক্সপ্রেস, অন্য ট্রেনেরও সূচি বিপর্যয়
Published: 10th, May 2025 GMT
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ঢাকা থেকে খুলনাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর চলাচল শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের বামনকান্দা এলাকায় ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।
ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনের স্টেশনমাস্টার সুমন মৃধা জানান, আঁকাবাঁকা লাইন মেরামত করার পর আজ শনিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর অন্য একটি ইঞ্জিন নিয়ে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
এদিকে এই দুর্ঘটনার জন্য খুলনা-রাজবাড়ী-ঢাকা পথে চলাচলকারী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও নকশিকাঁথা ট্রেন দুটির চলাচলসূচির বিপর্যয় ঘটেছে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৫ ঘণ্টা বিলম্বে আজ সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ভাঙ্গা জংশন অতিক্রম করে। আর নকশিকাঁথা ট্রেনটি নির্ধারিত (সকাল ৫টা ৩০ মিনিট) সময়ের আড়াই ঘণ্টা দেরিতে সকাল আটটার দিকে রাজবাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত আটটার দিকে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসে। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটির খুলনা পৌঁছানোর কথা ছিল। ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনের যাত্রাবিরতি শেষে রাত ৯টা ২০ মিনিটের পর জংশন থেকে বের হয় ট্রেনটি। পরে সাড়ে নয়টার দিকে জংশনের অদূরে এক কিলোমিটারের মধ্যে সিগন্যালের ভুল ও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য ট্রেনটির ইঞ্জিন ও লাগেজ বগি লাইনচ্যুত হয়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনের উপপরিদর্শক (এসআই) খাইরুজ্জামান শিকদার জানান, ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি হয়েছে। কেউ কেউ সড়কপথে গতকাল রাতেই খুলনা চলে গেছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের বুকে শেষ হলো রাস উৎসব
খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ট্রলার থেকে নামলেন কয়রার ঘাটে। তিন দিন পর তিনি ফিরেছেন সুন্দরবনের গভীর দুবলারচরের আলোরকোল থেকে। চোখে–মুখে ক্লান্তি, কিন্তু ভেতরে প্রশান্তি।
বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ‘গতকাল বুধবার ভোরে বঙ্গোপসাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে আমরা ফিরতি পথ ধরে আজ লোকালয়ে পৌঁছাতে পেরেছি। আমার মা আর দিদি—দুজনেই অসুস্থ। তাঁরাও ছিলেন, খুব ভয়ে ছিলাম।’
৩ নভেম্বর শুরু হওয়া সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব শেষ হয় গতকাল ভোরে। পূর্ণিমার জোয়ারের লোনাজলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে পুণ্যস্নান। আলোরকোলের দুই কিলোমিটারজুড়ে তখন শুধু ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য। হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ একসঙ্গে নেমে পড়েন সমুদ্রের জলে। শঙ্খধ্বনি, কীর্তন, ঢাকের বাদ্য আর ধূপের গন্ধে ভরে ওঠে পুরো এলাকা।
কয়রার মহারাজপুর এলাকার পুণ্যার্থী মনোজিত কুমার রায় বলেন, ‘পূর্ণিমার জোয়ারে স্নান করলে পাপমোচন হয়—এ বিশ্বাস নিয়েই গিয়েছিলাম। সৈকতের পাড়ে চোখ বুজে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি।’
বন বিভাগের হিসাবে, এবারের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ জন পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছেন। পূজা-অর্চনা, ভজন ও লীলাকীর্তন শেষে গতকাল ভোরে তাঁরা সাগরে স্নান করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন। উৎসব চলাকালে বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল সার্বক্ষণিক টহলে ছিল। গত মঙ্গলবার সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে সুমন নামের এক পুণ্যার্থী নিখোঁজ হলেও কোস্টগার্ড পরে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করে।
রাস উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, উনিশ শতকের শুরুর দিকে সাধু হরিভজন প্রথম দুবলারচরের আলোরকোলে রাসপূর্ণিমার পূজা শুরু করেন। তিনি তাঁর ভক্তদের নিয়ে সাগরে পুণ্যস্নান করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই আয়োজন লোকসমাগমের মাধ্যমে এক বৃহৎ রাসমেলায় পরিণত হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মেলার আয়োজন বন্ধ আছে।
রাস উৎসবের সময় সুন্দরবনে হরিণ শিকার বেড়ে যায়—এ অভিযোগ পুরোনো। তবে এ বছর বন বিভাগ বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তারা দমন করতে পেরেছে।
পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘রাস উৎসবের দ্বিতীয় দিন কেওড়াবনে টহলের সময় বনরক্ষীরা প্রায় চার হাজার ফুট লম্বা হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার করেন। এবার উৎসবের সময় ৩২ জন শিকারি আটক হয়েছেন। শিকারের ফাঁদগুলো আগেভাগে না সরাতে পারলে শতাধিক হরিণ মারা যেত।’
দুবলারচরের আলোরকোলে রাস উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শতাব্দীকাল ধরে আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ভারত থেকেও অনেক ভক্ত অংশ নেন। এটি শুধু পূজা নয়, এক আধ্যাত্মিক মিলনমেলা।
সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, এবারের রাস উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থীরা সব নির্দেশনা মেনে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। আগাম প্রস্তুতি ও যৌথ টহলের কারণে অপরাধও অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।