এল ক্লাসিকোতেই ফয়সালা, কার হাতে উঠবে লা লিগা?
Published: 11th, May 2025 GMT
সেদিন লামিনে ইয়ামালের কথাটি মনে আছে? ‘এই মৌসুমে আর যাই হোক রিয়াল মাদ্রিদ আমাদের হারাতে পারবে না। যত গোলই হোক না কেন, দিন শেষে বার্সেলোনায় জিতবে।’ মাত্র দুই সপ্তাহ আগে কোপা দেল রের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকার পরেও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বার্সেলোনা। ৩-২ গোলে জিতে ইয়ামালের সেই হুঙ্কারে মিশেছিল বার্সেলোনার আত্মবিশ্বাস। আজ আবার দুই দল মুখোমুখি।
এমনিতে এল ক্ল্যাসিকো মানেই স্পেনের দুই শতবর্ষী পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর স্নায়ুর লড়াই, যেখানে প্রজন্মের পর প্রজম্ম ধ্রুপদি ফুটবল উপভোগ করে এসেছে দর্শকরা। এই মৌসুমে তিন তিনটি এল ক্ল্যাসিকো স্বাদ নিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা। আজকের এল ক্ল্যাসিকো যেন তার চেয়েও বেশি কিছু। জিতলেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে বার্সার লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হওয়া। অন্যদিকে রিয়াল জিতলে তাদের শিরোপা ধরে রাখার সম্ভাবনা টিকে থাকবে। ঘরের উঠোন স্তাদিও অলিম্পিকে শিরোপা উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবেন লেভানডস্কিরা। তাদের সে উৎসব মাটি করে দিতে প্রস্তুত হয়ে আছেন এমবাপ্পেরাও।
এমনিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বিদায়ে দুই দলই আহত, ট্রেবলের স্বপ্নও ধূলিসাত দুই দলেরই। কোথায় গিয়ে তাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কষ্ট চাপা দিয়েছে দুই প্রতিপক্ষ। এই ম্যাচটির মধ্যে অনেক খণ্ড খণ্ড লড়াইও থাকবে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে বার্সার বিপক্ষে শেষবারের মতো ডাগআউটে উপস্থিত থাকবেন কোচ কার্লো আনচেলেত্তি। অন্যদিকে বার্সা কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের জন্য প্রথম লা লিগা জয়ের সুযোগও করে দিতে পারে এই ম্যাচটি। যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতবে বলে এমবাপ্পে প্যারিস থেকে মাদ্রিদ এসেছেন, সেটি এই মৌসুমের জন্য শেষ হয়ে গেছে কিছুদিন আগে। এবার তাঁর সামনে প্রথমবারের মতো লা লিগা জেতার সুযোগ। বার্সার কিশোর ম্যাজিশিয়ান ইয়ামালের জন্যও প্রথমবারের মতো লা লিগা জয়ের সাক্ষী থাকার সুযোগ। পোলিশ স্ট্রাইকার লেভানডস্কির জন্য আবার এটিই হতে পারে বার্সার শেষ মৌসুম। তার জন্যও আজকের এল ক্ল্যাসিকো ‘সুপার ক্ল্যাসিকো’ বানানোর সুযোগ।
গতকাল সংবাদ সম্মলেন ফ্লিক জানিয়ে দিয়েছেন শুরুর একাদশে থাকছেন না লেভানডস্কি, বালদে, কাসাদো। ‘সবাই জানে এল ক্ল্যাসিকোতে প্রতিটি মুহূর্ত সর্বোচ্চ দিয়ে খেলতে হয়। আমরা রিয়াল মাদ্রিদের শক্তি সম্পর্ক জানি, তবে এবার আমরা ঘরের মাঠে সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে নামছি। পয়েন্ট টেবিল কী বলছে তা নিয়ে ভাবছি না, আমরা শুধু জানি ম্যাচটি জিততে হবে।’
এ মৌসুমে যে তিন ম্যাচে রিয়ালের মুখোমুখি হয়েছিল বার্সা, তার সবক’টিতে জিতেছিলেন ফ্লিক। তবে সব ম্যাচেই কিছু ভিন্ন কৌশলে বাজিমাত করেছিলেন। অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদ তাকিয়ে তাদের তারকা নামগুলোর ওপর। কিলিয়ান এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সঙ্গে জুড বেলিংহাম। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে আনচেলেত্তির একাদশে গোল পোস্টে কুতোর্সকে দেখা যেতে পারে। লিগের শুরুতে ভালো করলেও এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্রচণ্ড ধাক্কা খায় এমবাপ্পেরা। সে সময়ে লা লিগায় ৫ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পায় রিয়াল, আর সে সময়েই ঘুরে দাঁড়ায় বার্সেলোনা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল ক ল স ক এল ক ল য স ক এমব প প র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
এক ঢেউয়ে নিভে গেছে মুন্ডাদের কারাম উৎসবের প্রদীপ
খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে আছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মুন্ডাদের দেড় হাজারের বেশি পরিবার। নিজেদের পরিচয়ে গর্বিত এই জনগোষ্ঠীর গ্রামীণ সংস্কৃতির বড় আয়োজন ছিল কারাম উৎসব। একসময় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকঢোল, করতাল আর মাদল তালে মেতে উঠতেন মুন্ডা তরুণ-তরুণীরা। হতো নাচ–গান, পূজা ও খাওয়াদাওয়া, যা চলত গভীর রাত পর্যন্ত। এখন সে উৎসব নেই, শুধু গল্প হয়ে বেঁচে আছে মানুষের স্মৃতিতে।
এ অবস্থায় আজ ৯ আগস্ট শনিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকে প্রতিবছর আদিবাসীদের অধিকার, সম্মান ও সংস্কৃতি রক্ষায় এদিন পালন করা হয়।
কয়রার নলপাড়া গ্রামের নমিতা রানী মুন্ডা এখনো আশায় বুক বাঁধেন, হয়তো কোনো এক ভোরে আবার কারাম উৎসব ফিরবে। তাঁর ভাঙা ঘরের বারান্দায় বসে কারাম উৎসবের কথা তুলতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘২০০৯ সালের আইলার আগেই শেষবার হইছিল। এরপর আর হয়নি। কারামগাছই তো নেই, উৎসব হবে কীভাবে?’
কারামগাছ—যেটাকে স্থানীয়ভাবে খিলকদম বলা হয়। এই গাছের ডাল ছাড়া কারাম উৎসব অপূর্ণ। মুন্ডারা বিশ্বাস করেন, এই গাছের ডালে লুকানো আছে সমৃদ্ধি আর মঙ্গল।
সম্প্রতি কয়রা উপজেলার মুন্ডাপাড়ার উঠান থেকে উঠান ঘুরে জানা গেল, গল্পের মতো—কীভাবে এক ঢেউয়ে, এক ঝড়ে হারিয়ে গেছে একটি গোটা উৎসব। তাঁদের কথায়, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বাঁধভাঙা নোনাপানির ঢেউয়ে ডুবে যায় উৎসবের মাঠ, উঠান আর বেদি। জমির লবণাক্ততা এমনভাবে জমে বসে, যে কারামগাছ আর বাঁচে না। মাঝেরপাড়ার পরশুরাম মুন্ডা বলেন, ‘গাছ নাই, উদ্যোগী মানুষও নাই। এই গ্রামের নকুল মুন্ডা বাইচে থাকলি হয়তো উৎসব কুরত। নকুল মুন্ডার ছাওয়ালডাও (ছেলে) বেকার হুয়ি পাড়ি দেছে পাশের দেশ ভারতে।’
কয়রার বতুলবাজার এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্বপন মুন্ডার সঙ্গে। তিনি পেশায় দিনমজুর। ঘরের ছাউনি ঠিক করার ফাঁকে বললেন, ‘আগে কত আনন্দ হইতো! নাচ-গান, খাওয়াদাওয়া। এক রাত এক দিন চইলতো কারাম উৎসব। কিন্তু আইলার পর সব শেষ।’ পাশ থেকে স্ত্রী রেনু বালা মুন্ডা শোনালেন তেতো বাস্তবতা, ‘উৎসব করতে কত টাকা লাগে জানেন? একটু আগে আলু ধার কইরে আনছি, উনি আছে উৎসবের চিন্তায়! গরিবের আবার উৎসব?’
কাটকাটা গ্রামের লক্ষী রানী মুন্ডার শৈশব কেটেছে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নে। বিয়ের পর কয়রায় এসে আর দেখেননি সেই উৎসব। তিনি বলেন, ‘বাপের বাড়িতে ছোটবেলায় কত দেখিছি। এখন আর হয় না। শুনিছি উত্তরাঞ্চলের দিকিত্তে কেউ কারামগাছের চারা আইনে এলাকায় লাগাইল, কিন্তু বাঁচানো যায়নি।’
যে জায়গায় কারাম উৎসবের বেদি সাজানো হতো, সেখানে এখন কেবল শূন্যতা। কয়রার মাঝেরপাড়া গ্রামের নকুল মুন্ডার বাড়ি–সংলগ্ন কারাম উৎসবের স্থান। সম্প্রতি তোলা