১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনোসাইডের (গণহত্যা) দায়ে জামায়াতে ইসলামী এবং ২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে দল হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের শাস্তি দাবি করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। তারা বলেছে, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী উভয়ই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তিকামী মানুষের হত্যাকারীদের সংগঠন। কাজেই এ দুটি দলকেই বিচারের মুখোমুখি না করা হলে তা স্পষ্টতই একাত্তর ও চব্বিশের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।

রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি তামজিদ হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার। ‎‎তাঁরা বলেছেন, ‘স্বৈরাচার হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।’

অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পাঠানো এই বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়নের দুই শীর্ষ নেতা বলেছেন, কেবল নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ নেই। বরং আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণহত্যার দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারে যেভাবে সরকার উদ্যোগী হয়েছে, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মিলে দেশের মুক্তিকামী জনগণের ওপর জামায়াতে ইসলামী ও তার সহযোগীদের গণহত্যার বিচারের ব্যাপারেও তারা একইভাবে তৎপর হবে, এমন প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী উভয়ই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তিকামী মানুষের হত্যাকারীদের সংগঠন। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে, নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল দাবি করে একের পর এক অনাচার, গুম–খুন, নির্যাতন করে গেছে আর জামায়াত বাংলাদেশবিরোধিতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গেছে। কাজেই এ দুটি দলকেই বিচারের মুখোমুখি না করা হলে তা স্পষ্টতই একাত্তর ও চব্বিশের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।

ছাত্র ইউনিয়ন বলেছে, কেবল নিষিদ্ধ করাই সমাধান নয়, বরং গত প্রায় ১৬ বছরে গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সহযোগীদেরও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতা বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভিত্তিকে সমাজে অপাঙ্‌ক্তেয় করে তোলা সম্ভব। কাজেই দলটিকে কেবল নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা আবারও নিশ্চিতভাবেই রাজপথে নেমে আসবে।

গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও জেনোসাইডের সঙ্গে যুক্ত জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ, এমন মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর বিচারপ্রক্রিয়া অনতিবিলম্বে শুরু করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ক্ষমা প্রার্থনা অথবা অনুশোচনা প্রকাশ—এসব কোনো কিছুর মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ কিংবা জামায়াতের কৃতকর্মের দায় কোনো দিন ঘুচবে না। কৃতকর্মের জন্য প্রাপ্য শাস্তি তাদের কড়ায়–গন্ডায় বুঝিয়ে দিতে হবে।

ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচারকাজ সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন আরও বলেছে, অবিলম্বে হাসিনাসহ গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়া এমন হতে হবে যেন তাতে বিন্দু পরিমাণ ফাঁকফোকর না থাকে। দেশের গণতন্ত্রমনা মুক্তিকামী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও জেনোসাইডের সঙ্গে যুক্ত জামায়াতের রাজনীতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণহত য ক র ন শ চ ত কর গণহত য র বল ছ ন আওয় ম ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে যারা এখন মাঠে আছে কেবল তারা নয়, দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না। তিনি বলেন, দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সঠিকভাবে কাজটি করতে পারছে না। ফলে মাঝেমধ্যেই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীদের শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।

আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী তিন সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত এই সমাবেশে বক্তৃতা করেন তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কঠিন ও অস্বাভাবিক সময় অতিবাহিত করছি। কারণ শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, তাদের প্রেতাত্মারা এখনো আছে। তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে, বাংলাদেশ তাদের রাজত্ব কায়েম করার জন্য। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’ তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা যাদের দায়িত্ব দিয়েছি দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরে নেওয়ার জন্য, তারা সঠিকভাবে এখনো কাজটি করতে পারছে না। ফলে মাঝে মাঝেই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তাদের (ষড়যন্ত্রকারীদের) আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এখানে সমাবেশ হচ্ছে, আরেকটি হচ্ছে চট্টগ্রাম নিউমার্কেটে। আরেকটি হচ্ছে ঢাকায়। দাবিটা কি? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে, তাই না? আমরা মাঠে যারা আছি তারা শুধু নয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চাই না। কারণ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করেছে। গণতন্ত্র ধ্বংস, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ও বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে।’

দেশে প্রথম সংস্কার শহীদ জিয়াউর রহমান করেছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাতের নয় বছর পর আন্দোলন সংগ্রাম করে বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে ফিরে নিয়ে এসেছিলেন। কিছু কিছু মানুষ সব ভুলে যায়, ভুলিয়ে দিতে চায়। তারা মনে করে, সুন্দর সুন্দর মুখরোচক কথা বললেই জাতি বোধ হয় সব ভুলে যাবে।

তরুণেরা জেগে উঠেছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মাথা ঠান্ডা রেখে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে হবে। আধুনিক উপযোগী একটি বাংলাদেশ করার শিক্ষা দিচ্ছেন তারেক রহমান। এই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে কোনোভাবেই কোনো কিছু করতে দেব না। আমাদের নেতা বলেছেন, সবার আগে বাংলাদেশ।’

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে, কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। গণতন্ত্রের পথ কেউ যাতে রুদ্ধ করতে না পারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে এগিয়ে যাবো, কারও উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না। এটা তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত। আমরা নতুন সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে চাই, সহনশীল থাকতে হবে সবাইকে।’

আমীর খসরু বলেন, ‘আজকে এখানে তামিম ইকবালকে দেখে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে চট্টগ্রামের তরুণেরা আজকে ছক্কা মেরে দিয়েছে। এই তরুণেরা ফ্যাসিস্ট হাসিনা হটানোর মূল শক্তি। ওয়াসিম আকরামের (জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে শহীদ ছাত্রদল নেতা) জীবন দিয়ে এ আন্দোলন সফল করেছে। সেদিন ছাত্রদল যুবদল বুক পেতে দিয়েছে গুলির সামনে। গণতন্ত্র ও মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তরুণেরা লড়াই করেছে, সব অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করেছে।’

আমির খসরু বলেন, ‘আমরা ১৬-১৮ বছর আন্দোলন করেছি। মামলা, হামলা, গুম ও খুনের শিকার হয়েছি। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে অনেক নেতা-কর্মীর। আমাদের নেতা-কর্মীরা যার জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছে, সেই গণতন্ত্র যেন কেউ জিম্মি করতে না পারে।’ তিনি বলেন, কারও যদি দর্শন থাকে, ভাবনা থাকে, কর্মসূচি থাকে তাহলে তাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। কিন্তু কারও স্বার্থের জন্য দেশকে জিম্মি করা যাবে না। মানুষের মধ্যে নতুন যে ভাবনা এসেছে তা বুঝতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা শুনি, ৩১ দফার মধ্যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা অনেক আগেই বলেছে বিএনপি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন সমাবেশ সঞ্চালনা করেন।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেনসহ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফ্যাসিস্ট শাসকের পলায়ন গণতন্ত্রের প্রাথমিক বিজয়: আলী রীয়াজ 
  • ফ্যাসিস্ট শাসকের পলায়নের মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে: আলী রীয়াজ
  • জিয়াউর রহমানের ঘোষণা স্বাধীনতা যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল: আমীর খসরু
  • নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ গণতন্ত্রের জন্য অশুভ: বাসদ
  • বিচার বিভাগ স্বাধীন না করে গণতন্ত্র সম্ভব নয়: আলী রীয়াজ
  • গণতান্ত্রিক বিশ্ব কখনো খুনি-দুর্নীতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়াবে না: প্রেস সচিব
  • আমরা কোনও প্রতিকূল আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আশা করি না: প্রেস সচিব
  • দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না: মির্জা ফখরুল
  • মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া আইনের শাসন, গণতন্ত্র কিছুই থাকে না