শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ ৫ অভিযোগ
Published: 12th, May 2025 GMT
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত গণহত্যার মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ পাঁচ অভিযোগ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। বাকি দুইজন হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আজ সোমবার মামলার যাবতীয় নথিপত্র ও সিডিসহ প্রসিকিউশনে তিনজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এতে তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও সরাসরি নির্দেশসহ পাঁচটি অভিযোগ পেয়েছে। এছাড়াও অপর দুই আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আগামী দুই-তিন সপ্তাহ প্রসিকিউশন তদন্ত সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করবে। এরপর সেটা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) হিসেবে ট্রাইবুনালে দাখিল করবে।
এ নিয়ে জুলাই আগস্টের ঘটনায় প্রশাসন বিভাগ দ্বিতীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এর আগে চানখারপুলে হত্যা মামলার ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল তদন্ত সংস্থা।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো.
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারান এই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ জ ল ই আগস ট র তদন ত স স থ গণহত য র
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগের বিচারের দাবি বিএনপিই তুলেছিল: সালাহউদ্দিন আহমেদ
বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় সরকারকে সধুবাদ জানিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপি কয়েক মাস আগেই লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছিল, আওয়ামী লীগকে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তখন প্রধান উপদেষ্টা যদি দাবিটি আমলে নিতেন, তাহলে গত কয়েকদিনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।
রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবিধান সংস্কার বিষয়ে নাগরিক জোটের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিএনপি শাহবাগে না যাওয়ার কারণ সম্পর্কে- সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা কেন শাহবাগে যাবো। আমাদের দাবি তো বহু আগেই লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও গণমানুষের কথাগুলো বলেছিলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নজির আছে যে সমস্ত ফ্যাসিবাদী দল গণহত্যার জন্য দায়ী দল হিসেবে তাদেরকে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসে নিষিদ্ধ করা হয়। এর উদাহরণ সারা পৃথিবীতে আছে। সুতরাং দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করবে এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য স্বাগতম জানাই।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, বিএনপি এই রকম যেসব পরামর্শ দিয়েছে দেশ ও জনগণের পক্ষে তা যেন যথাসময়ে আমলে নেয়। সরকার ও দেশ পরিচালনায় আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব।
সারাদেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব বলে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এ জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছি, নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে।
আওয়ামী লীগ ও তাদের অন্যান্য সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকার আরও একটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, সন্ত্রাসী বিরোধী আইনে সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা মনে হয় এইজন্য সরকারকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে কিছুটা সংশোধনী আনতে হবে। কারণ এই আইনে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের কথা বলা আছে। এখানে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ নেই বলেও জানান সালাহউদ্দিন।
বিএনপি এতদিন যে গণতান্ত্রিক রাজনীতির কথা বলে আসছে, সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ কতটা গণতান্ত্রিক- এমন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন বলেন, তারা একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি, তারা একটি মাফিয়া শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। তারা দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়াতন্ত্রের চর্চা করেছিল দেশের মানুষের ওপর। তারা আর রাজনৈতিক দল নেই। তারা একটা মাফিয়া শক্তি, ফ্যাসিবাদী দল। সুতরাং তাদেরকে রাজনৈতিক দলের কোনো তকমা দিতে চাই না। আওয়ামী লীগের ডিএনএতে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক চর্চা নেই বলেও দাবি করেন সালাহউদ্দিন।