বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘শাহবাগে হঠাৎ করে এই নাটক কেন? যে শাহবাগ আপনারা বন্ধ করেছেন, এখানে মিছিল–মিটিং করা যাবে না, সেখানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের দল এনসিপির লোকেরা মিছিল মিটিং করে কীভাবে?’

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে এক স্মরণসভায় দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা আব্বাস।

ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ এ সভার আয়োজন করে।

সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে (পরে কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত) শাহবাগের মিছিল-সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে আনেন আব্বাস। তিনি বলেন, ‘কোন দাবিতে মিছিল–মিটিং করল? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে। তো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে না করছে কে? খুব বলা হয়েছিল, বিএনপি নাকি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। বিএনপির কী ঠেকা পড়ে গেছে ভাই? বিএনপির নেতা–কর্মীরা ১৭ বছর বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি। আমাদের জীবন থেকে ১৭ বছর কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ আমিও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে একাধিকবার স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছি।’  

দেশকে বিদেশি শত্রুর হাত থেকে রক্ষায় একমাত্র বিএনপি মাঠে আছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তাঁর মতে, আর কোনো রাজনৈতিক দল যদি মাঠে থাকত, তারা আওয়াজ ওঠাত।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ যাওয়া প্রসঙ্গেও কথা বলেন বিএনপির এ নেতা। তিনি বলেন, ‘হামিদ সাহেব চলে গেল। কত সুন্দর ভিআইপি দিয়ে গেল। উনি নাকি লুঙ্গি পরে, গেঞ্জি পরে, মাস্ক পরে ভিআইপি দিয়ে গেল। ভাই, লুঙ্গি পরুক আর কাপড় ছাড়াই থাকুক, ভিআইপিতে ঢোকে কীভাবে? এ বিষয়ে আমাদের জানা খুব দরকার। আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে, আরও জানি কী কী হচ্ছে।’

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কোনো মানবিক করিডর দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, একমাত্র নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী করবে।

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা দেশীয় শাসনে নাই। আমরা ঔপনিবেশিক শোষণের মধ্যে আছি। ইচ্ছা করলেই কেন আমরা সেন্ট মার্টিন যেতে পারি না। কেন আমরা সাজেক যেতে পারব না? কেন আমরা বাঘাইছড়ি যেতে পারব না? আমি সরকারের কাছে জানতে চাই, আমরা কি পরাধীন কোনো দেশে বসবাস করছি? আমি সরকারের কাছে স্পষ্ট উত্তর জানতে চাই। এসব নিয়ে এনসিপি কেন কথা বলছে না?’

সচিবালয়ে আওয়ামী সুবিধাভোগীরা এখনো সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস।

স্মরণসভায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতা–কর্মীরা বক্তব্য দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন নাসির উদ্দিন আহমেদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক সাইদ হাসান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ব এনপ র শ হব গ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

এবার বিমা কোম্পানির মালিকানা অধিগ্রহণ ও হস্তান্তরে নতুন আইন আসছে

এবার ব্যাংকের মতো বিমা কোম্পানি অধিগ্রহণ বা হস্তান্তরে নতুন আইন হচ্ছে। নতুন এ আইন পাস হলে বিমাকারী অর্থাৎ বিমা কোম্পানির শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যাবে। এ ছাড়া এক বা একাধিক ব্রিজ বিমাকারী বা বিমা কোম্পানিও গঠনের সুযোগ থাকবে। পাশাপাশি বিদ্যমান শেয়ার ধারক বা নতুন শেয়ার ধারকদের মাধ্যমে মূলধনও বাড়ানো যাবে এ অধ্যাদেশ জারি হলে।

বিমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ নামে নতুন এ আইনের একটি খসড়া গতকাল বুধবার চূড়ান্ত করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংস্থাটি আগামী রোববার তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাতে পারে।

ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক যেমন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাঁচানোর ব্যাপারে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করেছে, বিমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ পাস হলেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা যাবে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

এ বিষয়ে আইডিআরএর মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি প্রথম আলোকে বলেন, পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় নতুন এ অধ্যাদেশ করা হচ্ছে। এতে গ্রাহকদের পলিসির টাকা পাওয়া নিশ্চিত করা যাবে। এ ছাড়া দুর্বল বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা ও তাদের সুশাসনের মধ্যে ফেরানো হচ্ছে এ অধ্যাদেশ প্রণয়নের উদ্দেশ্য।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রয়োজনে বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্পদ বিক্রি করে অর্থ উদ্ধারের পর তা পলিসিহোল্ডারদের দেওয়া যাবে। এমনকি বিমা কোম্পানিগুলোর মালিকানা পরিবর্তন এবং এক কোম্পানির সঙ্গে আরেক কোম্পানির একীভূত করার পথও সহজ হবে।

কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্পত্তি বিক্রি করে যদি বিমা পলিসি গ্রাহকদের পুরো পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব না হয়, তাহলে সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে আইডিআরএ। অন্যদিকে কোম্পানিগুলোর জন্য ব্যাংকঋণের ব্যবস্থাও করা যাবে। বিমা কোম্পানির চোয়ারম্যান, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, অন্য কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারীকে অপসারণ করা সহজ হবে নতুন অধ্যাদেশ পাস হলে।

রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আইডিআরএ ‘বিমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল’ নামে একটি তহবিল গঠন করবে। এ তহবিলে সরকার যেমন ঋণ ও অনুদান দেবে, একইভাবে উন্নয়ন সহযোগী ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার কাছ থেকেও অর্থ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। অধ্যাদেশের আওতায় আইডিআরএ যেকোনো বিমা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে, আবার দরকারে বাতিলও করতে পারবে।

ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আওতায় যেমন ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল নামে একটি আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে, এ অধ্যাদেশেও একই ধরনের কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ কাউন্সিল বিমা খাতের সংকট ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আপৎকালীন বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করবে।

আট সদস্যের এ কাউন্সিলের প্রধান হবেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। অন্যদের মধ্যে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, রেজল্যুশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আইডিআরএর একজন সদস্য এবং আইডিআরএ চেয়ারম্যানের মনোনীত আরেকজন সদস্য। কাউন্সিল প্রতি তিন মাসে একটি করে বৈঠক করবে।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা লাইফ, বায়রা লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, সান লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ—এসব বিমা কোম্পানি গ্রাহকদের পাওনা পুরোপুরি ফেরত দিতে পারছে না। গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে এ ছয় কোম্পানিকে নিয়ে তিন মাস আগে একটি পর্যালোচনা বৈঠকও করেছে আইডিআরএ। এখন পর্যন্ত এ বৈঠকের ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। নতুন অধ্যাদেশ হলে এ কোম্পানিগুলোর প্রতি প্রথম নজরে থাকবে আইডিআরএর। তবে এগুলো ছাড়া আরও দুর্বল কোম্পানি রয়েছে বিমা খাতে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইডিআরএ থেকে খসড়াটি পাওয়ার পর আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে বৈঠক করব। এরপর খসড়া অধ্যাদেশটি মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। চূড়ান্ত খসড়া দাঁড় করিয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ