নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহে সারের দুটি গুদাম হচ্ছে
Published: 13th, May 2025 GMT
সার মজুতের জন্য দুটি গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর একটি হবে নেত্রকোনায়, অন্যটি ময়মনসিংহে। ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই দুই গুদাম নির্মাণের পূর্তকাজের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহে সারের গুদাম নির্মিত হচ্ছে। নেত্রকোনার গুদামটি হবে ১০ হাজার টন সার ধারণক্ষমতার। আর ময়মনসিংহেরটি হবে ২৫ হাজার টনের ধারণক্ষমতার। গুদাম দুটি তৈরি হবে ইস্পাত দিয়ে (স্টিল স্ট্রাকচারড)। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এই দুটি গুদাম তৈরির বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
জানা যায়, ৩৪টি গুদাম তৈরির প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন পায় ওই বছরের ৪ নভেম্বর। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। জমির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পরে ২০২৩ সালের নভেম্বরে সংশোধনের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা করা হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বেশির ভাগ জেলায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি হয়েছে। যদিও চার জেলায় তা এখনো বাকি। তবে কোনো জেলায় এখন পর্যন্ত একটি গুদামও হয়নি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৭০ শতাংশ কৃষক আইএমইডিকে জানিয়েছেন, বোরো মৌসুমে সময়মতো চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা সার পান না। কৃষকেরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সারা দেশে প্রায় আট লাখ টন সার মজুত রাখা যাবে।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, যেসব জেলায় গুদাম হওয়ার কথা, সেগুলো হলো ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, নড়াইল, মাগুরা, খুলনা, সাতক্ষীরা, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নাটোর, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ফরিদপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর।
গুদাম নির্মাণের পূর্তকাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব জমা দেয়। এর মধ্যে দুটি প্রস্তাব আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে যৌথভাবে কাজ পায় এআইএল এবং এসসিএল।
এদিকে ক্রয় কমিটিতে সিঙ্গাপুর থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এতে ৫৮৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় হবে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পেয়েছে গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড।
ক্রয় কমিটিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পের পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় পূর্তকাজের ছয়টি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ক্রয় কমিটি। এতে ১৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
এলএনজির দাম আরও কমেছেবৈঠক সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের একটি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গণ খাতে ক্রয় বিধিমালা, ২০০৮ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এই এলএনজি আমদানি করা হবে। এক কার্গো সমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজি। প্রতি এমএমবিটিইউর দাম পড়ছে ১২ দশমিক ১৮ মার্কিন ডলার। গত ৭ মে ভিটল এশিয়া লিমিটেড থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১১ দশমিক ৪৪৮৮ মার্কিন ডলার দরে এক কার্গো এবং প্রতি এমএমবিটিইউ ১১ দশমিক ৫৭৮৮ ডলার দরে আরেক কার্গো এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক–জনবল নিয়োগসহ ৪ দাবিতে ময়মনসিংহ আইএইচটি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
ময়মনসিংহের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) শিক্ষক ও জনবল নিয়োগসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকালে পাঠ কার্যক্রম বন্ধ রেখে একাডেমিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি করা হয়।
নগরের মাসকান্দা এলাকায় আইএইচটির অবস্থান। কোনো জনবল নিয়োগ না হলেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি বিভাগে ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি ব্যাচে ১৫৬ শিক্ষার্থী আছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান। গত ৪ মার্চ তিনি ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি হন। এরপর প্রশাসনিক দায়িত্বে আর কেউ নেই। তবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষক সপ্তাহে দুই দিন করে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
ক্যাম্পাসে আছে একটি চারতলা একাডেমিক ভবন, একটি পুরুষ ও একটি নারী আবাসিক হল ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আবাসন। পুরো চত্বরে ঘাস বড় হয়ে জঙ্গলময় পরিস্থিতি। একাডেমিক ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে আছে প্যাকেটবন্দী কিছু জিনিসপত্র। নিচতলার একটি কক্ষকে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে কিছু চেয়ার ও একটি টেবিল রয়েছে। এ ছাড়া পুরো ভবনে কক্ষ থাকলেও নেই আসবাব ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগভিত্তিক কোনো শিক্ষক না থাকায় ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ প্রায় ছয় মাস। ছাত্রদের জন্য ব্যবহারিক কোনো যন্ত্রপাতি ও ক্লাসে পর্যাপ্ত আসবাব, যেমন চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ নেই। হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো আসবাব, বিছানা, চেয়ার ও টেবিল নেই; নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী। ২৫ জুন বেলা ১১টার দিকে ৯ লাখ টাকা বকেয়ার কারণে ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। পরে অবশ্য আবার সংযোগ দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় শিক্ষাজীবন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন।
আজ পাঠ কার্যক্রম বর্জন করে সকাল ১০টা থেকে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের চারটি দাবির মধ্যে আছে, অবিলম্বে অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত ক্যাম্পাস করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আজ মানববন্ধনের পর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকলিপি ও পরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুফিদুল ইসলাম।
আরও পড়ুন১৫৬ শিক্ষার্থী থাকলেও নেই কোনো শিক্ষক–কর্মচারী ৮ ঘণ্টা আগেশিক্ষার্থী দেবী দেবনাথ বলেন, ‘সরকারের আছে আমাদের প্রশ্ন, যদি শিক্ষার সুব্যবস্থা না দিতে পারে, তাহলে এত টাকা খরচ করে, এত সুন্দর ভবন কেন করা হলো। ভর্তি হওয়ার সময় অনেক টাকা খরচ করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। আমরা যদি জানতাম, এখানে এসে ক্ষতি হবে, তাহলে ভর্তি হতাম না। রাষ্ট্র কেন আমাদের এত ক্ষতি করল? আমাদের সঙ্গে একপ্রকার দুর্নীতি করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মিছবাহ উদদীন আহমদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবল কাঠামো অনুমোদন ও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান।