সুরমা নদীতে ধরা পড়ল ৪২ কেজির বাগাড়, ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি
Published: 15th, May 2025 GMT
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় সুরমা নদীতে এক জেলের জালে ধরা পড়েছে ৪২ কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার সদরসংলগ্ন সুরমা নদীর সাইডিং ঘাট এলাকায় মাছটি জেলে কেরাম উদ্দিনের জালে ওঠে। তিনি শরিফপুর গ্রামের বাসিন্দা।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কেরাম উদ্দিন মাছটি স্থানীয় দোয়ারাবাজার মাছ বাজারে নিয়ে গেলে খবরটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। বিশাল আকারের মাছটি দেখতে ভিড় করেন উৎসুক জনতা। অনেকে ছবি তোলেন, কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করেন। কেরাম উদ্দিন মাছটির দাম চান ৫০ হাজার টাকা। দরদাম শেষে মাছটি ৪৫ হাজার টাকায় কিনে নেন বাজারের ব্যবসায়ী সলিম উদ্দিন, বাতির নূর ও মনির আহমেদ।
ব্যবসায়ী সলিম উদ্দিন বলেন, সুরমা নদীর সাইডিং ঘাট এলাকা খুবই গভীর। এখানে জেলেদের জালে প্রায়ই বাগাড় মাছ ধরা পড়ে। তবে এত বড় বাগাড় এর আগে ধরা পড়েনি। তাঁরা মাছটি ঢাকা পাঠিয়ে দেবেন।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় মাছ একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, বাগাড় শিকার করা, ধরা বা বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন না থাকায় বাগাড় শিকার ও প্রকাশ্যে বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুরগির কী রোগ হয়েছে, বলে দেবে দেশীয় অ্যাপ
মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। কেউ আবার নতুন খামার করেছেন। তবে সঠিক সময়ে মুরগির রোগ নির্ণয় করতে না পারার কারণে বিপদে পড়েন খামারিরা। এ সমস্যা সমাধানে বিষ্ঠার রং, ঘনত্ব ও অন্যান্য বিষয় পরীক্ষা করে দ্রুত রোগের ধরন জানাতে সক্ষম অ্যাপ উন্মুক্ত করেছে দেশীয় আইটি স্টার্টআপ ‘নেভরোনাস সিস্টেমস’। তাদের তৈরি ‘পোলট্রি পাল’ নামের মোবাইল অ্যাপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে মুরগির বিষ্ঠার ছবি বিশ্লেষণ করে কক্সিডিওসিস, সালমোনেলোসিস এবং নিউক্যাসল ডিজিজ-এর মতো মারাত্মক রোগের প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে। ফলে আগে মুরগির যে রোগ নির্ণয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো বা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে পশুচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হতো, সেই জটিল কাজ এখন স্মার্টফোনেই সম্ভব।
উদ্ভাবনের পেছনের কথাগত শনিবার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে কথা হয় নেভরোনাস সিস্টেমসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাজিব মোস্তাফিজের সঙ্গে। তিনি জানান, দেশের পোলট্রি খামারির কাছে সহজলভ্য, সাশ্রয়ী ও কার্যকর মুরগির রোগ নির্ণয়ের প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে নেভরোনাস সিস্টেমসের আকরাম হোসেন ও তিনি অ্যাপটি তৈরি করেছেন। অ্যাপটির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পোলট্রি খামারে কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়া মানে খামারিদের মাথায় হাত। অনেক সময় রোগের লক্ষণ বোঝার আগেই ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়। আমরা চেয়েছি এমন একটি টুল তৈরি করতে, যা রোগের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে খামারিকে সতর্ক করতে পারবে। পোলট্রি পাল অ্যাপ সেই কাজটিই করে। অ্যাপটি তৈরি করতে আমাদের দেড় বছরের বেশি সময় লেগেছে, খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা।’
যেভাবে কাজ করে পোলট্রি পালপোলট্রি পাল অ্যাপের ব্যবহার ব্যবহার পদ্ধতি বেশ সহজ। খামারিকে শুধু মুরগির বিষ্ঠার একটি পরিষ্কার ছবি তুলে অ্যাপে আপলোড করতে হয়। এরপর অ্যাপের শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগরিদম ছবিটি বিশ্লেষণ করে বিষ্ঠার রং, ঘনত্ব ও অন্যান্য সূক্ষ্ম বায়ো-মার্কারগুলো পরীক্ষা করে। এর ওপর ভিত্তি করে অ্যাপটি একটি সম্ভাব্য রোগের নাম বা মুরগিটি সুস্থ আছে কি না, সে–সম্পর্কিত একটি প্রাথমিক ফলাফল জানায়। এ বিষয়ে রাজিব মোস্তাফিজ বলেন, ‘অ্যাপটি মূলত প্রাথমিক রোগ শনাক্তকারী টুল, কোনোভাবেই বিশেষজ্ঞ পশুচিকিৎসকের বিকল্প নয়। আমরা সব সময় ব্যবহারকারীদের যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগে একজন নিবন্ধিত ভেটেরিনারিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করার সুপারিশ করি।’
খামারিদের জন্য আশীর্বাদবাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে পোলট্রিশিল্প অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে, সেখানে রোগের প্রাদুর্ভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রচলিত ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলো বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট ও মাঝারি খামারিদের পক্ষে সব সময় দ্রুত পশুচিকিৎসকের সেবা পাওয়া বা ল্যাবে নমুনা পাঠানো সম্ভব হয় না। পোলট্রি পাল ঠিক এখানেই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে।
অ্যাপটির উল্লেখযোগ্য সুবিধা• অফলাইন কার্যকারিতা: অ্যাপটি একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে রোগ নির্ণয়ের জন্য আর ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয় না। এটি সরাসরি মোবাইলের প্রসেসিং ক্ষমতা ব্যবহার করে কাজ করে, যা গ্রামীণ পরিবেশে ব্যবহারের জন্য আদর্শ।
• খরচ ও সময় সাশ্রয়: তাৎক্ষণিক ফলাফল পাওয়ায় খামারিরা দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন, যা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে তাদের বাঁচায়।
• খামারিদের ক্ষমতায়ন: অ্যাপটি শুধু রোগ নির্ণয়ই করে না, পাশাপাশি রোগ-সম্পর্কিত বিভিন্ন জেনেরিক ও বাণিজ্যিক ওষুধের তথ্যও প্রদান করে। এতে খামারিরা আরও সচেতন ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।
• পশুচিকিৎসকদের সহায়ক: অ্যাপটি পশুচিকিৎসকদের জন্য একটি ‘এক্সপার্ট সেকেন্ড অপিনিয়ন’ বা দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ মতামত হিসেবে কাজ করতে পারে, যা তাদের রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে আরও মসৃণ করে তুলতে সহায়ক হবে।
অ্যাপটি বর্তমানে গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই অ্যাপটি অ্যাপস্টোর ব্যবহারকারীদের জন্যও উন্মুক্ত করা হবে। অ্যাপটি নামানো যাবে এই ঠিকানা থেকে।