সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় সুরমা নদীতে এক জেলের জালে ধরা পড়েছে ৪২ কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার সদরসংলগ্ন সুরমা নদীর সাইডিং ঘাট এলাকায় মাছটি জেলে কেরাম উদ্দিনের জালে ওঠে। তিনি শরিফপুর গ্রামের বাসিন্দা।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কেরাম উদ্দিন মাছটি স্থানীয় দোয়ারাবাজার মাছ বাজারে নিয়ে গেলে খবরটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। বিশাল আকারের মাছটি দেখতে ভিড় করেন উৎসুক জনতা। অনেকে ছবি তোলেন, কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করেন। কেরাম উদ্দিন মাছটির দাম চান ৫০ হাজার টাকা। দরদাম শেষে মাছটি ৪৫ হাজার টাকায় কিনে নেন বাজারের ব্যবসায়ী সলিম উদ্দিন, বাতির নূর ও মনির আহমেদ।

ব্যবসায়ী সলিম উদ্দিন বলেন, সুরমা নদীর সাইডিং ঘাট এলাকা খুবই গভীর। এখানে জেলেদের জালে প্রায়ই বাগাড় মাছ ধরা পড়ে। তবে এত বড় বাগাড় এর আগে ধরা পড়েনি। তাঁরা মাছটি ঢাকা পাঠিয়ে দেবেন।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় মাছ একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, বাগাড় শিকার করা, ধরা বা বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন না থাকায় বাগাড় শিকার ও প্রকাশ্যে বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ

আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রযুক্তি ও সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন রোগের উদ্ভব এবং পুরোনো রোগের পুনরুত্থান দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগ, যা পানি, খাদ্য ও বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়।

রোগ মোকাবিলায় শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস প্রয়োজন। মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহ আমাদেরকে এমন পদ্ধতি শিখিয়েছে, যা আধুনিক স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি তাঁদের ভালোবাসেন, যাঁরা তাঁর দিকে ফিরে আসেন এবং নিজেদের পবিত্র রাখেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২) নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৩) এই বাণী থেকে বোঝা যায়, ইসলামে শারীরিক ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নবীজির জীবনাচরণে আমরা এমন অনেক অভ্যাস দেখতে পাই, যা আজকের বিজ্ঞানও স্বাস্থ্যকর বলে প্রমাণ করেছে।

হাঁচি-কাশিতে মুখ ঢাকার সুন্নাহ

হাঁচি বা কাশির সময় মুখ ঢাকা আধুনিক স্বাস্থ্যবিধির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০১৪ সালে এমআইটির (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁচি বা কাশির সময় নির্গত গ্যাসের মেঘ দীর্ঘ সময় বাতাসে ভাসতে পারে এবং এর কণা ৫ থেকে ২০০ গুণ দূরে ভ্রমণ করতে পারে। এটি বায়ুবাহিত রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ায়। মুহাম্মদ (সা.) হাঁচির সময় মুখ ঢাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৭৫৮৮)

নবীজির জীবনাচরণে আমরা এমন অনেক অভ্যাস দেখতে পাই, যা আজকের বিজ্ঞানও স্বাস্থ্যকর বলে প্রমাণ করেছে।

একজন মুসলিম হাঁচি বা কাশির সময় রুমাল, টিস্যু বা হাত দিয়ে মুখ ও নাক ঢাকেন। হাত দিয়ে ঢাকার ক্ষেত্রে ইসলামি নির্দেশনা অনুযায়ী হাত ধোয়া জরুরি, যা রোগের বিস্তার রোধ করে।

আরও পড়ুনভালো প্রতিবেশী হওয়ার ১০ উপায়০৫ জুন ২০২৫হাত ধোয়া: স্বাস্থ্য রক্ষার প্রথম ধাপ

হাত ধোয়া সংক্রমণ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। অনেক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নাক বা মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ফেকাল-ওরাল পথে ছড়ানো রোগগুলো অপরিচ্ছন্ন হাতের মাধ্যমে খাদ্য বা বস্তুতে ছড়ায়। আধুনিক বিজ্ঞান এখন হাত ধোয়াকে স্বাস্থ্য রক্ষার প্রধান পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে।

মহানবী (সা.) বিভিন্ন সময়ে হাত ধোয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তিনি বলেন, সকালে হাত না ধুয়ে কোনো কিছু স্পর্শ করা উচিত নয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬২) খাওয়ার আগে ও পরে (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৮৫৪), টয়লেট ব্যবহারের পর, এটি ফেকাল-ওরাল রোগের বিস্তার রোধ করে এবং অজুর মাধ্যমে হাত, মুখ, নাক, বাহু ও পা ধোয়া হয়, যা নামাজের জন্য অপরিহার্য। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯২)

অজু নিজেই একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিষ্কার রাখে এবং রোগের বিস্তার রোধ করে।

মুহাম্মদ (সা.) সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করতেন এবং দুই-তিনবার জোরে ঝাড়া দিয়ে পানি বের করতে বলেছেন।নাক পরিষ্কার: শ্বাসতন্ত্রের সুরক্ষা

নাক আমাদের শ্বাসতন্ত্রের প্রথম প্রতিরক্ষা। এটি বাতাস পরিশ্রুত করে ধুলো, পরাগ, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে ফুসফুসে পৌঁছাতে বাধা দেয়। নিয়মিত নাক পরিষ্কার না করলে সর্দি, সাইনাস সংক্রমণ, অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়ে।

নবী মুহাম্মদ (সা.) সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করতেন এবং দুই-তিনবার জোরে ঝাড়া দিয়ে পানি বের করতে বলেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬২)

এই অভ্যাস নাকের পথ পরিষ্কার রাখে এবং শ্বাসতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর আতিথেয়তা১৩ জুন ২০২৫দাঁতের যত্ন: সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অংশ

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, মাড়ির রোগ (পিরিয়ডন্টাল ডিজিজ) হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। মুখের ব্যাকটেরিয়া শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। মুহাম্মদ (সা.) মুখের পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘মিসওয়াক মুখ পরিষ্কার করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৮) তিনি আরও বলেন, যদি উম্মতের ওপর বোঝা হওয়ার আশঙ্কা না হতো, তবে প্রতি নামাজের আগে মিসওয়াক ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫২)

মিসওয়াক মুখ পরিষ্কার করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৮

মিসওয়াক, যা সালভাডোরা পার্সিকা গাছের ডাল থেকে তৈরি, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান (সালভাডোরিন ও ট্রাইমেথাইলামিন) ধারণ করে। এটি প্লাক ও মাড়ির প্রদাহ কমায় এবং টুথব্রাশের মতোই কার্যকর। (জার্নাল অব ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন, ২০১৩)

নবীজির অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস

মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে আরও কিছু অভ্যাস ছিল, যা আধুনিক স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন তিনি শরীর, পোশাক ও বাড়ি পরিষ্কার রাখার ওপর জোর দিয়েছেন (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৮০৩) এবং তিনি সুগন্ধি ব্যবহারকে পূর্ববর্তী নবীদের অভ্যাস ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৭৮৬)

শেষ কথা

মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহ আমাদেরকে এমন একটি জীবনধারা শিখিয়েছে, যা শরীর, মন ও আত্মার সুস্থতা নিশ্চিত করে। হাত ধোয়া, নাক পরিষ্কার, মুখের পরিচ্ছন্নতা এবং হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢাকার মতো সাধারণ অভ্যাস আজকের বিজ্ঞানের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। এই সুন্নাহগুলো আমাদেরকে রোগ থেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে। আসুন, আমরা নবীর এই শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনে গ্রহণ করি এবং পবিত্রতার পথে এগিয়ে যাই।

সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডট নেট

আরও পড়ুনউত্তম ব্যবসায়ী হওয়ার নববি কৌশল০৯ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ