২ / ৮বৃষ্টি ঝরিয়ে বর্ষার আগমনে চলনবিলে পানি বাড়তে শুরু করেছে। বিলের ভেতর দিয়ে যাতায়াতের জন্য পথের ধারে বেঁধে রাখা নৌকা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ধানেও ঢলন প্রথা দিশেহারা কৃষক
১২০০ টাকা মণ দরে ২৫ মণ ধান বিক্রি করেছেন মহাজনের কাছে। ঢলনের নামে ২৫ মণ ধানে তাকে ৫০ কেজি ধান বেশি দিতে হয়েছে মহাজনকে। আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন তাড়াশ উপজেলার লালুয়া মাঝিড়া গ্রামের কৃষক আশিকুল ইসলাম।
একই অভিযোগ করেছেন মাঝিড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ব্যবসায়ী মহাজন, ফড়িয়া সিন্ডিকেটের কাছে আমরা জিম্মি। ঢলন প্রথায় ধান বিক্রি করতে না চাইলে মহাজন-ব্যবসায়ীরা একযোগে ধান কেনা থেকে বিরত থাকেন। কৃষক শোষণের এ প্রথা থেকে পরিত্রাণের উপায়ও খুঁজে পাচ্ছি না।
শুধু মাঝিড়া গ্রামে নয়, চলবিল অধ্যুষিত এলাকায় কৃষকের কাছ থেকে ৪২ কেজিতে ১ মণ হিসাবে ধান কিনে তুলনামলূক বেশি দাম ও কম পরিমাণে (৪০ কেজিতে ১ মণ ধরে) বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মহাজনদের বিরুদ্ধে। কৃষকদের অভিযোগ, ৪২ কেজি ধান তাদের কাছ থেকে মহাজন ১২০০ টাকায় কিনে নেয়। সেই ধান খুচরা বাজারে ৪০ কেজি হিসাবে ১ মণ ধান ১২৫০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
গত চার-পাঁচ বছর ধরে চলনবিলে এভাবেই সিন্ডিকেট করে ঢলন প্রথায় ধান কেনাবেচা হচ্ছে। এতে উৎপাদিত ফসলের উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যাচ্ছে ঢলনে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। এতে রাজি না হলে একযোগে মহাজন ব্যবসায়ীরা ধান কেনা বন্ধ করে দেন। এসব কারণে ধান ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রশাসনের নজরদারির দাবি করেছেন কৃষকরা।
তাড়াশের নওগাঁ হাটে ধান কিনতে আসা পাবনার দাশুড়িয়া এলাকার মহাজন ফিরোজ হোসেন বলেন, রসুন, পেঁয়াজ, আম, মাছসহ বেশকিছু কৃষি পণ্য এখন ঢলন প্রথায় কেনাবেচা হয়। ধান এর বাইরে নয়। মণপ্রতি কৃষকের ২ কেজি বেশি নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ধান কেনার পর রোদে শুকাতে হয়। তখন প্রতি মণে আধা থেকে এক কেজি কমে যায়। তাই পুঁজি রক্ষায় মণে “ঢলন” নেওয়া হচ্ছে। ঢলন ছাড়া ধান কিনলে লোকসান গুনতে হয় বলে জানান ফিরোজ হোসেনসহ কয়েকজন মহাজন।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খাদ্যশস্য ভান্ডার-খ্যাত চলনবিলের ১০ উপজেলায় প্রতি বছর ১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসল ছাড়াও আউশ, বোনা ও রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়। উৎপাদিত ধানের কিছু অংশ নিজেদের খাবারের জন্য রেখে অবশিষ্ট ধান বছরের বিভিন্ন সময়ে হাট-বাজারে বা বাড়ি থেকে বিক্রি করে সংসার চলে বেশির ভাগ কৃষকের। কিন্তু ঢলনের নামে ব্যবসায়ী মহাজন, ফড়িয়াদের লোভের শিকার হচ্ছেন তারা।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ঢলন প্রথার নামে প্রতি মণে ১ বা ২ কেজি বেশি নেওয়া অপরাধ। এটা বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।