‘ইশরাক হোসেন না থামলে সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে’ বিএনপিকে সরকারের দেওয়া এই বার্তার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় নির্বাচনের সুযোগ নেই।’

শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীর প্রেমতলি গৌরাঙ্গবাড়ি পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। 
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ব্যাপারে কথা হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো চিন্তা নেই। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় নির্বাচনের সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ইসরাক ইস্যুতে সরকারের বার্তা নিয়ে বিএনপি অবশ্যই তার বক্তব্য স্পষ্ট করবে।

নির্বাচনী প্রচারণায় পোস্টার ছাড়া বিলবোর্ড ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার যাতে না হয় সেদিকটা যেমন দেখতে হবে, তেমনি প্রচারণা যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।’

এর আগে গৌরাঙ্গবাড়িতে অনুষ্ঠিত সভায় আব্দুস সালাম বলেন, ‘ভারত কেন পুশইন করবে সেটা আমাদের প্রশ্ন। যদি কাউকে ফেরত পাঠাতেই হয় তাহলে তারা সরকারকে বলবে, তা না করে পুশইন করা ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি হিন্দুদের জমি দখল করেছে। কোনো বিএনপি নেতা তাদের জমি দখল করেননি। কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে খ্রিস্টান, কে বৌদ্ধ এসব রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির বিবেচ্য না। বিএনপি সকল ধর্মের ও মতাদর্শের দল।’ 

এর আগে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ইশরাক ইস্যু বিএনপিকে একটি বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবন অবরুদ্ধ করে রাখা ইশরাক হোসেন স্বেচ্ছায় সরে না গেলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের দিকে এগোবে সরকার- সভায় বিএনপিকে এই বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক উপদেষ্টা সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকে ৯ জন উপদেষ্টা অংশ নিয়েছেন। সভায় নগর ভবন অচল করায় উপদেষ্টারা ইশরাকের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেন। একাধিক উপদেষ্টা সরকারপ্রধানকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন। বৈঠকে অর্থ, পরিকল্পনা, আইন, শিল্প, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, স্থানীয় সরকার, সংস্কৃতি উপদেষ্টাসহ ৯ জন অংশ নেন। একাধিক উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, শপথ না নিয়েই মেয়রের ‘দায়িত্ব’ পালন করায় ইশরাকের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আগামী রোববার এ বিষয়ে আরও আলোচনা হতে পারে। কারণ, নাগরিকদের ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে বলেছেন। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টাসহ সবাই বিরক্তি প্রকাশ করেন।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস জয়ী হন। তখন কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বাতিলের দাবি জানিয়ে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে।

গত ২২ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরামর্শ পাওয়ার আগেই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি। আইন অনুযায়ী গেজেটের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ পাঠ করানোর দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের।

মন্ত্রণালয় তখন জানায়, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, মামলা দায়েরের পর আর্জি সংশোধনের সুযোগ নেই। কিন্তু ইশরাক গত বছরের সেপ্টেম্বরে তা করেছেন এবং ফল বাতিল নয়, তাঁকে জয়ী ঘোষণা করার আবেদন করেছেন। 

ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের সমালোচনা করে এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল দাবি করে, শেখ হাসিনার শাসনামলের অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে এর মাধ্যমে। 

শপথ নিতে না পেরে ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে গত ১৪ মে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। তখন থেকেই সব নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে। উপদেষ্টা, কর্মকর্তারাও নগর ভবনে প্রবেশ করতে পারছেন না। এরপর ইশরাক সমর্থকরা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ঘেরাও করে রাখেন তিন দিন। ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে জারি করা গেজেট বাতিল চেয়ে রিট হয়। হাইকোর্টের পর আপিল বিভাগও তা খারিজ করে দেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন ব এনপ ইশর ক হ স ন নগর ভবন সরক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ প্রস্তাব

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কার্যকর অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “চলুন আমরা এমন একটি মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।”

এ বিষয়ে তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরে বলেন, এগুলো কার্যকর করলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, “আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”

বাসস লিখেছে, প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া তার জন্য গর্বের বিষয়, যেখানে সম্ভাবনা ও দায়িত্ব একসাথে রয়েছে। তিনি বলেন, চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেওয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অপরিহার্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার দায়িত্ব নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”

তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সম্পদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার হলো ন্যায়বিচারের মূল। একজন নারী যখন ব্যবসা শুরু করে, যুবসমাজ যখন সৌর শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি পায়, বস্তিবাসী শিশু যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা পায়, তখন পরিবর্তন বাস্তব ও টেকসই হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেভিলে অঙ্গীকার একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে, যা জোরদার করে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ, উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে।

তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্থায়নকে শক্তিশালী করবে:

১. ন্যায্যভাবে দেশীয় সম্পদ উত্তোলনে আন্তর্জাতিক সহায়তার সমর্থন থাকা প্রয়োজন। কর ব্যবস্থা প্রগতিশীল, স্বচ্ছ ও বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা কাঠামোর আলোচনায় এই বৈষম্য দূর করতে হবে।

২. নবীন অর্থায়ন ও সামাজিক ব্যবসা যৌক্তিক অর্থায়ন এবং এমন উদ্যোগ যারা লাভ পুনরায় সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগ করে, চাকরি, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করে।

৩. বিশ্ব আর্থিক কাঠামো ও ঋণ শাসন সংস্কার; উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো শক্তিশালী কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে হবে। ঋণকে কঠোরতা নয়, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের হাতিয়ারে রূপান্তর করতে হবে।

৪. স্বচ্ছতা, অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধ ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, জানতে হবে কীভাবে সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য বিনিয়োগের ত্বরান্বিতকরণ; স্থিতিশীল বাসস্থান, জলবায়ু-বান্ধব কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ