শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, প্রয়োজন সৃজনশীল সমাধান
Published: 22nd, June 2025 GMT
সম্প্রতি বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে পলিথিন নিষিদ্ধে একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। কিন্তু তার বাস্তবায়নের রূপরেখা এবং জনগণের সদিচ্ছা– এ দুটোই এখনও প্রশ্নসাপেক্ষ। সত্যিই কি আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক বা পলিথিনের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনতে পারব? উত্তর– না। তার মানে এই নয় যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ‘প্লাস্টিক নামক অভিশাপের’ ফাঁদে বন্দি থাকবে।
কারণ, ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা এবং ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনা থাকলে প্লাস্টিক আর অভিশাপ হয়ে থাকে না; বরং হয়ে উঠতে পারে সম্ভাবনার অংশ। এই বিশ্বাস থেকেই চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে একটি বাস্তবমুখী উদ্যোগ– চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও ইপসার যৌথ প্রচেষ্টা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পৃথিবীতে প্লাস্টিকের কোনো ব্যবহার ছিল না। তবুও জীবন থেমে ছিল না। পরে হাইড্রোকার্বনের গবেষণায় আবিষ্কৃত হয় প্লাস্টিক, যা সহজলভ্যতা ও টেকসই গুণের কারণে অল্প সময়েই মানুষের জীবনে অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
২০১৯ সালে বিশ্বে প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৩৫ মিলিয়ন টন (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অন প্লাস্টিক অ্যান্ড ওয়েস্ট)। ২০০০ সালের পর এই উৎপাদন বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এর অর্ধেকই ব্যবহারের পরপরই ফেলে দেওয়া হয়। এগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়ে ৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট কণিকায় পরিণত হয়, যা খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর দেহে প্রবেশ করে নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করে। একটি সাধারণ প্লাস্টিক বোতল ৪৫০ বছরেও মাটির সঙ্গে মেশে না।
সবুজে ঘেরা স্বপ্নের শহর চট্টগ্রামেও প্রতিদিন উৎপন্ন হয় প্রায় ২ হাজার ৫০০ টন কঠিন বর্জ্য, যার ৯-১০ শতাংশই প্লাস্টিক। এই হারে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ৩৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক জমা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই বাস্তবতায় চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে একটি সার্কুলার অর্থনীতির মডেল। আমি কথা বলি ফরিদা বেগম ও রুমা আক্তারের সঙ্গে। সাধারণ দরিদ্র পরিবারের গৃহিণী হলেও তারা ঘরে পাতলা পলিথিন জমিয়ে রাখেন। এই প্লাস্টিক তারা বিক্রি করেন ওয়েস্ট পিকারদের কাছে, যারা আবার সেগুলো বিক্রি করেন ভাঙারিওয়ালার কাছে। এরপর রিসাইক্লারদের কাছে পৌঁছায় সেই পলিথিন।
ইউনিলিভার ও ইপসা চক্রটিকে কার্যকর রাখতে ওয়েস্ট পিকারদের এবং ভাঙারিওয়ালাদের প্রতি কেজি হারে প্রণোদনা দেয়। ভাঙারিওয়ালা রুবেল এখন প্রতিমাসে দুই-তিন টন পলিথিন বিক্রি করে আগের তুলনায় অনেক বেশি আয় করছেন।
ডাম্পিং স্টেশনে দেখা হয় শাহেদা আক্তারের সঙ্গে। তিনি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে সাত ধরনের পলিথিন আলাদা করেন। সবচেয়ে নরম পলিথিন বিক্রি করে তিনি মাসে পাঁচ মণ পর্যন্ত সংগ্রহ করেন, যা থেকে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয়।
এই গোটা ব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যেন ইউনিলিভার বা ইপসা না থাকলেও সেটি টিকে থাকতে পারে– এটিই টেকসই সমাধানের আসল নিদর্শন।
এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া প্রায় দুই হাজার শ্রমিককে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য বীমা। পাশাপাশি পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন এলাকায় চালানো হচ্ছে নিয়মিত ক্যাম্পেইন।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, শুধু ১-২টি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কি বাংলাদেশে প্লাস্টিক সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব? উত্তর– না। এই ধরনের উদ্যোগ দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করুক, এটিই প্রত্যাশা।
পরিবেশ সংরক্ষণকে যদি আমরা বোঝা নয়, দায়িত্ব হিসেবে নিই, তবে ‘পরিকল্পিত, স্বচ্ছ ও সুন্দর’ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আর বেশি দূরে নয়। তখনই উন্মোচিত হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এক নতুন দিগন্ত।
শিক্ষার্থী
ফরেস্ট্রি বিভাগ, প্রথম বর্ষ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ল স ট ক বর জ য ব যবহ র পল থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের সাবেক ডিসির ‘নারী কেলেঙ্কারি’ ঘটনা তদন্তে কমিটি
শরীয়তপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘নারী কেলেঙ্কারির’ অভিযোগ ওঠার পর এই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকার। রবিবার (২২ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (শৃঙ্খলা-২ অধিশাখা) ডা. মো. নূরুল হক এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রতিনিধিকে (যুগ্মসচিব পদমার্যদার নিচে নয়) সদস্য সচিব করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শরীয়তপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন শৃঙ্খলা পরিপন্থী আচরণের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বর্ণিত বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবেন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে জেলা প্রশাসক হিসেবে শরীয়তপুরে যোগদান করেন মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। গত ১৯ জুন রাতে তার সঙ্গে এক নারীর একটি আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ও চারটি আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরের দিন আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর উদ্দেশে আবেগঘন কিছু কথা বলছেন, এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করেছে সরকার।
ঢাকা/আকাশ/রাজীব